‘সংস্কার কমিশনে আদিবাসী-ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নারী-প্রান্তিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধি অনুপস্থিত’

 


বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকমা সার্কেল চিফ (চাকমা রাজা) ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।

আজ রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি সংস্কার কমিশন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।

চাকমা রাজা লেখেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ছয়টি সংস্কার কমিশন সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। এতে আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নারী এবং অন্যান্য প্রান্তিক বা সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত বা দৃশ্যমানভাবে অপর্যাপ্ত।

এটি একজন নোবেল বিজয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকারের ভাবমূর্তির ওপর মারাত্মক দাগ বলে মনে করেন ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।

চাকমা রাজা আরও লিখেন, ‘আমি আশা করছি, কমিশন সংশোধন করে শীঘ্রই এই ভুলগুলো সংশোধন করা হবে। কমিশনের কাজের জন্য দেওয়া স্বল্প সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে, এটি খুব দ্রুত ঘটাতে হবে। যদি তা না হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বে আন্দোলন থেকে উদ্ভূত গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের স্বপ্ন, ঘোষণা ও রূপকল্পের অপূর্ণতা আগস্ট-পরবর্তী সংগ্রামকে অন্য পর্যায়ে টেনে নিয়ে যাবে।’

আমাদের বীর ছাত্ররা এবং আমাদের নাগরিকরা এটা ঘটতে দেবে না বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন চাকমা সার্কেল প্রধান দেবাশীষ রায়।

 

খাগড়াছড়িতে আদিবাসী সাজে দেবী দুর্গা

 


শাড়ীর বদলে দেবী দুর্গাকে পরানো হয়েছে রিনাই-রিসা ও গহনা। এটি ত্রিপুরা আদিবাসীদের নিজস্ব পোশাক। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-অলংকারে দেবীকে সাজিয়ে আরাধনা করার এই চিত্র খাগড়াছড়ির খাগড়াপুর এলাকার পূজা মণ্ডপের। পেছনে পাহাড়, সূর্য, আকাশ আর মেঘের আদলে তৈরি করা মণ্ডপ আকর্ষণ ছড়াচ্ছে দর্শকদের মাঝে।

দেবীর ডান পাশে লক্ষ্মী ও কার্তিক, বামে সরস্বতী ও গণেশ। তাদের পরনেও ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর অলংকার। দেখেই মনে হবে যেন স্বয়ং দেবী দুর্গা এসে বসে আছেন সন্তানদের নিয়ে। প্রতিমার সঙ্গে মিলিয়ে মঞ্চসজ্জা আর মণ্ডপে প্রবেশ পর্যন্ত সবকিছুই পাহাড়ে ত্রিপুরাদের সংস্কৃতির আদলে সাজিয়েছেন শিল্পীরা।

দেবীকে সাজানো হয়েছে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই–রিসা, গলায় মালা হিসেবে পরানো হয়েছে রুপার চন্দ্রাহার আর পুইসা মালা (যা পয়সা দিয়ে তৈরি বিশেষ মালা), খোঁপায় পরানো হয়েছে সুরাম, কালসি, কানে পড়ানো হয়েছে ‘য়াংকুং, হাতে বাংগ্রী এবং পায়ে পরানো হয়েছে ‘বেংকি

দেবী দুর্গা ছাড়াও একই সাজে সাজানো হয়েছে লক্ষী, সরস্বতীকেও।

স্থানীয়রা জানান, এখানে প্রায় প্রতিবছরই দেবী দুর্গা মাকে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই-রিসা আর চন্দ্রাহার সহ বিবিধ অলংকারের সাজে সাজানোর চেষ্টা করা হয়। মঞ্চ সাজসজ্জাও করা হয় প্রকৃতির আদলে। এবারের পূজাতেও তেমনিই করা হয়েছে।

খাগড়াপুর সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক চামেলী ত্রিপুরা জানান, মায়ের রূপকে এবার আমাদের ত্রিপুরা রমনীদের সাজে রূপ দেওয়া হয়েছে। আমাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তাই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বুনো হাতির ভেঙে ফেলা অর্ধেক ঘরের পুরোটা ধসিয়ে দিল বন্যা

 


জুলাই মাসের ৩ তারিখে খাবারের সন্ধানে সিন্ধু ডালুর বাড়িতে হামলে পড়েছিল একদল ক্ষুধার্ত বুনো হাতির পাল। উঠোনে আশেপাশে কিছু না পেয়ে ঘরে আক্রমন চালায় তারা। ভেঙে ফেলে মাটির দালান ঘরের একপাশ। সেই ভাঙা বাড়িতেই এতদিন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। চরম আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পারেননি মেরামত করতে।

সিন্ধু ডালু পেশায় একজন পাথর শ্রমিক। তাঁর বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ির সীমান্তঘেঁষা নাকুগাঁও গ্রামে। যেখানে স্থলবন্দর করা হয়েছে। এই স্থলবন্দরে একসময় ডালু, মান্দি জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল বেশি। কিন্তু সরকারের ভূমি অধিগ্রহণের কারণে সেখানকার আদিবাসীরা সরে যেতে বাধ্য হয়।

তারপরও প্রায় ২০টির মত ডালু পরিবার পূর্বপুরুষের ভূমি আকড়ে থেকে যায়। এই থেকে যাওয়াদের একজন সিন্ধু ডালু। তাঁর বাড়িটা স্থলবন্দর চেকপোস্টের ঠিক ওপারে। বাইরের যে কেউ চাইলেই খেয়াল খুশিমত সেখানে যেতে পারেন না। বিজিবির অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।

পঞ্চান্ন বছর বয়সী সিন্ধু ডালু স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার শ্রমিক। কখনো কখনো ট্রাকে পাথর লোডের কাজটিও তাকে করতে হয়। জীবিকার জন্য যখন যা করার তাই করা লাগে।

সীমিত আয়ে এতদিন বুনো হাতির ভেঙে ফেলা ঘর মেরামত করা যাচ্ছিল না। এবার পাহাড়ি ঢল সেই ভাঙা ঘর একেবারে ধসিয়ে দিয়ে গেল। বন্যায় তাঁর বাড়িতে বুক সমান পানি উঠেছিল। সেই পানি মাটির দালান ঘর ধসিয়ে দিয়ে গেছে।

স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ১০ ফিট বাই ১০ ফিট সমান ঝুপড়ি ঘরে দিন কাটাচ্ছেন। বৃষ্টি পড়লেই পানি গড়িয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে টিন ম্যানেজ করেছেন। সেই টিন আনতে গিয়েও পা কেটে গিয়েছে সিন্ধু ডালুর। ১২টা সেলাই লেগেছে। কাটা পা নিয়ে এখন আর বাইরে কাজেও যেতে পারেন না। বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের পথ।

সিন্ধু ডালুর সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম তখনও জ্বরে আক্রান্ত তিনি। খুব বেশি কথা বলছিলেন না। যা জানতে চাইছিলাম শুধু তার উত্তর করছিলেন। জ্বরের কারণে নাকি দুঃশ্চিন্তায় তা বুঝতে বাকি রইলো না।  

বন্যার পর অনেক জায়গায় অনেক সংগঠন, ফাউন্ডেশন ত্রাণ নিয়ে গেছে। কিন্তু নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আদিবাসীরা ত্রাণ পায়নি। হয়তো কেউ জানেই না স্থলবন্দরে এখনো আদিবাসীরা বসবাস করে! 

অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখি, সিন্ধু ডালুর আকাশে জমেছে শ্রাবনের মেঘ। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে সংসার চালাবেন সেই দুঃশ্চিন্তায় চোখেমুখে দেখছেন অন্ধকার। গারো, কোচ কিংবা হাজংদের নিয়ে টুকটাক বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে, কিন্তু সিন্ধু ডালুদের নিয়ে? তারা তো সংখ্যালুঘুর মধ্যে আরও সংখ্যালঘু! তাদের নিয়ে কেউ ভাবছি কি?

 

কাঞ্চন মারাক, নালিতাবাড়ি, শেরপুর থেকে।

তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় রচিত দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

 


রাঙ্গামাটিতে তঞ্চঙ্গ্যা জাতির মাতৃভাষায় রচিত দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলার কাপ্তাইয়ের বড়ইছড়িস্থ বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুস্তক দুটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

পুস্তক দুটির মধ্যে একটি তঞ্চঙ্গ্যা বর্ণমালা শিক্ষা বিষয়ক পুস্তক ‘আধুনিক তঞ্চঙ্গ্যা বর্ণমালা শিক্ষা এবং অপরটি ‘পেয়ংখুলা'ব ছ। এটি তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় রচিত প্রথম কাহিনীকাব্য।

গ্রন্থ দুটি রচনা করেন তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর জনপ্রিয় সাহিত্যিক ও ভাষাকর্মী চন্দ্রসেন তঞ্চঙ্গ্যা এবং প্রকাশ করেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার অমল বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দীপ্তিময় তালুকদার। অতিথি ছিলেন ওয়াগগা মৌজার হেডম্যান অরুণ তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন কাপ্তাই অঞ্চলের সভাপতি অজিত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, দেবতাছড়ি-রৈস্যাবিলি অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব কুমার তঞ্চঙ্গ্যা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জয়ধন তঞ্চঙ্গ্যা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি অতিথিবৃন্ধ তঞ্চঙ্গ্যা জাতির ভাষা, বর্ণমালা ও সাহিত্যকে টিকিয়ে রাখতে সামর্থ্যবান সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

দুর্গাপুরে সোমেশ্বরীর চোরাবালিতে পড়ে গারো যুবকের মৃত্যু

 


নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর চোরাবালির গর্তে পড়ে এক গারো যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে নিখোঁজের দুই দিন পর তার মরদেহ ভেসে উঠে।

মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ফারংপাড়া বটতলা জিরো পয়েন্ট এলাকায় নিখোঁজ হন রুয়েল রিছিল (২৮)। তিনি একই ইউনিয়নের দাহাপাড়া গ্রামের আদিবাসী কৃষক অনুত সাংমার ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তিন বন্ধুর সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে চোরাবালির গর্তে পড়ে যান রুয়েল। তার চিৎকার শুনে বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করতে গেলে তারাও গর্তে পড়ে যান। এসময় পাড় থেকে দেখে নৌকা নিয়ে এসে তিনজনকে উদ্ধার করতে পারলেও রুয়েলকে উদ্ধার করতে পারেনি স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন।

রুয়েলের বন্ধু ডারউইন মারাক জানান, ‘আমরা চার বন্ধু মিলে সোমেশ্বরী নদীতে মাছ ধরতে যাই। রুয়েল দুই তিনবার নদীতে জাল ফেলার পর হঠাৎ চিৎকার দেয়। আমরা চিৎকার শুনে দ্রুত তাকে উদ্ধার করতে গেলে আমরাও গর্তে পরে যাই। এরপর স্থানীয় এক ব্যক্তি আমাদের উদ্ধার করেন। কিন্তু তখন বন্ধু রয়েল নিখোঁজ হয়ে যায়।’

পরে স্থানীয়রা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ময়মনসিংহ থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ওইদিন সন্ধ্যা থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। কিন্ত ২ দিনে তারা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে রুয়েলের লাশ ভেসে উঠতে দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করে।

নিহত রুয়েল রিছিলের বাবা অনুত সাংমা বলেন, ‘ছোট একটা বাচ্চা রেখে আমার ছেলের বউ কিছুদিন আগে মারা গেল। এখন ছেলেটাও নাই। আমার আর কিছুই রইলো না।’

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহতের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

হালুয়াঘাটের অনেক মান্দি গ্রাম এখনো পানিবন্দি

 


স্টাফ রিপোর্টার: ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের দক্ষিণাঞ্চলের মান্দি অধ্যুষিত গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দর্শাপাড়, বাউশা কুমুরিয়া, কড়ইকান্দা ও আশেপাশের এলাকায় নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যাচ্ছে না। এখানকার অধিবাসীরা গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রাণের জন্য দেখা দিয়েছে হাহাকার। এইসব এলাকায় ছাত্র সংগঠনগুলো সীমিত পরিসরে শুকনো খাবার পৌঁছে দিলেও সরকারি-বেসরকারিভাবে এখনো সহযোগিতা করা হয়নি।

এছাড়াও নলুয়া, ভালুকাপাড়া, কালিয়ানিকান্দা, সংড়ার কিছু অংশে এখনো পানি রয়েছে। নলকূপ ডুুবে আছে বন্যার পানিতে। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট।

হালুয়াঘাটের বন্যার্ত এলাকায় গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (গাসু) উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সতীর্থ চিরান বলেন, ‘হালুয়াঘাট ধারা বাজারের দিকে যে মান্দি গ্রামগুলো আছে, সেগুলো এখনো পানির নিচে অবস্থান করছে। তারা গির্জায় আশ্রয় নিয়েছে।’

গাসুর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আরও বলেন, ‘নৌকা ছাড়া হালুয়াঘাটের দক্ষিণাঞ্চলের মান্দি গ্রামগুলোতে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। ভেলা নিয়ে তারা ত্রাণ নিতে আসছে। শুকনো খাবারের পরিবর্তে ভারি খাবার নিয়ে গেলে ভালো হত।’

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগাছাস) উদ্যোগে রুহিপাগারিয়া, তালুকপাড়া, দর্শাপাড়, সোনামুহা, চিনাবিল এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। অন্যান্য বন্যাদুর্গত এলাকাতেও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা। 

কমিউনিটি ট্রাস্ট ময়মনসিংহ ফোরামের উদ্যোগেও উপজেলার মান্দিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কুমুরিয়া, দর্শাপাড়া, ধোপাজুড়ি, পাগলপাড়া, ঘোষবেড়, বোয়ালমারার প্রায় ১১৪টি পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পরের ধাপে আরও কার্যক্রম চালাবে সংগঠনটি। 

হালুয়াঘাট উপজেলার বেশিরভাগ পরিবার কৃষির উপর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। দর্শা নদী-খাল দখল ও ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারনে পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের আমন ফসলের স্বপ্ন। পানিবন্দি হয়ে আছে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। 

উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী এ বছর রুপা আমন চাষাবাদ হয়েছে ২৪ হাজার ৯ শত ৫ হেক্টর, তার মধ্যে নিমজ্জিত আছে ১৩ হাজারের মতো। অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। 

ত্রাণের চেয়েও মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে বেশি চিন্তা

 


স্টাফ রিপোর্টার: শেরপুরের সীমান্তবর্তী আদিবাসী অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ভাটার দিকে পানি নেমে পড়ায় ভাসছে ক্ষত চিহ্ন। এরইমধ্যে বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করছে আদিবাসী ছাত্র সংগঠন সহ বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা। চলছে বানভাসী মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লড়াই।  

ঝিনাইগাতীর মরিয়মনগর, দুধনই, ভাটপাড়া, বারোয়ামারী, বাঁকাকুড়া, ধানশাইল, গজারীকুড়া, সন্ধ্যাকুড়া, শালচূড়ার রাস্তাঘাটে বন্যার ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট। এই গ্রামগুলোর বেশিরভাগ গারো পরিবারের মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় এখন অনেকেই আশেপাশের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকছেন। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে হতভাগ্য মানুষগুলো।

বন্যার পানিতে ভাটপাড়ার ৩৭টি, গজারীকুড়ার ৬টি, দুধনইয়ের ৮টি, বারুয়ামারীর ১৯টি, শালচূড়ার ৮টি গারো পরিবারের মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। উপজেলার বাঁকাকুড়া, ধানশাইল, সন্ধ্যাকুড়া গ্রামেও দেখা গেছে একই চিত্র।

ভাটপাড়ার বাসিন্দা বিকান্ত তেলসী (৬৫) জানান, একপাশে বেড়া আর আরেকপাশে মাটির দেওয়ালের ঘর ছিল তাঁর। বন্যায় সেটিও ধসে পড়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনে কোন রকমে টিনের চালা ঘর করে বসবাস করছেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলা চাম্বুগং (৩২) জানান, তাঁর একটাই মাটির বাড়ি ছিল। সেটিও বন্যার পানিতে ভেঙে পড়েছে। এখন গরুর সাথে খাটের সমান টিনের ছাপড়ি ঘরে ঘুমান।

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগাছাস) নেতা সৌহার্দ্য চিরান বলেন, ‘মরিয়মনগর ও আশেপাশের ৩০০ পরিবারের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ২৮০টি পরিবারের মধ্যে প্রদান করা হয়েছে নগদ অর্থ সহায়তা। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এগুলো খুবই সামান্য। ঘর হারিয়ে কোনমতে টিনের ছাপড়া ঘর করে তারা দিনাতিপাত করছে। খাবার নিয়ে এসব পরিবারের কাছে গেলেও লজ্জায় পড়ে যাই। অনেকেই কান্না করে দিচ্ছে।’

বাগাছাসের এ নেতা আরও বলেন, ‘বন্যার পানি কমে গেলেও আশ্রয়হীন পড়েছে একশোর বেশি পরিবার। ঘর হারিয়ে অনেক পরিবার গোয়াল ঘরে গরু-ছাগলের সাথে মানবেতর জীবনযাপন করছে। রান্না-বান্নার কোন পরিবেশ নেই। বৃষ্টি পড়লে পানি গড়িয়ে পড়ে। খাবার বিতরণ করতে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।’

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আদিবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম বাড়ানো এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন বাগাছাসের এই ছাত্রনেতা।

© all rights reserved - Janajatir Kantho