পৃথক নয়, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য ১টি মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি

 


সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসীদের জন্য পৃথক পৃথক নয়, বরং একটি আদিবাসী মন্ত্রণালয় গঠন করে সংবেদনশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের বিশিষ্টজনেরা জানিয়েছেন এমন দাবি।

রোববার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, এএলআরডি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, ব্লাস্ট, নিজেরা করি, বেলা, আরবান, কাপেং ফাউন্ডেশন, আইপিডিএস, সিসিডিবি, কারিতাস-বাংলাদেশ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনসহ ১৪টি সমমনা ও অধিকারভিত্তিক সংস্থা যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।

সেমিনারে পল্লব চাকমা, অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান সুমন ও ফাল্গুনী ত্রিপুরা তিনটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে ড. ইফতেখারুজ্জামান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আদিবাসী নেত্রী বিচিত্রা তির্কী এবং এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা উপস্থিত ছিলেন।

প্রবন্ধ উপস্থাপকরা পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভূমি থেকে উচ্ছেদ, আদিবাসীদের জীবননাশ, দেশান্তর হতে বাধ্য করাসহ সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের বিষয়টিতে গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা এতে আদিবাসী মন্ত্রণালয় এবং ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পার্বত্য তিন জেলা থেকে সামরিক শাসনের অবসান প্রত্যাশা করেন।

চবিতে আদিবাসী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

 


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির আদিবাসী ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক পর্বের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসের রেল স্টেশনে এই অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন।

পরে অং রাখাইন পরিচালিত চাকমা ভাষার চলচ্চিত্র 'ম থেংগারি' (My Bicycle), এসকে শুভ সাদিক পরিচালিত ম্রো ভাষার চলচ্চিত্র ‘Ki'ōri pēkarā u’ (Dear Mother) ও তানভির মোকাম্মেল পরিচালিত ডকুমেন্টারি Karnaphulir Kanna প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অন্বেষ চাকমা বলেন, দেশে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি, ঐতিহ্য, জীবন-সংগ্রাম ও তাদের বেদনা-প্রান্তিকতা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা মনে করি, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ তাদের মৌলিক অধিকার এখন পর্যন্ত না থাকার কারণে তারা আজও মূলধারা থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

পাহাড়ি এই শিক্ষার্থী আরো জানান, পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত ভূমি উচ্ছেদ, জাতিগত নিধন ও শোষণ-বঞ্চণার শিকার হচ্ছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকারসহ তাদের নায্য অধিকার পূরণের মধ্য দিয়ে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে দেয়ালজুড়ে কল্পনা চাকমার গ্রাফিতি অঙ্কন

 


পার্বত্য চট্টগ্রামের দেয়ালজুড়ে আঁকা হচ্ছে অপহরণের শিকার হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার গ্রাফিতি। শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালন করে।

আজ সকাল থেকেই রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গার দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকে শিক্ষার্থীরা। গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা কল্পনা চাকমার চোখ বাঁধা প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন।

প্রতিকৃতির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়কল্পনা চাকমা ১৯৯৬?’ প্রশ্নবোধক সম্বলিত নানান লেখা।

প্রতিকৃতি অঙ্কনকালে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী গান গাইতেও দেখা যায়। গানে গানে ফুটে উঠে অধিকারের কথা।  

এরআগে, গতকাল খাগড়াছড়িতেকল্পনা চাকমা ১৯৯৬?’ লেখা সংবলিত গ্রাফিতি অঙ্কনের কিছুক্ষণ পরই কে বা কারা মুছে ফেলেন। নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা, নিন্দার ঝড় উঠে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সাবেক শিক্ষার্থী মংসাই মারমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, কল্পনা চাকমাই আমাদের সকল শোষণ-বঞ্চনার জীবনকে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে। তাই তাদের এত ভয়। বারবার জীবন্ত কল্পনা চাকমাকে গ্রাফিতির কল্পনা চাকমাকে মুছে ফেলেছে।


© all rights reserved - Janajatir Kantho