‘বরেন্দ্রভূমিতে বাঙালির আগে আদিবাসীরা বসবাস শুরু করেছেন’

 


বরেন্দ্রভূমিতে বাঙালির চেয়ে আপনারাই (আদিবাসীরা) অনেক আগে থেকেই বসবাস শুরু করেছেন। এই ভূমিতে আপনাদের অধিকার সবার আগে। ৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি এই জন্যই যে আমরা আমাদের নিজেদের জাতিসত্তা ভাষা যেন নিজেরাই টিকে রাখতে পারি। তাহলে আমরা কেন অন্যের ভাষা কেড়ে নেব।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চৈতন্যপুর গ্রামে আজ শনিবার আগামীকাল রোববার দুই দিনব্যাপী সমতল পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে রাজোয়াড় জাতিগোষ্ঠীর আলপনাচিত্র প্রদর্শন ১৩ জনগোষ্ঠীর নৃত্য-গীত নাটক অনুষ্ঠিত হবে।

সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘সংস্কৃতি কেবল কীভাবে আমরা হাঁটি-খাই-কথা বলি সেটাই নয়। সংস্কৃতি হচ্ছে আমাদের নাচগান এবং ছবি আঁকাও। এর ভেতর থেকে জীবনকে যাপন করে দেখি জীবন কেন গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা মানুষকে তার জীবনের উপলব্ধি প্রকাশ করতে সাহায্য করে। একটা ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানেই একটা উপলব্ধিও হারিয়ে যাওয়া।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সৈয়দ জামিল আহমেদ ছাড়াও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাজকুমার শাওন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, ‘একা একা ভালো থাকা যায় না। সবাই মিলে ভালো থাকতে হয়। এই যে আমরা ভালো আছি, এই ভালো থাকাটা ধরে রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে রাজকুমার শাওন আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান। বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় বলেন, আদিবাসীদের প্রধান সমস্যা জমি। জমি তাঁদের বেহাত হয়ে যায়।

আলোচনা শেষে আদিবাসী শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

অস্ট্রেলিয়া দিবসে আদিবাসীদের অধিকারের পক্ষে বিক্ষোভ

 


অস্ট্রেলিয়া দিবসে আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। হাজারো অস্ট্রেলীয় নাগরিক দেশটির আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিক্ষোভে অংশ নেন।

রোববার সিডনি, মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরে হাজারো মানুষ জমায়েত হয়ে দেশটির আদি জনগোষ্ঠীর সদস্যদের কারাবরণের উচ্চ হার, দুর্বল স্বাস্থ্য ঐতিহাসিক নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এএফপি।

অস্ট্রেলিয়ায় ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ব্রিটেন থেকে ঔপনিবেশিক শাসকদের আগমন ঘটেছিল। দিনটিকে 'অস্ট্রেলিয়া ডে' হিসেবে উদযাপন করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম জনগোষ্ঠীগুলো ৬০ হাজার বছর আগে থেকে সেখানে বসবাস করছে। ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারিতে একটি ব্রিটিশ নৌবহর সিডনি হারবারে এসে পৌঁছায়। জাহাজে ছিল ব্রিটেনের কারাগারে স্থানসংকুলান হয়নি এমন সব অপরাধী। মূলত, অস্ট্রেলিয়াকে একটি 'কারাগার-উপনিবেশ' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের উদ্দেশ্য।

এইজন্য অধিকারকর্মীরা অস্ট্রেলিয়া দিবসকে 'আগ্রাসন দিবস' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাদের মতে, এই দিনটি থেকেই শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ওপর ঔপনিবেশিক শোষণ। জোর করে ভূমিদখল, নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শিশুদেরকে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার মতো নারকীয় সব অপরাধের সূত্রপাত এই দিন থেকেই।

মেলবোর্নে হাজারো বিক্ষোভকারী পথে নেমে আসেন। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, 'এই দিবস বাতিল করুন' এবং 'গণহত্যায় গর্বের কিছু নেই'

আদিবাসী নারী ট্যামি মিলার বলেন, 'দিবসটি বদলানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। মূলত, আমরা চাই ওই দিনের পর থেকে যে অন্যায্য আচরণ করা হয়েছে (আদিবাসীদের প্রতি), সে বিষয়ে মানুষকে জানানো। ওই দিনে সাদা মানুষ (ব্রিটেন থেকে আসা শ্বেতাঙ্গরা) এসে যে অন্যায় আচরণ শুরু করেছে (আমাদের প্রতি), তা আজও অব্যাহত রয়েছে'

২৬ জানুয়ারিকে ছুটির দিন হিসেবে নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরে অস্ট্রেলীয়দের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

শুক্রবার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের এক জরিপে জানা গেছে, গত দুই বছরে ছুটির দিনটির প্রতি সমর্থন ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬১ শতাংশে পৌঁছে গেছে।

আনুষ্ঠানিক তথ্য মতে, অস্ট্রেলিয়ার কোটি ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে তিন দশমিক আট শতাংশ আদিবাসী।

গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যা: আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি

 


গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যারমূল হোতাসাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সহ হত্যা মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সামনে আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আয়োজনে এ কর্মসূচি হয়।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে তির-ধনুক, বাদ্যযন্ত্রসহ বিভিন্ন দাবি সংবলিত ফেস্টুনসহ অংশ নেন সাঁওতাল নারী-পুরুষেরা।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম। এতে বক্তব্য দেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, গাইবান্ধা পরিবেশ আন্দোলনের আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান, আইনজীবী মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি বর্মণ, গাইবান্ধার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগের সদস্যসচিব প্রবীর চক্রবর্ত্তী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় আখ কাটা নিয়ে পুলিশ ও চিনিকলের কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ নিহত হন। আহত হন ২০ জন। এ ঘটনার পর থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তবে মামলার বিচার হওয়া তো দূরের কথা, মামলার আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দসহ অন্য আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

বক্তারা অনতিবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

বক্তারা আরও বলেন, অতিসম্প্রতি রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় আদিবাসী সাঁওতাল পল্লির ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে ভূমিদস্যু রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় রফিকুল চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হলেও অন্য দুর্বৃত্তরা এখনো গ্রেপ্তার হননি। অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে।

 

‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে’

 


পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভয়াবহ। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩ ভাষাভাষী ১৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। পার্বত্যাঞ্চলের জুম্ম জনগণ একটা নিরাপত্তাহীন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে বেঁচে আছে।

আজ শনিবার দুপুরে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণের সামগ্রিক পরিস্থিতি আলোকে সমাজের ভূমিকা প্রসঙ্গে সুধী সমাবেশ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। রাঙামাটি শহরের নিউমার্কেট এলাকায় স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা আশিকা হলরুমে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে সভার আয়োজন করা হয়।

সন্তু লারমা বলেন, আসলে আদিবাসী কোনো জাতিগোষ্ঠীর নাম নয়, আদিবাসী হচ্ছে জনগোষ্ঠীর শব্দ। তাঁরা আদিবাসী, যাঁরা বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জীবনধারণ করে। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো আপনাদের জানা আছে।

যোগ করে তিনি আরও বলেন, শাসকগোষ্ঠী আদিবাসী শব্দটা ভয় পাচ্ছে। আদিবাসী শব্দ যদি জাতিসংঘের ঘোষিত নির্দেশ বা পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার স্বীকার করে, তাহলে তাদের শব্দ মেনে নিয়ে অনুস্বাক্ষর করতে হবে। তাদের ভাবনা-দুর্ভাবনা হলো আদিবাসীদের জাতিসংঘের ঘোষিত অধিকারগুলো দিতে হবে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তু লারমা বলেন, একটা গ্রাফিতি নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ৫১টি ভাষাভাষী আদিবাসী জাতির অস্তিত্ব এ দেশে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে। কারণ, গ্রাফিতিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম এবং আদিবাসী লেখা রয়েছে। সেখান থেকে আদিবাসী পাতাটি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ যদি বহুজাতিক ও বহুসংস্কৃতির দেশ হয়ে থাকে, তাহলে শুধু এ দেশে বাঙালি জাতি বাস করে না। এ দেশে অন্তত ৫১টি আদিবাসী জাতি বসবাস করে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য অঞ্চল আদিবাসী ফোরামের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা। অন্যদের মধ্যে আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএস মং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অংচ মং মারমা, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুধ মঙ্গল চাকমা, সাহিত্যিক শিশির চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি থোয়াই অং মারমা, পার্বত্য অঞ্চল আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক লেলুং খুমি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

© all rights reserved - Janajatir Kantho