হালুয়াঘাটের অনেক মান্দি গ্রাম এখনো পানিবন্দি

 


স্টাফ রিপোর্টার: ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের দক্ষিণাঞ্চলের মান্দি অধ্যুষিত গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দর্শাপাড়, বাউশা কুমুরিয়া, কড়ইকান্দা ও আশেপাশের এলাকায় নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যাচ্ছে না। এখানকার অধিবাসীরা গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রাণের জন্য দেখা দিয়েছে হাহাকার। এইসব এলাকায় ছাত্র সংগঠনগুলো সীমিত পরিসরে শুকনো খাবার পৌঁছে দিলেও সরকারি-বেসরকারিভাবে এখনো সহযোগিতা করা হয়নি।

এছাড়াও নলুয়া, ভালুকাপাড়া, কালিয়ানিকান্দা, সংড়ার কিছু অংশে এখনো পানি রয়েছে। নলকূপ ডুুবে আছে বন্যার পানিতে। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট।

হালুয়াঘাটের বন্যার্ত এলাকায় গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (গাসু) উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সতীর্থ চিরান বলেন, ‘হালুয়াঘাট ধারা বাজারের দিকে যে মান্দি গ্রামগুলো আছে, সেগুলো এখনো পানির নিচে অবস্থান করছে। তারা গির্জায় আশ্রয় নিয়েছে।’

গাসুর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আরও বলেন, ‘নৌকা ছাড়া হালুয়াঘাটের দক্ষিণাঞ্চলের মান্দি গ্রামগুলোতে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। ভেলা নিয়ে তারা ত্রাণ নিতে আসছে। শুকনো খাবারের পরিবর্তে ভারি খাবার নিয়ে গেলে ভালো হত।’

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগাছাস) উদ্যোগে রুহিপাগারিয়া, তালুকপাড়া, দর্শাপাড়, সোনামুহা, চিনাবিল এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। অন্যান্য বন্যাদুর্গত এলাকাতেও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা। 

কমিউনিটি ট্রাস্ট ময়মনসিংহ ফোরামের উদ্যোগেও উপজেলার মান্দিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কুমুরিয়া, দর্শাপাড়া, ধোপাজুড়ি, পাগলপাড়া, ঘোষবেড়, বোয়ালমারার প্রায় ১১৪টি পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পরের ধাপে আরও কার্যক্রম চালাবে সংগঠনটি। 

হালুয়াঘাট উপজেলার বেশিরভাগ পরিবার কৃষির উপর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। দর্শা নদী-খাল দখল ও ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারনে পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের আমন ফসলের স্বপ্ন। পানিবন্দি হয়ে আছে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। 

উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী এ বছর রুপা আমন চাষাবাদ হয়েছে ২৪ হাজার ৯ শত ৫ হেক্টর, তার মধ্যে নিমজ্জিত আছে ১৩ হাজারের মতো। অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। 

ত্রাণের চেয়েও মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে বেশি চিন্তা

 


স্টাফ রিপোর্টার: শেরপুরের সীমান্তবর্তী আদিবাসী অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ভাটার দিকে পানি নেমে পড়ায় ভাসছে ক্ষত চিহ্ন। এরইমধ্যে বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করছে আদিবাসী ছাত্র সংগঠন সহ বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা। চলছে বানভাসী মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লড়াই।  

ঝিনাইগাতীর মরিয়মনগর, দুধনই, ভাটপাড়া, বারোয়ামারী, বাঁকাকুড়া, ধানশাইল, গজারীকুড়া, সন্ধ্যাকুড়া, শালচূড়ার রাস্তাঘাটে বন্যার ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট। এই গ্রামগুলোর বেশিরভাগ গারো পরিবারের মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় এখন অনেকেই আশেপাশের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকছেন। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে হতভাগ্য মানুষগুলো।

বন্যার পানিতে ভাটপাড়ার ৩৭টি, গজারীকুড়ার ৬টি, দুধনইয়ের ৮টি, বারুয়ামারীর ১৯টি, শালচূড়ার ৮টি গারো পরিবারের মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। উপজেলার বাঁকাকুড়া, ধানশাইল, সন্ধ্যাকুড়া গ্রামেও দেখা গেছে একই চিত্র।

ভাটপাড়ার বাসিন্দা বিকান্ত তেলসী (৬৫) জানান, একপাশে বেড়া আর আরেকপাশে মাটির দেওয়ালের ঘর ছিল তাঁর। বন্যায় সেটিও ধসে পড়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনে কোন রকমে টিনের চালা ঘর করে বসবাস করছেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলা চাম্বুগং (৩২) জানান, তাঁর একটাই মাটির বাড়ি ছিল। সেটিও বন্যার পানিতে ভেঙে পড়েছে। এখন গরুর সাথে খাটের সমান টিনের ছাপড়ি ঘরে ঘুমান।

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগাছাস) নেতা সৌহার্দ্য চিরান বলেন, ‘মরিয়মনগর ও আশেপাশের ৩০০ পরিবারের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ২৮০টি পরিবারের মধ্যে প্রদান করা হয়েছে নগদ অর্থ সহায়তা। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এগুলো খুবই সামান্য। ঘর হারিয়ে কোনমতে টিনের ছাপড়া ঘর করে তারা দিনাতিপাত করছে। খাবার নিয়ে এসব পরিবারের কাছে গেলেও লজ্জায় পড়ে যাই। অনেকেই কান্না করে দিচ্ছে।’

বাগাছাসের এ নেতা আরও বলেন, ‘বন্যার পানি কমে গেলেও আশ্রয়হীন পড়েছে একশোর বেশি পরিবার। ঘর হারিয়ে অনেক পরিবার গোয়াল ঘরে গরু-ছাগলের সাথে মানবেতর জীবনযাপন করছে। রান্না-বান্নার কোন পরিবেশ নেই। বৃষ্টি পড়লে পানি গড়িয়ে পড়ে। খাবার বিতরণ করতে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।’

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আদিবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম বাড়ানো এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন বাগাছাসের এই ছাত্রনেতা।

পাহাড়ে ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ এবার হচ্ছে না কঠিন চীবর দানোৎসব


পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তার কারণ দেখিয়ে এবার চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ। রোববার দুপুরে রাঙ্গামাটি বনরূপা মৈত্রী বিহারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বনভান্তের শিষ্য সংঘের সহসভাপতি ভদন্ত সৌরজগৎ মহাথের, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ বান্দরবানের সাধারণ সম্পাদক ভদন্ত তেজপ্রিয় মহাথের, রাজ নিকায় মার্গের সহসভাপতি ভদন্ত জ্ঞানবংশ মহাথেরসহ ১৪টি বৌদ্ধ সংগঠনের প্রধান।

সংগঠনটির সভাপতি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা অনিরাপদ ও অনিশ্চয়তা অনুভব করছি। এই কারণে এ বছর রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, গত ১৮, ২০ সেপ্টেম্বর ও এক অক্টোবর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ হত্যা সংঘটিত হয়েছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তিন জন আদিবাসী নিহত হন। হামলায় বিভিন্ন মন্দির, বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর ও দানবাক্স লুট করা হয়েছে।

তার অভিযোগ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এমন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতোদিন যতো সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তার কোনোটির বিচার হয়নি। নামমাত্র তদন্ত কমিটি করা হয়, যা আলোর মুখ দেখে না। প্রশাসনের প্রতি কোনো আস্থা না থাকার পাশাপাশি বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষুসংঘ উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত।

আশ্বিনী পূর্ণিমাকে প্রবারণা পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে পুরো নভেম্বর মাস কঠিন চীবর দান উদযাপন করা হয়। বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় এই ধর্মীয় আচারের প্রবর্তিত হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়।

ধর্মীয় মতে, এই পদ্ধতিতে চীবর দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয়। তাই এই নিয়ম অনুসারে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদিবাসী নারীরা জুমে উৎপাদিত তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে কাপড় তৈরির পর সেলাই ও রঙ করে চীবর তৈরি করেন। এই চীবর আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়।

বন্যার্তদের জন্য বাগাছাস-গাসুর ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি

 


শেরপুর ও ময়মনসিংহে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে গারো ছাত্র সংগঠনগুলোর উদ্যোগে চলছে ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি। ঢাকা, ময়মনসিংহ সহ মান্দি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। একইভাবে অনলাইনে প্রচারণা চালিয়েও ত্রাণ সংগ্রহ করছেন তারা।

ইতোমধ্যে ঝিনাইগাতী-কলমাকান্দার বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে বাগাছাস। পর্যায়ক্রমে ধোবাউড়া, হালুয়াঘাটের ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।

রোববার বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্যাট্রিক চিসিমের নেতৃত্বে ঢাকার বসুন্ধরা, গুলশান, কালচাঁদপুর, বাড্ডা এলাকায় বক্সে ত্রাণ সংগ্রহ করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এসময় লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের সহযোগিতা করে।

বাগাছাসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্যাট্রিক চিসিম বলেন, ‘উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় তুলনামূলক সমতল এলাকার মান্দি গ্রামগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। যদিও এখনো সেভাবে ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। পুকুর ভেসে গেছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে অনেক মান্দি পরিবার।’

বাগাছাসের এ নেতা আরও জানান, যাতায়াত খরচ এবং সময়ের কথা বিবেচনা করে ত্রাণের টাকা উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা স্থানীয়ভাবে অ্যারেঞ্জ করে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ পৌঁচ্ছে দিচ্ছে।   

এদিকে, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (গাসু) নেতাকর্মীরাও পাশে দাঁড়িয়েছে বন্যার্তদের। ঢাকার বিভিন্ন চার্চে বক্স হাতে ত্রাণ সংগ্রহে নেমেছেন তারা। এরইমাঝে নালিতাবাড়ি ও ধোবাউড়ায় সংগঠনটি ত্রাণ বিতরণ করেছে।

গাসুর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সতীর্থ চিরান বলেন, এখনো ত্রাণ সংগ্রহ চলমান রয়েছে। অনলাইন কিংবা অফলাইন দুটি মাধ্যমেই ত্রাণ পাঠাতে পারেন।

বন্যার্তদের জন্য গাসুর মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য পাঠাতে—

01610772924 (বিকাশ)

01733455387 (নগদ)

বাগাছাসের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য পাঠাতে—

01921129770, 01518676274 (বিকাশ)

01866067097, 01518676274 (নগদ)

ব্যাংক একাউন্ট: 1961580020023

ব্যাংকের নাম: Dutch Bangla Bank, Tangail Branch

হিসাবের নাম: Ansang Dalbat

এছাড়াও সংগঠন দুটি শুকনো খাবার, স্যালাইন, বোতলজাত পানি ও বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যানিটারি ন্যাপকিন সহ যে কোন ধরনের সহযোগিতা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।

ঝিনাইগাতীতে বন্যায় ভেঙে পড়েছে গারোদের ১০০টির বেশি ঘর

 


অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গারোদের একশোটির বেশি ঘর ভেঙে পড়েছে। রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত শুধুমাত্র গারো জনগোষ্ঠীর ১০০টির বেশি ঘর ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

উপজেলার গারো অধ্যুষিত মরিয়মনগর, দুধনই, ভাটপাড়া, বারোয়ামারী, ধানশাইল, বাঁকাকুড়া, গজারীকুড়া গ্রামের গারো জনগোষ্ঠীর মাটির ঘরগুলো ক্ষতির শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার ভাটপাড়া। গ্রামটির ৩৭টি পরিবারের সবগুলো ঘর নুইয়ে পড়েছে। একেকটি পরিবারের ঘরের সংখ্যা দুই থেকে তিনটি। হঠাৎ করে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে অনেক মানুষ পড়েছেন চরম বিপদে। তবে ধসে পড়া ঘরের নিচে চাপা পড়ে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

পার্শ্ববর্তী দুধনই, মরিয়মনগর, গজারীকুড়া, বারোয়ামারীতেও একই চিত্র। বারোয়ামারীর যুথিকা রাকসাম, আধুনিকা ম্রং, বণিকা চিরান, লুটিস চিরান, কবিতা ম্রং, সলিন ম্রং, মহিমা চিরান, নির্দেশ চিরান, আলফন্স চিরান প্রমুখের বাড়ি বন্যার পানিতে একেবারে শুয়ে পড়েছে। এছাড়াও অনেকের ঘর ভেঙেছে আংশিকভাবে। অনেকের পুকুর ডুবে গেছে।

ধানশাইল, বাঁকাকুড়ার প্রায় ১০টি গারো পরিবারের ঘর ধসে পড়েছে। তবে ঘরগুলো ধসে পড়ার আগেই মানুষ ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এতে মানুষের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ভাটপাড়ার বাসিন্দা সৌহার্দ্য চিরান বলেন, ‘উজানের ঢলে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। আমার গ্রামের শুধুমাত্র কয়েকটি পাকা ঘর বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। ঘর হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে আশেপাশের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজনদের বাড়িতে।’

একই গ্রামের ফুলমনি ম্রং বলেন, ‘আমাদের ঘরবাড়ি সব ভাইঙ্গা নিয়ে গেছে। খাওয়ার সমস্যা হচ্ছে। গত দুইদিন ধরে কোন কিছু খাইতে পারি না। আমরা এখন নিরুপায়।’

ষাটোর্ধ্ব মিটিলা চিসিম বলেন, ‘দুইদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া নাই। কাপড়-চোপড় নাই। সব তলায় গ্যাছে। কেউ আঙ্গরে খবর নেয় নাই।’

দুধনই গ্রামের মৃন্ময় চিরান জানান, তাঁর গ্রামের প্রায় ৮-১০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে রাতে অনেকেই তার বাড়িতে আশ্রয় নেন। ঘর হারানো লোকগুলো রীতিমত নির্বাক হয়ে গেছে।

পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার উর্ধ্বে প্রবাহিত হওয়ায় এ বন্যার সৃষ্টি হয়। শেরপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর কমপক্ষে ১৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% আদিবাসী কোটা চালুর দাবি

 


দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা চালু করার দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, ৬২তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সংগঠনটির রাঙ্গামাটি জেলা শাখা আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।  

সমাবেশে পিসিপি, যুব সমিতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, মহিলা সমিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কর্মীর পাশাপাশি রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দেড় হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশের আগে কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে বনরুপার পেট্রোল পাম্প প্রদক্ষিণ করে ডিসি অফিসের সামনে সমবেত হয়।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, ১৯৬২ পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান যে গণবিরোধী বৈষম্যমূলক শিক্ষা নীতি চালু করেছিল সেটা স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বাংলাদেশে আমরা লক্ষ্য করি। আমরা বারে বারে দেখেছি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের একটা লড়াই প্রতিনিয়ত চলছে। জেলা পরিষদ পুনর্গঠন নয় বরং জেলা পরিষদ পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক নির্বাচন দেওয়া হোক।

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করে সকল প্রকার সরকারি চাকুরিতে ও দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বহাল রাখার দাবি জানান।

পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসীদের জাতিগত পরিচয় বাঙালি হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদিবাসীদের উপর দমন পীড়ন জারি রেখেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক সরকার। আদিবাসীরা একদিন স্বনির্ভর ছিল। কিন্তু তাদেরকে ক্রমাগতভাবে স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ করে, তাদের সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে। 

পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতির দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য, দুর্নীতি ও অনিয়ম হয় মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী অনগ্রসর আদিবাসীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওযার কথা থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করা হয় না। আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা পাহাড়ে নেই। জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী আদিবাসীদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা করার কথা থাকলে তার বাস্তবে করা হয়নি।

সংহতি বক্তব্যে বিএমএসসি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মংগ্রি মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষী আদিবাসী জনগণ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। আদিবাসীদের জন্য সকল প্রকার সরকারি চাকুরিতে বরাদ্দ ৫ শতাংশ কোটা ১ শতাংশে নামিয়ে এনে আদিবাসীদের সাথে চরম বৈষম্য করা হয়েছে।

ছাত্রনেতা টিকেল চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা। তিনি আদিবাসীদের সকল প্রকার সরকারি চাকরিতে ও দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশ কোটা চালু রাখার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

কাপ্তাই হ্রদে ডুবে ২ চাকমা শিশুর মৃত্যু

 


রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার টিটিসি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদে ডুবে দুই চাকমা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত দুই শিশুর নাম নোবেল চাকমা (৬) ও স্টেলা চাকমা (৬)।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে বাচ্চা দুটোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে কাপ্তাই হ্রদের মধ্যে শিশুদের পায়ের জুতো ভাসতে দেখা যায়।

পরে স্থানীয়রা পানিতে নেমে দুই শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

রাঙ্গামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, টিটিসি রোড এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।

© all rights reserved - Janajatir Kantho