পাহাড়ের ৩ আদিবাসী নারী ধর্ষণ-নিপীড়নে জড়িতদের শাস্তির দাবি


বন্যা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে খাগড়াছড়ির রামগড়ে এক আদিবাসী নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, রাঙামাটিতে এক স্কুলছাত্রী এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে আরেক আদিবাসী নারীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

আজ সকালে রাঙামাটি জেলা শহরের কুমার সুমিত রায় জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করে। সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ সমাবেশ হয়।

সমাবেশে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রী নিলা চাকমার সভাপতিত্বে ও বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিপুল চাকমা, রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী উক্রাচিং মারমা, সুষ্টন চাকমা, শিক্ষার্থী কিকো দেওয়ান ও সংস্কৃতিকর্মী বিজ্ঞান্তর চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলার কর্তৃক পাহাড়ি আদিবাসী নারী ধর্ষণ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।

এছাড়াও ৮ দফা দাবি জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা পুনর্বহাল, পাহাড়ে ভূমি সমস্যা নিরসন, সবার গ্রহণযোগ্য নিষ্ঠাবান শিক্ষিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে শক্তিশালী তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন, আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রামকে পানিশমেন্ট জোন হিসেবে ব্যবহার না করা, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সবাই এ দেশের নাগরিক: প্রধান উপদেষ্টা

 


অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সবাই এ দেশের নাগরিক এবং সমান আইনের সুরক্ষার অধিকারী। তাদের সকলের মানবিক অধিকারসহ অন্যান্য সকল অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য আমি উপদেষ্টা পদমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছি যার দায়িত্ব হবে জাতীয় সংহতি উন্নয়ন।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গতকাল প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার আদিবাসী শব্দচয়নে আশার আলো দেখছেন আদিবাসীরা। আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরান সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-উপজাতি শব্দ নিপাত যাক, আদিবাসীরা মুক্তি পাক।'

মং এ ঝাউঝাউ লিখেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার মুখে আদিবাসী শুনে ভালো লাগছে। লিখিতভাবেও হোক আগামীতে।’

শেরপুরে আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান

 


শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া আদর্শ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সম্মাননা প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল এলাকার বাসিন্দা। এসময় এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ঝিনাইগাতীর নওকুচি গ্রামের সৌহার্দ্য রায় তারক নামের আরেক আদিবাসী শিক্ষার্থীকেও সংবর্ধণা প্রদান করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিজেনাস ডে উদযাপন উপলক্ষে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগ শেরপুর, কোচ আদিবাসী ইউনিয়ন, এসআইএল-বাংলাদেশ, আইইডি, হাজং সমাজ কল্যাণ সংগঠন যৌথভাবে এ সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষার্থীর হাতে ফুলেল শুভেচ্ছা, ক্রেস্ট এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেন। পরে কোচ, বর্মন ও গারো জাতিগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী এবং আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

খাগড়াছড়িতে বন্যার পানিতে ডুবে আদিবাসী কিশোরীর মৃত্যু

 

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে বন্যার পানিতে ডুবে রুষা চাকমা নামের এক আদিবাসী কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের জয়ন্ত কারবারি পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে মৃত রুষা চাকমার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে।

মৃত রুষা চাকমা ওই এলাকার পল্টু চাকমার মেয়ে। সে চঙ্গাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেলে বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় রুষা চাকমা। এলাকার লোকজন পানিতে খোঁজাখুঁজি করে সন্ধ্যার দিকে মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন।

 

জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদারের আহ্বান মাইকেল চাকমার


 

জনগণের হাতে ক্ষমতা আনার, জনগণের সরকার ও সাংবিধানিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সেন্ট্রাল ওয়ার্কিং টিমের সদস্য মাইকেল চাকমা।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় তোপখানা রোডের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকার কর্মী-সংগঠকদের এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গোপন বন্দীশালা আয়না ঘরে ৫ বছর ৩ মাস থাকার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মাইকেল চাকমা বলেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার উচ্ছেদের ফলেই আমি গুমের মৃত্যু গুহা থেকে জীবন নিয়ে আজ ফিরে আসতে পেরেছি।’

এসময় তিনি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানান।

সভার শুরুতে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের গুমের মৃত্যু গুহা আয়নাঘর থেকে ৫ বছর ৩ মাস বন্দি থেকে ফিরে এসেছেন মাইকেল চাকমা।

এরআগে, গত ৭ আগস্ট আয়না ঘর থেকে মুক্তি পান মাইকেল চাকমা। ওইদিন ভোরের দিকে চট্টগ্রামের একটি স্থানে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়।

তিন পার্বত্য জেলায় ৩ আদিবাসী নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

 


চলমান বন্যাকালীন সময়ে তিন পার্বত্য জেলায় তিনজন আদিবাসী নারী নিপীড়নের ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।

এতে খাগড়াছড়ির রামগড়ে এক আদিবাসী গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকারী মোহাম্মদ ইউসুফ, রানা ও মোশারফ গং, রাঙামাটির বনরূপায় আদিবাসী শিশু ধর্ষণ চেষ্টাকারী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ওরফে রাইছ মিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে আরেক আদিবাসী নারীকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মোহাম্মদ ফারুককে অতিদ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ সঞ্চালনা করেন পিসিপি, জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন চাকমা ও সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙামাটি জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক হিরা চাকমা।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, ‘দেশের বর্তমান যে বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষ সর্বহারা উদ্বাস্তু, সেই জায়গায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় তিনটি ধর্ষণের ঘটনা সত্যিই নিন্দনীয়। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদেরও প্রত্যাশা বৈষম্যহীন সুষ্ঠু রাষ্ট্রের।’

যুব নেতা সুমিত্র চাকমা আরও বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনার থেকে প্রশ্ন জাগে পার্বত্য চট্টগ্রামে কি আবারও সাম্প্রদায়িক শক্তি জেগে উঠছে কিনা? যদি জেগে উঠে তাহলে এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করতে হবে।’

পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর চাকমা বলেন, ‘ধর্ষকদের সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরও অংশ।’

এই ছাত্রনেতা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান বিচারহীন সংস্কৃতি দূরীকরণে বিশেষ দৃষ্টি আরোপ করার দাবি জানান। একইসাথে এই অন্যায় ও ধর্ষকদের সুষ্ঠু বিচার করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাগ্রত ছাত্র সমাজ বসে থাকবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিচিং মারমা বলেন, ‘দেশের একদিকে মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে পাহাড়ে চলছে ধর্ষণের ঘটনা। আজও আদিবাসী নারীরা নিরাপদ নয়।’

সভাপতির বক্তব্যে হিরা চাকমা তিন জেলায় তিনটি সংঘটিত ধর্ষণ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি ও পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

রাঙামাটিতে আদিবাসী শিশু ধর্ষণ চেষ্টার শিকার

 


রাঙামাটির বনরূপায় সেটেলার কর্তৃক এক আদিবাসী শিশু (৭) ধর্ষণ চেষ্টার হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আজ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ব্যস্ততম বনরূপা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, অভিযুক্ত রাইছ মিয়ার (৫৫) বাড়ি শহরের রিজার্ভ বাজার মুখ এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, বিকালে ভুক্তভোগী মেয়েটি মায়ের সাথে বনরূপা বাজারে আসে। তার মা বাজারে সবজি বিক্রি করছিলেন। এ সময় মেয়েটি তার বন্ধুদের সাথে খেলতে খেলতে একটা বিল্ডিংয়ের উপরে উঠে যায়। বিল্ডিংয়ে আগে থেকে অবস্থান করা রাইছ মিয়া মেয়েটিকে বিল্ডিংয়ের একটা কক্ষে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালালে ছাত্রীটির বন্ধুরা দেখতে পায়।

তারা চিৎকার করে বাজারের মানুষদের ডেকে নিয়ে আসে। উপস্থিত লোকজন রাইছ মিয়াকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। উত্তেজিত জনতা ধর্ষণের চেষ্টাকারীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করার চেষ্টা চলছিল।

খাগড়াছড়ির রামগড়ে বন্যা পরিস্থিতিতে আদিবাসী গৃহবধূ ধর্ষণের পর এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদের ঝড়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজিম তিতিল সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘এই দুঃসময়ে এসব নেওয়া যায় না। বন্যায় আশ্রয়প্রার্থী নারীকে ধর্ষণ! দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুর বিষয়েও এই চেষ্টা করা হয়েছে। ভালো মানুষদের কথা তো শুনছি অনেক। কিন্তু এই জান্তব মানুষদের বিষয়ে কিছু করি আসুন।’

লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট ডেনিম চাকমা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘এই দুর্যোগের সময় সেটেলার বাঙালি দ্বারা আজকে দুইটি পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। খাগড়াছড়ি আর রাঙ্গামাটিতে! ভিকটিম একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া বাচ্চা! এই দুর্যোগের মধ্যে কেমনে সম্ভব?’

© all rights reserved - Janajatir Kantho