তিন পার্বত্য জেলায় ৩ আদিবাসী নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

 


চলমান বন্যাকালীন সময়ে তিন পার্বত্য জেলায় তিনজন আদিবাসী নারী নিপীড়নের ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।

এতে খাগড়াছড়ির রামগড়ে এক আদিবাসী গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকারী মোহাম্মদ ইউসুফ, রানা ও মোশারফ গং, রাঙামাটির বনরূপায় আদিবাসী শিশু ধর্ষণ চেষ্টাকারী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ওরফে রাইছ মিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে আরেক আদিবাসী নারীকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মোহাম্মদ ফারুককে অতিদ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ সঞ্চালনা করেন পিসিপি, জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন চাকমা ও সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙামাটি জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক হিরা চাকমা।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, ‘দেশের বর্তমান যে বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষ সর্বহারা উদ্বাস্তু, সেই জায়গায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় তিনটি ধর্ষণের ঘটনা সত্যিই নিন্দনীয়। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদেরও প্রত্যাশা বৈষম্যহীন সুষ্ঠু রাষ্ট্রের।’

যুব নেতা সুমিত্র চাকমা আরও বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনার থেকে প্রশ্ন জাগে পার্বত্য চট্টগ্রামে কি আবারও সাম্প্রদায়িক শক্তি জেগে উঠছে কিনা? যদি জেগে উঠে তাহলে এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করতে হবে।’

পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর চাকমা বলেন, ‘ধর্ষকদের সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরও অংশ।’

এই ছাত্রনেতা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান বিচারহীন সংস্কৃতি দূরীকরণে বিশেষ দৃষ্টি আরোপ করার দাবি জানান। একইসাথে এই অন্যায় ও ধর্ষকদের সুষ্ঠু বিচার করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাগ্রত ছাত্র সমাজ বসে থাকবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিচিং মারমা বলেন, ‘দেশের একদিকে মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে পাহাড়ে চলছে ধর্ষণের ঘটনা। আজও আদিবাসী নারীরা নিরাপদ নয়।’

সভাপতির বক্তব্যে হিরা চাকমা তিন জেলায় তিনটি সংঘটিত ধর্ষণ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি ও পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

রাঙামাটিতে আদিবাসী শিশু ধর্ষণ চেষ্টার শিকার

 


রাঙামাটির বনরূপায় সেটেলার কর্তৃক এক আদিবাসী শিশু (৭) ধর্ষণ চেষ্টার হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আজ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ব্যস্ততম বনরূপা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, অভিযুক্ত রাইছ মিয়ার (৫৫) বাড়ি শহরের রিজার্ভ বাজার মুখ এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, বিকালে ভুক্তভোগী মেয়েটি মায়ের সাথে বনরূপা বাজারে আসে। তার মা বাজারে সবজি বিক্রি করছিলেন। এ সময় মেয়েটি তার বন্ধুদের সাথে খেলতে খেলতে একটা বিল্ডিংয়ের উপরে উঠে যায়। বিল্ডিংয়ে আগে থেকে অবস্থান করা রাইছ মিয়া মেয়েটিকে বিল্ডিংয়ের একটা কক্ষে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালালে ছাত্রীটির বন্ধুরা দেখতে পায়।

তারা চিৎকার করে বাজারের মানুষদের ডেকে নিয়ে আসে। উপস্থিত লোকজন রাইছ মিয়াকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। উত্তেজিত জনতা ধর্ষণের চেষ্টাকারীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করার চেষ্টা চলছিল।

খাগড়াছড়ির রামগড়ে বন্যা পরিস্থিতিতে আদিবাসী গৃহবধূ ধর্ষণের পর এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদের ঝড়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজিম তিতিল সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘এই দুঃসময়ে এসব নেওয়া যায় না। বন্যায় আশ্রয়প্রার্থী নারীকে ধর্ষণ! দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুর বিষয়েও এই চেষ্টা করা হয়েছে। ভালো মানুষদের কথা তো শুনছি অনেক। কিন্তু এই জান্তব মানুষদের বিষয়ে কিছু করি আসুন।’

লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট ডেনিম চাকমা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘এই দুর্যোগের সময় সেটেলার বাঙালি দ্বারা আজকে দুইটি পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। খাগড়াছড়ি আর রাঙ্গামাটিতে! ভিকটিম একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া বাচ্চা! এই দুর্যোগের মধ্যে কেমনে সম্ভব?’

খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির সুযোগে আদিবাসী গৃহবধূকে ধর্ষণ!

 


খাগড়াছড়ির রামগড়ে বন্যা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এক আদিবাসী গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সংঘবদ্ধ একদল সেটেলারের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ১১টার দিকে উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের তালতলী পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ওই আদিবাসী নারী স্থানীয় একটি গণমাধ্যমকে জানান, গতকাল তিনি তাঁর কিশোরী মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এসময় সেটেলারদের সংঘবদ্ধ একটি দল তাদের বাড়িতে আসে। পরিস্থিতি টের পেয়ে মা-মেয়ে নিজেদেরকে রক্ষায় বাড়িতে থাকা দা হাতে নেয়। এসময় সেটেলাররা তাদের কাছ থেকে দা কেড়ে নিলে তারা দৌঁড়ে পালাতে থাকে।

এক পর্যায়ে পিলাক খালের পারে গিয়ে সেটেলাররা তাদের ধরে ফেলে। বন্যার পানির কারণে তারা খাল পার হতে পারেননি। এ সময় ধস্তাধস্তি করে তার কিশোরী মেয়েটি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারলেও তিনি পালাতে পারেননি। তাকে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে দুইজন সেটেলার পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

ভুক্তভোগী আদিবাসী নারীর দেয়া তথ্যমতে, সেটেলাররা আনুমানিক ৮-১০ জন ছিলেন। সেখান থেকে তাকে আবারো ৬ মাইল নামক স্থানের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশের লোকজনের সাড়াশব্দ পেয়ে ধর্ষকেরা তাকে ছেড়ে পালিয়ে যান।


ভুক্তভোগী নারী জানিয়েছেন, তিনি ধর্ষণকারীদের মধ্যে একজনকে চিনতে পেরেছেন। তার নাম মো. ইউসুফ (২২)। তিনি রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের মো ইসমাইলের ছেলে।

এদিকে, আদিবাসী গৃহবধূকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষক মো. ইউসুফসহ জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ। আজ শুক্রবার বিকাল ৩টায় সাজেক পর্যটন সড়কের উজোবাজার এলাকায় এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

রাঙামাটিতে পানিতে ডুবে আদিবাসী শিশুর মৃত্যু

প্রতীকি ছবি


রাঙামাটির নানিয়ারচরে পানিতে ডুবে এক আদিবাসী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুড়িঘাট এলাকার বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশাচালক মৃদুল কুমার চাকমার তিন বছর বয়সী ছেলে শ্রেষ্ঠ চাকমা বিকালে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ির পাশে খেলছিল। সে সময় শিশুদের চিৎকার শুনে পাশের লোকজন সেখানে আসেন। তখন শ্রেষ্ঠ নদীর স্রোতে ভেসে যায়।

পরে এলাকাবাসী শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আরাফাত হোসেন জানান, শ্রেষ্ঠ চাকমা নামে তিন বছরের এক শিশুকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তবে শিশুটি হাসপাতালে আনার আগেই পানিতে ডুবে মারা যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

‘সংবিধানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শব্দ কেটে আদিবাসী শব্দ লিখতে হবে’

 


রাষ্ট্র যখন সংস্কার হবে তখন সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা সর্বত্র সেই সংস্কারের প্রতিফলন থাকতে হবে। সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মতো শব্দ কেটে আদিবাসী শব্দটা লিখতে হবে। বুধবার (২১ আগস্ট) মোহাম্মদপুরের ফোক সেন্টারে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ।

সভায় সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, এই আন্দোলন মাওলানা ভাসানীর বক্তব্যকে সামনে নিয়ে এসেছে। মনে করিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রের ধর্মীয়করণ সম্ভব নয়।

এই গবেষক আরও বলেন, জনপরিসরে ছাত্র-জনতার ভেতর একটি ভুল ধারণা রয়েছে। ‘আদিবাসী শব্দটির সঙ্গে ‘আদিবাসিন্দা শব্দটিকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে এই আলোচনা করা দরকার।

‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী যুব পরিষদ ও জনউদ্যোগ এ সভার আয়োজন করে। বিভূতিভূষণ মাহাতোর সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ বৃহত্তর ঢাকা কমিটির সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং। সভায় ধারণাপত্র পাঠ করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিরলা মার্ডী।

সান্তাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সুবোধ এম বাস্কে বলেন, পাহাড়-সমতল-চা বাগানে বসবাসরত সব আদিবাসীকে একত্রে এগোতে হবে। সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। একটা আন্দোলন কখনোই বহুমাত্রিক অংশগ্রহণ ছাড়া সফল হয় না।

কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, ভয়ের সংস্কৃতির অবসান হয়েছে। সম্প্রতি রাঙ্গামাটিতে আদিবাসীরা বড় বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। পাহাড় ও আদিবাসী নিয়ে সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যা দুঃখজনক। পাহাড়-সমতল আমরা যত বেশি একত্রিত হতে পারব, তত আমাদের দাবি জোরালো হবে। আমাদের দাবির কথা অন্য কেউ বলে দিলে তা বিকৃত হবে। ‘আদিবাসী শব্দটা জোরেশোরে উচ্চারণ করতে হবে।

গ্রাফিতি মুছে ফেলা ও বাঁধা প্রদানের প্রতিবাদে বান্দরবানে বিক্ষোভ

 


বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় গ্রাফিতি মুছে ফেলা, বাঁধা প্রদানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী আদিবাসী ছাত্র সমাজ। বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে বান্দরবান শহরের রাজার মাঠ এলাকা থেকে বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রেসক্লাব চত্ত্বরে সমাবেশ করে তারা।

সমাবেশে জন ত্রিপুরা, জেমস বম, পার্বত্য চট্টগ্রাম গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক সাচিংনু মারমা, ঢাকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত অং মারমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।  

সারাদেশের ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসী শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদ জানান। যেখানে কল্পনা চাকমার সন্ধান সহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সংবলিত লেখা তুলে ধরা হয়। কিন্তু এসব গ্রাফিতি আঁকায় বাঁধা প্রদান ও মুছে দেওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ সমাবেশে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বতাঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং ১৯০০ সালে প্রণীত হিলট্র্যাক্টস রেগুলেশন বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানানো হয়।

পাশাপাশি সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি করে স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।

ম্রো জাতির প্রথম নারী ডাক্তার সংচাং ম্রো

 


শৈশবে বোনকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেখে স্বপ্ন দেখেছিলেন চিকিৎসক হওয়ার। বিনা চিকিৎসায় পরিবার ও নিজের জনগোষ্ঠীর লোকদের মারা যাওয়ার কারণে তার বাবা কাইংপ্রে ম্রো মনস্থির করেছিলেন সন্তানদের একজনকে চিকিৎসক বানানোর। বাবার দীর্ঘ প্রচেষ্টা, অদম্য মনোবল আর অন্যান্যদের সহযোগিতায় পাহাড়সম বাঁধা পেরিয়ে অবশেষ পূরণ হল সেই স্বপ্ন। ডাক্তার হলেন সংচাং ম্রো।  

এর মাধ্যমে ইতিহাসের অংশী হলেন তিনি। হলেন ম্রো জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম নারী ডাক্তার। সংচাং ম্রোর বাড়ি বান্দরবান আলীকদমের পায়া কার্বারী পাড়ায়।

সম্প্রতি রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন সংচাং ম্রো। তিনি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ১৭-১৮ সেশনে ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে ডাক্তারি শেষ করে তিনি এই মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নী করছেন।

ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন সংচাং ম্রো। চম্পটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। আলীকদমে বিজ্ঞানের ভালো শিক্ষক না থাকায় ভর্তি হন সেন্ট যোসেফ হাই স্কুল এন্ড কলেজে। সিস্টারদের সহযোগিতায় এখান থেকেই তিনি এইচএসসি পাস করেন। পরে ভর্তির সুযোগ পান রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে।

নিজের ডাক্তার হবার গল্প নিয়ে সংচাং ম্রো বলেন, চিকিৎসার অভাবে এক বোনের মৃত্যু ও মায়ের দীর্ঘকালীন অসুস্থতা এবং বাবার প্রেরণা তাকে ডাক্তার হতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

আলীকদমের ম্রো সম্প্রদায় হতে তিনিই প্রথম ডাক্তার। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের পরেই ম্রোদের অবস্থান। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ম্রোদের বসবাস বেশি।

© all rights reserved - Janajatir Kantho