পার্বত্য চট্টগ্রামে দেয়ালজুড়ে কল্পনা চাকমার গ্রাফিতি অঙ্কন

 


পার্বত্য চট্টগ্রামের দেয়ালজুড়ে আঁকা হচ্ছে অপহরণের শিকার হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার গ্রাফিতি। শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালন করে।

আজ সকাল থেকেই রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গার দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকে শিক্ষার্থীরা। গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা কল্পনা চাকমার চোখ বাঁধা প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন।

প্রতিকৃতির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়কল্পনা চাকমা ১৯৯৬?’ প্রশ্নবোধক সম্বলিত নানান লেখা।

প্রতিকৃতি অঙ্কনকালে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী গান গাইতেও দেখা যায়। গানে গানে ফুটে উঠে অধিকারের কথা।  

এরআগে, গতকাল খাগড়াছড়িতেকল্পনা চাকমা ১৯৯৬?’ লেখা সংবলিত গ্রাফিতি অঙ্কনের কিছুক্ষণ পরই কে বা কারা মুছে ফেলেন। নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা, নিন্দার ঝড় উঠে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সাবেক শিক্ষার্থী মংসাই মারমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, কল্পনা চাকমাই আমাদের সকল শোষণ-বঞ্চনার জীবনকে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে। তাই তাদের এত ভয়। বারবার জীবন্ত কল্পনা চাকমাকে গ্রাফিতির কল্পনা চাকমাকে মুছে ফেলেছে।


কাল আদিবাসী দিবস পালন করবে না আদিবাসী ফোরাম

 


দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামীকাল (৯ আগস্ট) আদিবাসী দিবস পালনের সমস্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

সংগঠনটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৯ আগস্টের সকল অনুষ্ঠান স্থগিত করা হল। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সাপেক্ষে পরবর্তীতে দিবসটি পালনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।

জাতিসংঘের এবারের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় Protecting the Rights of Indigenous Peoples in Voluntary Isolation and Initial Contact. যার বাংলা অনুবাদ করা হয়, ‘আদিবাসীদের অস্তিত্ব সংরক্ষণ ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেকে অধিকতর সামিল করুন।’

জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালে ৯ আগস্টকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো বাংলাদেশের আদিবাসীরাও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হলেন সুপ্রদীপ চাকমা


নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টায় বঙ্গভবনে তারা শপথ নেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা। ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় তিনি শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি।

সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯৬১ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি সপ্তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। এরপর মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।  

সুপ্রদীপ চাকমা ছাড়াও উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

এছাড়াও রয়েছেন ফরিদা আখতার, বিধান রঞ্জন রায়, আ ফ ম খালিদ হাসান, নুরজাহান বেগম, শারমিন মুরশিদ ও ফারুকী আযম।

আয়নাঘর থেকে মাইকেল চাকমা মুক্ত, কল্পনা চাকমা কোথায়–প্রশ্ন

 


গোপন বন্দীশালা আয়নাঘর থেকে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার মুক্তির পর কল্পনা চাকমাকে নিয়ে সরব হয়েছেন সচেতন নাগরিকেরা। এই রাজনৈতিকর্মী কোথায়তুলছেন সেই প্রশ্ন।

এ নিয়ে নিপ্পন চাকমার একটি লেখা ফেইসবুকে সয়লাব হয়ে গিয়েছে। তিনি লিখেছেন, আঁধাপাকা চুল, একটু বয়সের ছাপ, বয়সটা গত ২৮ বছরে অনেকখানি হয়েছে ‘কল্পনা চাকমা’ নামে এমন কোনো ভদ্রমহিলাকেও যদি পাওয়া যেতো পাহাড় আজ কিছুটা হলেও আনন্দে কেঁদে উঠতো!

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে নিয়ে সরব হয়েছেন সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট হোসেইন সোহেল। তিনি বলেন, মাইকেল চাকমাকে পেলাম আয়নাঘর থেকে। পেলাম আরও ভাইদের কিন্তু আমাদের পার্বত্য জেলার কল্পনা চাকমা কই? তাকে ফেরত দিন দয়া করে।

একইসাথে যারা প্রতিবাদহীন চুপ রয়েছেন তাদেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। হোসেন সোহেল লিখেছেন, পাহাড়ের ভ্লগার ভয়েজার ইউটিউবার ইত্যাদি তারা কোন কথা বলছেন না কেন? বর্তমান সময় নিয়ে ভয়ে লেপের তলে ঘুমিয়ে থাকবেন?

গারো জাতিসত্তার কবি ও লেখক নিগূঢ় ম্রং বলেন, অনেকেরই তো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। আয়নাঘর ভেঙে দেখো, কল্পনা চাকমা কথা বলছে!

প্রতিবাদী গানের দল মাদল-এর অন্যতম সদস্য অন্তর স্কু নিজের ফেইসবুক ওয়ালে লিখেছেন, মাইকেল চাকমাকে পাওয়া গেলো আয়নাঘর থেকে। কল্পনা চাকমা কি ফিরবেন?

রাজনৈতিককর্মী কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের সামনে অপহৃত হন। তিনি হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

পরিবারের সদস্যদের স্পষ্ট অভিযোগ, সেই রাতে কল্পনাকে নিরাপত্তা বাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদধারী একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা তাঁর জবানবন্দিতেও সেই একই অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল রাঙ্গামাটির আদালত অপহরণের মামলাটি খারিজ করে দেয়।

© all rights reserved - Janajatir Kantho