তাড়াশে আদিবাসী সুফলভোগীদের পুকুর দখলের অভিযোগ

 

ছবি: কালবেলা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আদিবাসী সুফলভোগীদের পুকুর দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এর প্রতিকার চেয়ে তাড়াশ ইউএনও সুইচিং মং মারমা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বটগাড়ী সপ্তমী পুকুর সুফলভোগী দলের সভাপতি বলরাম উরাওঁ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল বটগাড়ি সপ্তমী পুকুরটি নিমগাছি মৎস্য চাষ প্রকল্পের আওতায় সুফলভোগী সদস্যরা ২০১১ সাল থেকে লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি বটগাড়ি এলাকার প্রভাবশালী মো. সাইফুল ইসলাম ও তার তিন ছেলে মো. আমজাদ হোসেন, মো. শামিম হোসেন, মো. আমিরুল ইসলাম, সাইফুলের ছেলে মো. শফি ও আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মো. রাঙ্গা ওই জলাশয়ে জাল কাগজ করে পুকুরটি নিজেদের মালিকানা দাবি করে তা দখলের চেষ্টা করেছেন।

সুফলভোগী অমল উরাওঁ, চিত্তরঞ্জন উরাওঁ, প্রদীপ উরাওঁ জানান, বর্তমানে লিজ দেওয়া পুকুরে মাছের খাবার, ওষুধ ও পরিচর্যা করতে দিচ্ছে না। বরং প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক পুকুরে থাকা সুফলভোগীদের চাষ করা প্রায় ৩ লাখ টাকার মাছ তুলে বিক্রি করেছেন। এ সময় বাধা দিলে প্রভাবশালীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ ছাড়াও বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

তাড়াশ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সপ্তমীর পুকুরটি ‘খ তপশিল গেজেট থেকে তা অবমুক্ত করার জন্য আব্দুল কুদ্দুসগং তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করেন। আবেদেনের প্রেক্ষিতে গত ২৮ মার্চ তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা খালিদ হাসান স্বাক্ষরিত একটি আদেশপত্রে বটগাড়ি মৌজার আরএস ২৪ নম্বর খতিয়ানটি টেম্পারিং খতিয়ান। নালিশি ভূমিতে আবেদনকারীদের কোনো ভোগদখল নাই। টেম্পারিং খতিয়ান হিসেবে নালিশি ভূমিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত থাকায় কুদ্দুসগংদের অবমুক্ত করা আবেদনটি বাতিল করা হয়। তারপরও ওই প্রভাবশালীরা সুফলভোগীদের পুকুরটি দখলে নেয়।

বিষয়টি নিয়ে তাড়াশ ইউএনও সুইচিং মং মারমা বলেন, খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বোর্ডিং স্কুলে হাজার আদিবাসী শিশুর মৃত্যু

 

ছবি: আল-জাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বোর্ডিং স্কুলে কমপক্ষে এক হাজার আদিবাসী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ও অসুস্থতার কারণে এসব শিশুর মৃত্যু হয়। মার্কিন স্বরাষ্ট্র বিভাগের কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন অনুসারে, ১৮১৯ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পরিচালিত প্রায় ৪০০টি মার্কিন বোর্ডিং স্কুলে এসব শিশুদের মৃত্যু হয়।

মার্কিন অভ্যন্তরীণ সচিব দেব হালান্ডের নেতৃত্বে পরিচালিত এ তদন্তে বলা হয়েছে, ১৮১৯ থেকে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত সমগ্র মার্কিন-মল্লুকে ৪০০টিরও বেশি বোর্ডিং স্কুল ছিল। এর মধ্যে ৬৫টিতে ডজন ডজন আদিবাসী শিশুর সমাধি পাওয়া গেছে।

এছাড়াও সেই সব বোর্ডিং স্কুলের সীমানার মধ্যে বহু সমাধিও ছিল যেগুলো আদিবাসী শিশুদের কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এসব বোর্ডিং স্কুল আদিবাসী শিশুদের শ্বেতাঙ্গ সমাজে আত্তীকরণ বা মিশে যাওয়ার দীক্ষা দিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব স্কুলে আদিবাসী শিশুদেরকে জোর করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হতো। এতে তারা নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিসত্তা একেবাবে ভুলে যেত।

এসব স্কুলগুলোতে শিশুদের ইংরেজি নাম দেওয়া হতো। এমনকি তাদের কৃষিকাজ, ইট তৈরি এবং রেলপথে কাজ করার মতো কায়িক শ্রম করতে বাধ্য করা হতো বলে তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

ন্যাশনাল নেটিভ আমেরিকান বোর্ডিং স্কুল হিলিং কোয়ালিশন অনুসারে, ১৯৬৯ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত কয়েক হাজার শিশুকে জোর করে বোর্ডিং স্কুলে রাখা হয়েছিল। ১৯২৬ সাল পর্যন্ত দেশটির আদিবাসীর প্রায় ৮৩ শতাংশ স্কুল-বয়সী শিশু স্কুলগুলোতে ভর্তি হয়।

এদিকে, এত সংখ্যক আদিবাসী শিশুর মৃত্যুর জন্য মার্কিন সরকারকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

তামিলনাড়ুতে সরকারি স্কুলের নামকরণে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

আদালত

ভারতের তামিলনাড়ুতে সরকারি স্কুলের নামকরণে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন মাদ্রাস হাইকোর্ট। এমনকি সমস্ত সরকারি স্কুলের নাম থেকে ওই ধরনের শব্দ সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। শুক্রবার বিচারপতি এসএম সুব্রহ্মণ্যম এবং বিচারপতি সি কুমারাপ্পানের বেঞ্চে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

শুধু ‘আদিবাসী নয়, নির্দিষ্ট কোনও সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করে, এমন কোনও শব্দই স্কুলের নামে ব্যবহার করা যাবে না। আদালত জানিয়েছে, এতে বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে। ছোটদের স্কুলে যা কাম্য নয়।

সম্প্রতি তামিলনাড়ুর আদিবাসী অধ্যুষিত কলবরায়ণ এলাকায় বিষাক্ত মদ খেয়ে অন্তত ৬৮ জনের মৃত্যু হয়। সেখানকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান সংক্রান্ত একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি চলছিল হাইকোর্টে। শুক্রবার সেখানেই আদালত সরকারি স্কুলের নামে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারে আপত্তি জানায়।

তামিলনাড়ু সরকারকে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এই ধরনের স্কুলের নাম পরিবর্তন করতে হবে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, জনগণের টাকায় চলা সরকারি স্কুলে ‘আদিবাসী শব্দ ব্যবহার কাম্য নয়। কারণ, তাতে ওই সমস্ত স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেদের পৃথক মনে করতে পারে। তাদের মনে হতে পারে, তারা আশপাশের অন্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে আলাদা, কারণ, তারা ‘আদিবাসী। একুশ শতকের সমাজে এই ধরনের বৈষম্য ‘বেদনাদায়ক বলেও মন্তব্য করেছে আদালত।

কলবরায়ণ এলাকায় যে সমস্ত সরকারি স্কুল রয়েছে, তার অধিকাংশের নামেই আগে বা পরে ‘আদিবাসী শব্দটি রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে, এখন থেকে ‘আদিবাসী শব্দ সরিয়ে ওই সমস্ত স্কুলের নামে ব্যবহার করতে হবে শুধুমাত্র ‘সরকারি শব্দটি।

শিক্ষা ব্যবস্থায় আদিবাসী শিক্ষার্থী: প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা

শিক্ষা ব্যবস্থায় আদিবাসী

বাংলাদেশ বহু জাতিগোষ্ঠীর সম্মিলিত দেশ। বাঙালি জনগোষ্ঠীর বাইরেও সরকারি গেজেটভূক্ত ৫০টি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে এবং গেজেট অন্তর্ভূক্তি বাদেও রয়েছে আরো প্রায় ৫০টির বেশি জনগোষ্ঠী। অথচ নন-গেজেটেড জনগোষ্ঠীদেরও রয়েছে আলাদা ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি। যদিও আজকের আলোচনার বিষয় এটা না, অন্য। শিরোনামে উল্লেখিত আলোচনায় ফিরতে আমাদের বাংলাদেশ সৃষ্টি পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে গড়ে উঠা শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সেই ব্যবস্থাকে ঘিরে গড়ে উঠা কিছু আন্দোলনের দিকে নজর দিতে হবে। এতে হয়তো আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।

১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শাসনামলে শরীফ কমিশনের নেতৃত্বে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল। শিক্ষানীতির বেশ কিছু বক্তব্য তৎকালীন পাকিস্তানের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় অপ্রাসঙ্গিক ছিল। এগুলোর মধ্যে উচ্চ শিক্ষা সংকোচন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বছরে বছরে পরীক্ষা ব্যবস্থা, ৩ বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্স চালু এবং ছাত্র বেতন বৃদ্ধি প্রস্তাবনা অন্যতম। পরবর্তী ছাত্র আদোলনে এসব নীতিমালা বন্ধ করো দেওয়া হয়। বাষট্টি সালের শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল শিক্ষার সংকোচন অবস্থা থেকে মুক্তি এবং শিক্ষাকে সার্বজনীন করা।

সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ও ফলাফলের কার্যকারিতা কেমন তার উপর দাঁড়িয়ে আজকের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা যায়। বর্তমান সময়ে শিক্ষা চলছে ভিন্ন ভিন্ন ধারায়। যেখানে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো একই ধারার শিক্ষানীতি দাবি করে আসলেও সরকার এ বিষয়ে কর্ণপাতে নারাজ। ভিন্ন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু হওয়ার কারণে রাষ্ট্রীয় যে মূল ধারার শিক্ষানীতি সেখানে রয়েছে এক বিশাল গলদ। এই গলদের মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এবং একূল না অকূল অবস্থায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের।

ঠিক কেমন জটিল প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হচ্ছে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের এই আলোচনায় সরাসরি যাওয়া যাক। বিভিন্ন প্রতিবেদনের দিকে নজর দিলে আপনি কিছু সমীকরণ দেখতে পাবেন যেখানে দেখা যাবে বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় চা রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম এবং নানা জটিলতার মধ্যেও চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো পর্যায়ে। কিন্তু যাদের শ্রমের বিনিময়ে এই উৎপাদন প্রক্রিয়া তাদের বা সেই জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।

শ্রম আইনের (২০০৬) ৯৫ নম্বর ধারার (খ) অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, চা বাগানের শ্রমিকদের ছয় থেকে ১২ বছরের সন্তান যদি ২৫ জনের বেশি হয় তাহলে উক্ত বাগানে ওই সকল শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ৯৭ নম্বর ধারায় চা শ্রমিকদের সহজভাবে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস প্রাপ্তির সুবিধার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র কি বলছে সেদিকে যদি দেখি তবে সেখানে এই সমীকরণের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অথচ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের শ্রম আইন বা প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সারাদেশ ব্যাপী পরিচালিত বহুল আলোচিত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এই জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। এর বাইরেও রয়েছে স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার পরিসংখ্যান, যেখানে  ৫-১৭ বছর শিশুদের মধ্যে ৫০ ভাগ শিশুই খর্বকায় মানে বয়স এবং স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার তুলনায় নানান শারীরিক দুর্বল অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে।

এছাড়াও সবথেকে আশঙ্কাজনক পরিসংখ্যান হলো সারাদেশে যেখানে শিশু শ্রমের পরিমাণ ৬ কি ৭ শতাংশ সেখানে চা বাগানে এর পরিমাণ ২০ শতাংশ। ফলে এই জনগোষ্ঠীর শিশুদের উচ্চ শিক্ষা  গ্রহণ করতে আসার জন্য যে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজন তা থেকে বঞ্চিত হয়ে পিছিয়ে পড়ছে। এছাড়াও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য যে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে তা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় গেজেটভূক্ত না হওয়ার কারণে। একটি দুঃখ জাগানিয়া তথ্য, ১৬৬ বছরে চা জনগোষ্ঠীদের এই বাংলার ইতিহাসে মাত্র ৪০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এ হলো মোটামুটি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় চা জনগোষ্ঠীদের শিক্ষাগত অবস্থা।

এই পরিসংখ্যান গুলো শুধুমাত্র চা জনগোষ্ঠীদের নিয়ে হলেও এই চিত্র সারাদেশে বসবাসরত বাকি আদিবাসী জনগোষ্ঠীদেরও। আমরা যদি সমতলে বসবাসরত গারো সাঁওতাল মুন্ডা, মাহালী, ওঁরাও হাজংসহ ৩৫টির মতো জনগোষ্ঠীর প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় অবস্থানগত জায়গা দেখি তাহলে সেখানে দেখতে পাবো স্কুল সংকট, শিক্ষক সংকট, ভাষাগত জটিলতা এইসব নানাবিধ সমস্যায় আদিবাসী শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষায় পিছিয়ে যাচ্ছে।

আদিবাসীদের শিক্ষার এই প্রতিবন্ধকতার পেছনে শুধু রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার অভাব নাকি খোদ রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পলিসিও যুক্ত রয়েছে প্রসঙ্গের খাতিরে এই বিষয়ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। এই বিষয়ের উপর আলোচনা করতে গিয়ে স্পষ্ট চোখ রাখতে হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে যেখানে পরগাছার মত করে পাহাড়ি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র, যার ফলে শুধু ভূমি হারানোর ফলে সরাসরিভাবে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হচ্ছে।

সাজেক সরকারি প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষিকার সাথে আলাপকালে উঠে আসে অপরিকল্পিত পর্যটনের ফলে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা স্কুল বিমুখ হচ্ছে। পাহাড়ি শিশুদের ২০ টাকা, ৩০ টাকায় পর্যটকদের গাইডার হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং পর্যটন কেন্দ্রের রাস্তা গুলোতে চিড়িয়াখানার জন্তুদের মতো করে পাহাড়ি শিশুদের দিকে ছুঁড়ে মারা হয় চকলেট যার ফলে শিশু সময় থেকেই রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যমূলক এবং পর্যটকদের দাসত্বমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে পাহাড়ের আদিবাসী শিশুরা। কিশোর সময়ে মানসিক বিকাশকালে পক্ষপাতী পলিসির ফাঁদে পরতে হচ্ছে পাহাড়ি শিশুদের।

আবার জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে কেমন বরাদ্দ এসেছে এসবের দিকে নজর দিলে দেখতে পাবো গত ২০১৯- ২০ অর্থ বছরে তুলনায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটের পরিমাণ ৫ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা বেড়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৮ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।

বছরের পর বছর ধরে শিক্ষাখাতের বাজেটে আত্মতৃপ্তি ঢেঁকুর তুললে চলে না। ঘুরে ফিরে মোট বাজেটের ১১-১২ শতাংশের মধ্যে বিদ্যমান যার হওয়ার কথা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ এবং মোট জিডিপির ৬ শতাংশ যেখানে আছে ২.০৯ শতাংশ। এর মাঝেও রয়েছে কিছু শুভংকরের ফাঁকি,  অর্থমন্ত্রী বলছেন, সরকারের ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু এরমধ্যে শিক্ষা বহির্ভূত খাতের বরাদ্দও আছে। যেহেতু বাজেট মন্ত্রণালয় ধরে হয় সেখানে  শিক্ষা খাতে কেন আলাদা বরাদ্দ রাখা হবে না এই প্রশ্ন রাখা যায়। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, গত বছর থেকে সরকার বাজেট বরাদ্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে যুক্ত করে বরাদ্দের হিসাব করছে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এছাড়াও শিক্ষা  খাতের দুই তৃতীয়াংশ ব্যয় হচ্ছে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা খাতে, আর মাত্র এক শতাংশ ব্যয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পেছনে।

২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করা হয় সেখানে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ ৮০ কোটি টাকা যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিলো ৫০ কোটি টাকা। এত অল্প বাজেটে ৩০ লাখ জনগোষ্ঠীর অন্যান্য খাতের পাশাপাশি আলাদা ভাবে শিক্ষা খাতে উন্নয়নের কতটুকু সুযোগ রয়েছে?

আইএলও কনভেশন আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী কনভেনশন ১৯৫৭ ও ১৯৮৯র ষষ্ঠ অংশ অনুচ্ছেদ ২৮ এ বলা আছে, এই সকল জনগোষ্ঠীদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল প্রকার সহযোগিতা রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে। ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব মাতৃভাষায় পাঠদানের কথা বলা হলেও এ পর্যন্ত চালু হয়েছে মাত্র ৬টি ভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু দক্ষ শিক্ষকের অভাব, বাজেটের স্বল্পতা ইত্যাদি নানা কারণে কচ্ছপ গতিতে আগাচ্ছে মাতৃভাষায় শিক্ষার পাঠ।

বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত চিম্বুকে ম্রোদের জমিতে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে যে সংকট রয়েছে, সেখানে কয়েকটি গ্রাম মিলেও একটি সরকারি বা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই বা আপনি যদি দেখেন সাজেকের স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীদেও যেখানে ছোট ছোট শিশুরা প্লেকার্ড হাতে বলছে, ‘‘আমাদের মসজিদ চাই না, স্কুল চাই’’। এ সকল প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা কতটা মৌলিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে বা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে?

আলোচনার একটা বিশাল অংশ জুড়ে প্রতিবন্ধকতার কথা বলা হলেও আমাদের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনার দিকে যথেষ্ট নজর দিতে হবে বা যে পদক্ষেপগুলো রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত হলেও বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা সম্ভাবনার মুখ  দেখবে। সম্ভাবনার কথা বলতে গেলেই প্রথমে ন্যাশন স্ট্যাট এর ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় যে মূল প্রতিবন্ধকতা তা হলো নিজ মাতৃভাষায় এবং নিজ নিজ সামাজিক সাংস্কৃতিক শিক্ষা নিশ্চিত না করা যার ফলে সম্ভাবনা দেখতে হলে রাষ্ট্রকে ন্যাশনাল টাস্কফোর্স গঠন করে এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

পাশাপাশি ২০১০র শিক্ষানীতিতে যে সুবিধার কথা বলা হয়েছে সেই সুবিধা গুলোকে অধিকারে রূপান্তর করতে হতে। দেশে যে ভিন্ন ভিন্ন ধারার শিক্ষানীতি চালু রয়েছে এই ব্যবস্থাকে ভেঙে একই ধারার শিক্ষা নীতিতে রূপান্তর করতে হবে। চাকরি, বাজার মুখী বা পণ্য মুখী শিক্ষা না করে মানবিক এবং মৌলিক শিক্ষায় রূপান্তর করতে, আদিবাসী শিক্ষার্থীর শিক্ষা নিশ্চিত করতে আলাদা গবেষণা প্রয়োজন, এদিকে রাষ্ট্রকে কড়া নজর দিতে হবে। সাথে শিক্ষাখাতে আর্থিক বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি সঠিক খাতে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক: প্রত্যয় নাফাক, সাবেক সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন, চবি সংসদ। 

পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেন স্মৃতিরেখা চাকমা

পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেন স্মৃতিরেখা চাকমা

বয়ন শিল্পে অসাধারণ অবদানের জন্য ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেন স্মৃতিরেখা চাকমা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।

স্মৃতিরেখা চাকমা কাপড়ে পরিবেশবান্ধব উদ্ভিজ রঙিন সুতির সুতোকে ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি গ্রামীণ মহিলাদের বয়ন শিল্পে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য উজিয়া জাধা নামে একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান করেছেন।

তাঁর কাছে আসা প্রশিক্ষণার্থীদের তিনি বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার সুবিধা দিয়ে এবং এমনকি স্টাইপেন্ড দিয়েও বয়ন ও প্রাকৃতিক রঙের প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিচালনা করেন। যার ফলস্বরূপ তাঁর চারজন প্রশিক্ষণার্থীও জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

শ্রীমতি স্মৃতিরেখা চাকমা ১৯৬৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। মহিয়সী এ নারী শৈশবে তার দিদাকে ঐতিহ্যবাহী নাগা পদ্ধতি ব্যবহার করে কটি তাঁতে বুনতে দেখেছেন এবং এখন তিনি এই কাজে তরুণ প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৬৩ বছর।

জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন গাছ, লতাপাতা, বীজ, ফুল, ভেষজ, শেকড়, গাছের ছাল ইত্যাদি পরিবেশ-বান্ধব সামগ্রী দিয়ে সূতির সুতোকে রাঙানোর কাজে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি।

তাঁর কাজ ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকি বিদেশেও বিভিন্ন মন্দির ও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি তাঁর মর্যাদাপূর্ণ সৃষ্টির প্রদর্শনের জন্য ত্রিপুরা, দিল্লি, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও আসামে বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করেছেন। 

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: চেয়ারম্যান হলেন ৪ জন আদিবাসী প্রার্থী

উপজেলা চেয়ারম্যান আদিবাসী

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চারজন আদিবাসী প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল বুধবার (৮ মে) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোট গণনা শেষে রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

এতে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সদর উপজেলা, বরকল উপজেলা, জুরাছড়ি উপজেলা এবং ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান হিসেবে আদিবাসী প্রার্থী বিজয়ী হন।  

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দোয়াত কলম প্রতীকের অন্নসাধন চাকমা বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি সর্বমোট ভোট পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৮৫। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট বিপ্লব চাকমা উট প্রতীকে পেয়েছেন ১০ হাজার ২৯ ভোট।

বরকল উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন দোয়াত কলমের প্রার্থী বিধান চাকমা। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ৩২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা সন্তোষ কুমার চাকমা আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৭৭ ভোট।

জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা আনারস মার্কায় ৪ হাজার ৭৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী সুরেশ চাকমা দোয়াত কলম মার্কায় পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৩০ ভোট।

আনারস প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ডেভিড রানা চিসিম। তিনি পেয়েছেন ২৮ হাজার ৬২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আসাদুজ্জামান আকন্দ সাগর ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২১ হাজার ৩৪৮ ভোট। 

‘শেরপুরে চিহ্নিত গোষ্ঠী আদিবাসীদের হামলা করে লুটপাট করছে’


বগুড়ার শেরপুরে কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী আদিবাসীদের উপর হামলা করে লুটপাট করছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। আদিবাসীদের জান মালের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে শেরপুর উপজেলা আদিবাসী সমন্বয় কমিটি। আজ বুধবার সকালে পৌর শহরের পৌর শিশুপার্কে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমন্বয় কমিটির সভাপতি সন্তোষ সিং বাবু। তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা আদিবাসীরা দেড়শ বছরের অধিক সময় ধরে বসবাস করছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কৃষি ও মজুর খেটে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু আপনারা লক্ষ্য করেছেন অনেক দিন ধরেই আমাদের উপর চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি, গোষ্ঠী হামলা করে লুটপাট করছে।

২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আদিবাসীদের ওপর ২০টির বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, আবাদি জমি ও পুকুর দখল, শ্মশান ও কালী মন্দির ভাঙচুর এবং শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এসব নিয়ে এ পর্যন্ত শেরপুর থানা-পুলিশের কাছে অন্তত ২০টি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তিনটি অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করলেও পুলিশ কাউকে আটক করেনি।

একই ব্যক্তিরা গত ৬ মার্চ আদিবাসী নেতা ও ভবানীপুরের ইউপি সদস্য সন্তোষ কুমার সরকারের বাড়িতে প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে হামলা চালিয়ে ৯ বিষা পুকুরের মাছ লুটে নেয়। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও দুই মাস ধরে তিনি ঘর ছাড়া। এর মধ্যেই গত ২ মে তার জমি থেকে সশস্ত্র অবস্থায় ধান কেটে নেওয়া হয়েছে। থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমাদের অভিযোগ গুলোতে কয়েকজন ব্যক্তির নাম বার বার উল্লেখ করা হচ্ছে কিন্তু তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়েকটি দাবি জানানো হয়। দাবি সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আদিবাসীদের উপর হামলা ও সম্পদ লুটপাটকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার কর, আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মালা প্রত্যাহার কর, জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে, ২০১৮ সালের গঠিত তদন্ত কমিটির চিহ্নিত খাস জমি, পুকুর ও দেবত্তোর সম্পত্তি আদিবাসীদের বন্দোবস্ত দিতে হবে।

দাবি আদায়ের জন্য আগামী ১৩ মে সোমবার সকাল ১১ টায় শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে উপজেলার আদিবাসীরা। 

© all rights reserved - Janajatir Kantho