ব্যাঙের ছাতার মতো মান্দি ব্যান্ড দল জন্মাচ্ছে: টগর দ্রং

গারো শিল্পী

হার্টথ্রব সলো সিঙ্গার টগর দ্রং। শুরুতে বাংলায় গান করলেও স্বজাত্যবোধে গারো ভাষায় গান করেন। মিডিয়ার অন্তরালে থাকা প্রচার বিমুখ সদা হাস্যোজ্জ্বল দিলখোলা এই মানুষটি নিজ গন্ডির মধ্যে থাকতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন। জীবন যাপনে আছে যথেষ্ঠ পরিমিতি। বন্ধ পরিজন মহলে সুনাম আছে, তিনি বেশ আড্ডাবাজ। আড্ডায় যেকোন সময় অসময় নতুন কিছু বলে সঙ্গীদের চমকে দিতে পারেন। আচমকায় সবাই হো হো করে হেসে উঠেন।

প্রাইমারী পড়াকালীন সময় থেকেই গানের সঙ্গে সংসার তাঁর। স্কুল প্রতিযোগিতা, উপজেলা, জেলা, জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জিতেছেন পুরস্কার। পুরস্কারের কথা বলতেই ফাইল থেকে ৩১টি গানের সার্টিফিকেট বের করে দেখালেন। জানালেন, বাড়িতে আরো আছে অযত্নে অবহেলায়।

সম্প্রতি জনপ্রিয় এই শিল্পীর সাথে গারোদের গানের জগতে এগিয়ে চলা, ব্যান্ড দলগুলোর জন্ম মৃত্যু, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জনজাতির কন্ঠ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক উন্নয়ন ডি. শিরার সাথে আলাপ হল। আলাপে অকপটে জানালেন নিজের কথা, করলেন শিল্পী-ব্যান্ড দলগুলোর মান মূল্যায়ন।

জনজাতির কন্ঠ: কেমন আছেন?

টগর দ্রং: ভালো।

জনজাতি: ইদানিং মান্দি কমিউনিটির মধ্যে অনেকগুলো ব্যান্ড দল দেখতে পাচ্ছি। শিল্পীর দৃষ্টিতে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

দ্রং: ব্যাঙের ছাতার মতো মান্দি ব্যান্ড দল জন্মাচ্ছে। এর নেগেটিভ পজেটিভ উভয় দিক আছে। অনেকে শখের বশে, দেখাদেখি থেকে আবার অনেকে প্রতিযোগিতা থেকে ব্যান্ড দল তৈরী করছে। গানের প্রয়োজনে ব্যান্ড দল তৈরী হচ্ছে না। দেখুন, সব প্রতিযোগিতা পজেটিভ ফলাফল বয়ে আনে না। আপনি যে কাজটা পারেন না বা করার দক্ষতা নেই, সেই কাজে লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মান্দিদের অনেক ব্যান্ড দল আছে, যাদের ফাউন্ডেশন নাই। সঙ্গীত জগতে কাজ করতে হলে স্বরগম জানতে হবে। যা অনেকেই জানে না। অনেকে পুংতা গান গেয়েই বেশি পরিচিত। তাই বলে তাঁদেরকে প্রতিষ্ঠিত বলা যাবে না। মোল্লার দৌঁড় যেমন মসজিদ পর্যন্তই তাদের দৌঁড়ও ঐ পর্যন্তই।

জনজাতি: তারপরও অনেকে এগিয়ে যাচ্ছে..

দ্রং: হ্যাঁ। অনেকেই ভালো গাচ্ছে। এগিয়েও যাচ্ছে। তবে তাঁরা কতটুকু এগিয়ে যাবে সেখানে আমি সন্দিহান।

জনজাতি: আপনার গানের শুরুর গল্পটা..

দ্রং: প্রাইমারী পড়াকালীন সময়েই গান গাওয়া শুরু করি। বাবা একটি হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছিলেন। সাধের হারমোনিয়ামটি গণ ব্যবহারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছোটকালে ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটে নজরুল সঙ্গীতে অপ্রতিরোধ্য ছিলাম। এমন দিন গেছে গাইলেই প্রথম হতাম! বাংলা গানোদে বাঙ্গাল রাঙবা আঙখোদে হামজা..(হাসি)। কিন্তু ত্রিশালে গাইতে এসে দ্বিতীয় তৃতীয় হতাম। ত্রিশালে সঙ্গীতের মান ভালো ছিলো।

জনজাতি: শুরুতে আপনি বাংলা গান গাইতেন। মান্দি গান গাওয়া শুরু করলেন কবে থেকে?

দ্রং: হ্যাঁ। আগে বাংলা গান (নজরুল ও রবীন্দ্র) গাইতাম। পরে নিজ জাতির লোকদের সাথে গভীর ভাবে মিশে মান্দি গান গাওয়া শুরু করি।

জনজাতি: মান্দি গান গাওয়ার শুরুর দিককার কথা শুনতে চাই..

দ্রং: ২০০৫/৬ সালের কথা। তখন আমি মান্দি অধ্যুষিত কালচাঁদপুরে আসি। এখানে এসে দেখতে পাই মান্দিরা নিজ ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষার জন্যে সংগ্রাম করছে। মান্দি ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি চর্চায় বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছে। এখানে এসে মান্দি গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা পাই। এখানে আচিক স্কুল, আচিক পত্রিকা চলতো। অবলা পাথাং (আচিক স্কুলের কর্ণধার), অর্পন যেত্রা (আচিক পত্রিকার সম্পাদক), অনিত্য মানখিন, শুভজিৎ সাংমা (ঢাকা ওয়ানগালার সাবেক নকমা)-র মতোন অনেক সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ হয়। এখানে এসেই উপলব্ধি করি কেন মান্দি গান গাবো না? জাতিত্ববোধ থেকেই মূলত মান্দি গান গাওয়া শুরু করি।

জনজাতি: এফ মাইনর নিয়ে আপনার মূল্যায়ন।

দ্রং: এফ মাইনর নিয়ে আমি আশাবাদী। কারণ তাঁরা সবাই শিক্ষানবিশ। অতি অল্প সময়ে তাঁরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বলা চলে তাঁরা এখন প্রতিষ্ঠিত। ব্যান্ডের ভোকাল পিংকি চিরান পড়াশুনা করছেন সঙ্গীত নিয়ে, কাজেই প্রত্যাশা অবশ্যই আছে। মিডিয়ার দিক থেকেও তাঁরা (এফ মাইনর) এগিয়ে আছে। প্রথম নারী ব্যান্ড দল বলেই কিনা সেই বিতর্কে যেতে চাই না।

জনজাতি: আপনি মূলত একক গান করেন। ব্যান্ড পার্টির এই যুগে কেন কোন ব্যান্ড দলে নন কিংবা যদি বলি কেন ব্যান্ড দল গড়ে তুলেননি?

দ্রং: সত্যি বলতে আমি আমার যুগোপযোগী পার্টনার পাইনি। কেবল ভালো ভোকাল, ভালো  ড্রামার, ভালো গিটারিস্ট মিলেই ব্যান্ড দল গঠন করা যায় না। সবার মাঝে ভালো বোঝাপড়া থাকাটা জরুরি। রাজনীতিতে যেমন আদর্শের মূল্য আছে, তেমনি ব্যান্ড দলেও আদর্শের যোগসূত্র থাকা জরুরি। আদর্শ ব্যতীত দল গঠিত হতে পারে না। হলেও ভেঙে যাবে। যেমন ‘রে রে’ (মান্দি ব্যান্ড) বারবার ভেঙে যাচ্ছে।

জনজাতি: প্রসঙ্গক্রমে ‘রে রে’ যেহেতু আলাপে উঠেই এল, তাদেরকে নিয়ে আপনার কী মূল্যায়ন?

দ্রং: ওদের উপর জনগণের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু তাঁরা যেভাবে এগোচ্ছে তাতে আমি আশার আলো দেখি না। তাদের নতুন গান আসছে, স্বাগত জানাই। তাদের লিরিকের দিকে মনোযোগ দেয়া দরকার বলে মনে করি। কারণ অনেক গান অমর হয় সুরে, আবার অনেক গান অমর হয় লিরিকে। লিরিক ও সুর দুটোতেই তাদের মনোযোগ দেয়া দরকার।

জনজাতি: ব্যান্ড দলে না থেকে একক ভাবে গাইছেন। শ্রোতা মহলে সাড়া কেমন?

দ্রং: একসময় ব্যান্ড দলের চেয়ে সলো সিঙ্গারদের চাহিদা বেশি ছিল। তখন ব্যান্ড দল ছিল কম। দিন বদলে গেছে। এখন সলো সিঙ্গাররা ভাত পায় না।

জনজাতি: মান্দি ব্যান্ড দলগুলোর মধ্যে কোন তিনটিকে এগিয়ে রাখবেন?

দ্রং: এফ মাইনর, সাক্রামেন্ট, রে রে। তবে জুমাং, ক্রেমলিন তাঁরাও ভালো করছে।

জনজাতি: আপনার বাল্যকালে দেখা মান্দি ব্যান্ড দল?

দ্রং: থাংস্রেক ব্যান্ড। তাঁরা মাইকে কনসার্ট করতো। তাদেরকে সাউন্ড সিস্টেম ছাড়াই মাইকে স্টেজ পারফর্ম করতে দেখেছি। এমনও হয়েছে ভোকাল একা মাইকে গান গেয়ে যাচ্ছে অন্যদের সাউন্ড কাভার হচ্ছে না! তবে ঐ সময়ে সমকালীন ইন্সট্র্রুমেন্টগুলো থাংস্রেক ব্যান্ড  ব্যবহার করতো। যা অবাক করার মতো।

জনজাতি: তিনটি প্রিয় মান্দি গান..

দ্রং: জন থুসিনের দিং দিং আপফাদে দিং, হাই সারি রি নামা, কবি মতেন্দ্র মানখিন লিখিত বাঙ জাবুছিম দুখনি সাগাল বালজ্র্রুয়ে। এই গানগুলো গারোদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে। এখনো দিয়ে যাচ্ছে। এই গানগুলো অমর।

জনজাতি: মান্দিদের মধ্যে গানে যাদু দা (যাদু রিছিল)-র নাম ডাক বেশ আছে। আপনার চোখে যাদু রিছিল..

দ্রং: (খানিকক্ষণ চুপ থেকে) যাদু ভালো কাজ করছে। এগিয়ে যাচ্ছে, আরো এগিয়ে যাক। তবে এজ অ্যা সলো সিঙ্গার স্টেজ পারফর্ম করতে হবে।

জনজাতি: আপনার অ্যালবাম সংখ্যা?

দ্রং: দুটি। মিক্সড অ্যালবাম। মাইখো চাইচিয়া, ঢাকা ওয়ানগালা স্পেশাল-২০১৮। সামনে একক অ্যালবাম করার ইচ্ছা আছে।

জনজাতি: একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন। পারিবারিক জীবনে আপনারা দুই ভাই, দুই বোন। আপনার বোনেরা এখনো সারি (গারো রীতিতে ভাইয়ের বউকে সারি বলে) থেকে বঞ্চিত..

দ্রং: (কথা শেষ করতে না দিয়েই) সারি তো এভেলেভেল (হাসি)।

জনজাতি: আপনার মূল্যবান সময় খরচ করে আলাপ পাড়ার জন্যে ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা।

দ্রং: আপনাকেও ধন্যবাদ।

ছেঁটে দেওয়া চা গাছের মতোই জীবন

চা শ্রমিক

চা শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এই শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদের জীবন যেন ছেঁটে দেওয়া চা গাছের মতোই। বঞ্চনা, বৈষম্যে কাটে তাদের নিত্য জীবন। সাধারণত চা গাছ ছেঁটে ছেঁটে ২৬ ইঞ্চির বেশি বাড়তে দেয়া হয় না। চা শ্রমিকদের জীবন চা গাছের মতোই, লেবার লাইনের ২২২ বর্গফুটের একটা কুঁড়ে ঘরে বন্দি। মধ্যযুগের ভূমিদাসের মতোই চা মালিকের বাগানের সঙ্গে বাধা তার নিয়তি।

সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট বলছে, চা বাগান ও সংলগ্ন বস্তি এলাকায় বসবাসকারী নারী শ্রমিকদের জীবন কাটছে বঞ্চনা আর বৈষম্যে। অর্থ সংকটে অনেকেই ঝুঁকছেন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। এর মাঝে বাগানে কাজ পাচ্ছেন না এমন নারী শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি। এ অবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও তা এখনও বাস্তবে রূপ পায়নি।

চা বাগান এবং সংলগ্ন এলাকার বস্তিতে বসবাসকারী নারী শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজের পাশাপাশি বিনোদন আর বিশ্রামের অধিকার থাকলেও তারা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। শ্রমিকদের অনেকের দাবি, চা গাছ ছেঁটে যেমন নির্ধারিত মাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

নারী শ্রমিকরা জানান, ঘুম থেকে উঠেই নাশতা সেরে কাজে বের হন আর বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যা নাগাদ। এরপর পরিবারের কাজে ব্যস্ত সময় কাটান। বাগানে যাদের কাজ নেই, তারা বিভিন্ন সাইটে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। কেউ কেউ আবার গাছ কাটাসহ অন্যের বাড়িতেও কাজ করেন। এভাবেই কাটে তাদের দিন।

বস্তির অতিদরিদ্র ও চা শিল্পে শ্রমজীবীদের মধ্যে এক বিরাট অংশ রয়েছে বেকার। তাদের মধ্যে যুবতী ও মধ্যবয়সী নারীও রয়েছেন। জীবিকার তাগিদে চা শিল্পের বাইরে কনস্ট্রাকশন, মাটি কাটা, মাথায় টুকরি নিয়ে ইট, বালু ও পাথর বহন করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত অনেকেই। তবে কঠিন কাজে নিয়োজিত থাকলেও মজুরি বৈষম্যের কারণে তাদের অবস্থার উন্নতি নেই।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ঝড়ে ঘরের চালা উড়ে গেলে মালিকের অনুমতি ছাড়া মেরামত করা যায় না। বয়সের ভারে ন্যুব্জ শ্রমিকরা অসহায়ত্ব আর উপোসে মৃত্যুর প্রহর গুনলেও নেই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা। প্রসূতি মায়েরা চিকিৎসার অভাবে, অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত অবস্থায় সন্তান জন্ম দেন। ওই কুঁড়েঘরটিই তাদের সন্তান প্রসবের স্থান।

তা ছাড়া বাগানের কিছু ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলেও চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। চা বাগানে কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা বর্তমানে দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক বেকার নারী শ্রমিক বস্তি কিংবা শহরের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন, মাটি কাটা, নার্সারি, কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

মৌলভীবাজারসহ দেশের প্রায় ১৬৫টি চা বাগানের শ্রমিকদের চিত্র মোটামুটি একই। প্রায় ২০০ বছর ধরে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে বংশ পরম্পরায় কাজ করছেন চা শ্রমিকরা। তাদের শ্রমে এই শিল্পের উন্নয়ন হলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা রাম ভজন কৈরী জানান, চা শ্রমিকরা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ দেশে বাস করছেন। অনেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে, তবে চা শ্রমিকরা আজও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। মজুরি বোর্ড চা বাগানের শ্রমিকদের প্রতি অবিচার করছে। নারী শ্রমিকরা কর্মস্থলে উপযুক্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

 

তিতুমীর কলেজের আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন (তালিকাসহ)

আদিবাসী ছাত্র সংগঠন
সভাপতি থুইচিং প্রু মারমা, সাধারণ সম্পাদক বিংশ দিব্রা (বাঁ দিক থেকে)

সরকারি তিতুমীর কলেজের আদিবাসী ছাত্র সংগঠন-এর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার (৬ মে), তৃতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করা হয়।

কাউন্সিলে আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মনিষা ম্রং ও সাধারণ সম্পাদক থুইচিংপ্রু মারমার সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বাংলাদেশের আদিবাসীদের ইতিহাস তুলে ধরেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সহ-সভাপতি যোহন দিও সংগঠনের ইতিহাস তুলে ধরেন। সাধারণ সম্পাদক থুইচিং প্রু মারমা বিগত কমিটির সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প তুলে ধরেন।

এছাড়াও সংগঠনটির উপদেষ্টা অভিভাবক কল্যাণ মারমা বক্তব্য রাখেন। তিনি সংগঠনকে একতার সাথে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকার আহবান জানান।

তৃতীয় কাউন্সিলে সভাপতি হিসেবে থুইচিংপ্রু মারমা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিংশ দিব্রা ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ইমেজ চাকমা নির্বাচিত হন।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা-


গঠিত কমিটির মেয়াদ এক বছর। 

 

সাজেকে গুলিবিদ্ধ সেই ত্রিপুরা শিশু মারা গেছে

ত্রিপুরা শিশু


রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ শিশু রোমিও ত্রিপুরা (৭) মারা গেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম গন্ডছড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে রোমিও ত্রিপুরা তলপেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টায় সে মারা যায়।

রোমিও ত্রিপুরার বাবা ফবেন ত্রিপুরা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে রাত ১১ টায় চিকিৎসকরা তাকে পিআইসিইউতে রেফার করে। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিআইসিইউতে কোনো সিট খালি না থাকায় তাকে সেখানে থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ডেন্টাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক লাইফ সাপোর্ট দিতে বলে। কিন্তু ডেন্টাল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট না থাকায় সেখানে থেকে এশিয়ান হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই ছেলেটা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আক্তার শিশু রোমিও ত্রিপুরার পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 

মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: একই পদে লড়ছেন দুই গারো নারী

যষ্ঠিনা নকরেক ও সন্ধ্যা সিমসাং (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের শালবন পরিবেষ্টিত মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একই পদে লড়ছেন গারো জনগোষ্ঠীর দুইজন নারী। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুইজন হলেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক ও সন্ধ্যা সিমসাং। দুইজনেই মধুপুর গড় এলাকার বেরিবাইদ ইউনিয়নের বাসিন্দা।

একই পদে গারো জনগোষ্ঠীর দুইজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। সেই সঙ্গে ভাগ হয়ে গেছেন ওই সব এলাকার ভোটাররা।

মধুপুর পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মধুপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ২১৮ জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার আদিবাসী ভোটার রয়েছেন।

জানা গেছে, মধুপুর গড় এলাকার অরণখোলা, বেরিবাইদ, কুড়াগাছা, ফুলবাগচালা, শোলাকুড়া ও আউশনাড়া ইউনিয়নে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। তাঁদের মধ্য থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন জমে উঠেছে এসব এলাকায়। দুই প্রার্থীই নিজ জাতির ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা ও সমর্থনের জন্য যাচ্ছেন। গারো জাতিগোষ্ঠীর ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

মধুপুর অঞ্চলের প্রবীন আদিবাসী নেতা অজয় এ মৃ বলেন, আদিবাসীদের মধ্য থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় গারোদের ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে, যা উভয় প্রার্থীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এর আগে যষ্ঠিনা নকরেক ২০০৯ সালে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সন্ধ্যা সিমসাং ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা যাওয়া গারো নেতা চলেশ রিছিলের স্ত্রী। তিনি প্রথমবারের মতো প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে, যষ্টিনা নকরেক লড়ছেন ফুটবল প্রতীক নিয়ে।

 

সুস্থ জীবন পেতে চায় আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে

আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নের আংড়া গ্রামের আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে। জন্মের পর থেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে এক চোখ হারায় সে। শুধু তাই নয়, কপাল ও চোখ জুড়ে বেরিয়েছে বিশাল একটি টিউমার।

লিংকনের বাবা দিনমজুর কর্নেলিউস বাস্কে জানান, জন্মের সময় আমার ছেলে ভালোই ছিল। দেড় বছর বয়সে বাম চোখে ঘা হয় তার।

চোখ দিয়ে সবসময় পানি পরত। চোখ ফুলে যায়। ব্যথা হওয়ার কারণে শিশু বয়সে লিংকন খুব কান্নাকাটি করত। এক মিশনারী ফাদার তার নিজের অর্থে ডাক্তারের পরামর্শে চোখ অপসারণ করান। পরবর্তীতে এক চোখ নিয়ে ভালোই ছিলো সে। কিন্ত ৪ বছর বয়সে ওই চোখের উপর ও কপালে ছোট-ছোট টিউমার বের হয়।

লিংকনের পরিবার জানায়, গ্রামের স্কুলে লিংকনকে ভর্তি করে দেওয়া হলেও টিউমার হওয়ায় লজ্জায় সে পড়ালেখা বন্ধ করে সর্বক্ষণ বাড়িতে শুয়ে বসে থাকত। টিউমারগুলো অপারেশনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিলে ডাক্তার বলেন, অল্প বয়সে অপারেশন না করে বয়স বেশি হলে ভালো হবে।

এরপর ছেলের বয়স বেশি হলে ২০১৭ সালের দিকে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের খরচে ঢাকায় অপারেশনে টিউমারগুলো কেটে দেয়। কয়েকদিন পর আবার চোখের উপর কপাল জুড়ে টিউমার বের হয়। সংস্থাটির সহায়তায় একই হাসপাতালে পর পর ৪বার অপারেশন করা হয়। তবে ডাক্তার বলেছিলেন পঞ্চম বার অপারেশন করলে নতুন আর টিউমার বের হবে না। কিন্ত পঞ্চম বার অপারেশনের আগে পাঁচবিবি থেকে ওয়ার্ল্ড ভিশন অফিস বন্ধ করে দেয়।

এরপর টাকার অভাবে আর অপারেশন করানো হয়নি জানিয়ে লিংকন জানান, ছোটবেলা থেকেই কষ্টের জীবনযাপন কাটাচ্ছি। এমন অবস্থায় রোদে থাকতে পারি না। চোখ সর্বক্ষণ প্রচন্ড ব্যথা করে। বাবা-মা এখন বেঁচে আছেন। তারা খাওয়াচ্ছেন।

লিংকন বাস্কে আরো বলেন, সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহায়তায় আমি নতুন সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চাই।

লিংকনের বাবার বিকাশ নম্বর ০১৭৫০-১২৫১৩৯ 

রাঙ্গামাটিতে আটক তিন ছাত্রনেতার মুক্তির দাবি পিসিপি’র


রাঙ্গামাটির জুরাছড়িতে সেনাসদস্য কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) তিন ছাত্রনেতাকে আটকের প্রতিবাদ ও দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। আজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পিসিপি এ দাবি জানায়।

পিসিপি’র তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্তর চাকমা প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৪ মে জুরাছড়ি উপজেলা সদরস্থ যক্ষা বাজার সেনাক্যাম্পের সেনাসদস্য কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের তিন ছাত্রনেতাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়। এ ঘটনায় পিসিপি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে আটককৃত ছাত্রনেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।

পিসিপির জুরাছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক রুপম চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুরেন চাকমা ও তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রনি চাকমা আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুরেশ কুমার চাকমার নির্বাচনী প্রচারণার কার্যালয় থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় সেনা গোয়েন্দা রবিউল সুরেন চাকমার হাতে নিষিদ্ধ ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকানো একটি মানিব্যাগ দেয় এবং বলে সামনে আমাদের লোক আছে তার হাতে দিয়ে দিও।

তারপর কিছুদূর যেতে না যেতে সেনাবাহিনীর একটি দল জুরাছড়ি সদর এলাকার ধামাইপাড়া সেতু থেকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে তাকে যক্ষা বাজার সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর একই চেকপোস্ট থেকে নির্বাচন থেকে বাড়ি ফেরার পথে রূপম চাকমা ও রনি চাকমাকে আটক করে সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়।

পিসিপি’র অভিযোগ, সেনাসদস্যরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ছাত্রনেতাদের ইয়াবা ট্যাবলেট ও চাঁদার রশিদ গুঁজে দিয়ে ছবি তুলে গতকাল জুরাছড়ি থানায় সোপর্দ করেছে। জুরাছড়ি থানা তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইন ও চাঁদাবাজির আইনে মামলা দিয়েছে।

সেনাবাহিনী কর্তৃক তিন ছাত্রনেতাকে অন্যায়ভাবে আটক ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে পিসিপি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। একইসাথে আটককৃত তিন ছাত্রনেতার দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। 

© all rights reserved - Janajatir Kantho