সাজেকে গুলিবিদ্ধ সেই ত্রিপুরা শিশু মারা গেছে

ত্রিপুরা শিশু


রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ শিশু রোমিও ত্রিপুরা (৭) মারা গেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম গন্ডছড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে রোমিও ত্রিপুরা তলপেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টায় সে মারা যায়।

রোমিও ত্রিপুরার বাবা ফবেন ত্রিপুরা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে রাত ১১ টায় চিকিৎসকরা তাকে পিআইসিইউতে রেফার করে। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিআইসিইউতে কোনো সিট খালি না থাকায় তাকে সেখানে থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ডেন্টাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক লাইফ সাপোর্ট দিতে বলে। কিন্তু ডেন্টাল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট না থাকায় সেখানে থেকে এশিয়ান হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই ছেলেটা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আক্তার শিশু রোমিও ত্রিপুরার পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 

মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: একই পদে লড়ছেন দুই গারো নারী

যষ্ঠিনা নকরেক ও সন্ধ্যা সিমসাং (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের শালবন পরিবেষ্টিত মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একই পদে লড়ছেন গারো জনগোষ্ঠীর দুইজন নারী। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুইজন হলেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক ও সন্ধ্যা সিমসাং। দুইজনেই মধুপুর গড় এলাকার বেরিবাইদ ইউনিয়নের বাসিন্দা।

একই পদে গারো জনগোষ্ঠীর দুইজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। সেই সঙ্গে ভাগ হয়ে গেছেন ওই সব এলাকার ভোটাররা।

মধুপুর পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মধুপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ২১৮ জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার আদিবাসী ভোটার রয়েছেন।

জানা গেছে, মধুপুর গড় এলাকার অরণখোলা, বেরিবাইদ, কুড়াগাছা, ফুলবাগচালা, শোলাকুড়া ও আউশনাড়া ইউনিয়নে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। তাঁদের মধ্য থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন জমে উঠেছে এসব এলাকায়। দুই প্রার্থীই নিজ জাতির ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা ও সমর্থনের জন্য যাচ্ছেন। গারো জাতিগোষ্ঠীর ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

মধুপুর অঞ্চলের প্রবীন আদিবাসী নেতা অজয় এ মৃ বলেন, আদিবাসীদের মধ্য থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় গারোদের ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে, যা উভয় প্রার্থীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এর আগে যষ্ঠিনা নকরেক ২০০৯ সালে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সন্ধ্যা সিমসাং ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা যাওয়া গারো নেতা চলেশ রিছিলের স্ত্রী। তিনি প্রথমবারের মতো প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে, যষ্টিনা নকরেক লড়ছেন ফুটবল প্রতীক নিয়ে।

 

সুস্থ জীবন পেতে চায় আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে

আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নের আংড়া গ্রামের আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে। জন্মের পর থেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে এক চোখ হারায় সে। শুধু তাই নয়, কপাল ও চোখ জুড়ে বেরিয়েছে বিশাল একটি টিউমার।

লিংকনের বাবা দিনমজুর কর্নেলিউস বাস্কে জানান, জন্মের সময় আমার ছেলে ভালোই ছিল। দেড় বছর বয়সে বাম চোখে ঘা হয় তার।

চোখ দিয়ে সবসময় পানি পরত। চোখ ফুলে যায়। ব্যথা হওয়ার কারণে শিশু বয়সে লিংকন খুব কান্নাকাটি করত। এক মিশনারী ফাদার তার নিজের অর্থে ডাক্তারের পরামর্শে চোখ অপসারণ করান। পরবর্তীতে এক চোখ নিয়ে ভালোই ছিলো সে। কিন্ত ৪ বছর বয়সে ওই চোখের উপর ও কপালে ছোট-ছোট টিউমার বের হয়।

লিংকনের পরিবার জানায়, গ্রামের স্কুলে লিংকনকে ভর্তি করে দেওয়া হলেও টিউমার হওয়ায় লজ্জায় সে পড়ালেখা বন্ধ করে সর্বক্ষণ বাড়িতে শুয়ে বসে থাকত। টিউমারগুলো অপারেশনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিলে ডাক্তার বলেন, অল্প বয়সে অপারেশন না করে বয়স বেশি হলে ভালো হবে।

এরপর ছেলের বয়স বেশি হলে ২০১৭ সালের দিকে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের খরচে ঢাকায় অপারেশনে টিউমারগুলো কেটে দেয়। কয়েকদিন পর আবার চোখের উপর কপাল জুড়ে টিউমার বের হয়। সংস্থাটির সহায়তায় একই হাসপাতালে পর পর ৪বার অপারেশন করা হয়। তবে ডাক্তার বলেছিলেন পঞ্চম বার অপারেশন করলে নতুন আর টিউমার বের হবে না। কিন্ত পঞ্চম বার অপারেশনের আগে পাঁচবিবি থেকে ওয়ার্ল্ড ভিশন অফিস বন্ধ করে দেয়।

এরপর টাকার অভাবে আর অপারেশন করানো হয়নি জানিয়ে লিংকন জানান, ছোটবেলা থেকেই কষ্টের জীবনযাপন কাটাচ্ছি। এমন অবস্থায় রোদে থাকতে পারি না। চোখ সর্বক্ষণ প্রচন্ড ব্যথা করে। বাবা-মা এখন বেঁচে আছেন। তারা খাওয়াচ্ছেন।

লিংকন বাস্কে আরো বলেন, সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহায়তায় আমি নতুন সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চাই।

লিংকনের বাবার বিকাশ নম্বর ০১৭৫০-১২৫১৩৯ 

রাঙ্গামাটিতে আটক তিন ছাত্রনেতার মুক্তির দাবি পিসিপি’র


রাঙ্গামাটির জুরাছড়িতে সেনাসদস্য কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) তিন ছাত্রনেতাকে আটকের প্রতিবাদ ও দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। আজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পিসিপি এ দাবি জানায়।

পিসিপি’র তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্তর চাকমা প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৪ মে জুরাছড়ি উপজেলা সদরস্থ যক্ষা বাজার সেনাক্যাম্পের সেনাসদস্য কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের তিন ছাত্রনেতাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়। এ ঘটনায় পিসিপি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে আটককৃত ছাত্রনেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।

পিসিপির জুরাছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক রুপম চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুরেন চাকমা ও তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রনি চাকমা আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুরেশ কুমার চাকমার নির্বাচনী প্রচারণার কার্যালয় থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় সেনা গোয়েন্দা রবিউল সুরেন চাকমার হাতে নিষিদ্ধ ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকানো একটি মানিব্যাগ দেয় এবং বলে সামনে আমাদের লোক আছে তার হাতে দিয়ে দিও।

তারপর কিছুদূর যেতে না যেতে সেনাবাহিনীর একটি দল জুরাছড়ি সদর এলাকার ধামাইপাড়া সেতু থেকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে তাকে যক্ষা বাজার সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর একই চেকপোস্ট থেকে নির্বাচন থেকে বাড়ি ফেরার পথে রূপম চাকমা ও রনি চাকমাকে আটক করে সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়।

পিসিপি’র অভিযোগ, সেনাসদস্যরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ছাত্রনেতাদের ইয়াবা ট্যাবলেট ও চাঁদার রশিদ গুঁজে দিয়ে ছবি তুলে গতকাল জুরাছড়ি থানায় সোপর্দ করেছে। জুরাছড়ি থানা তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইন ও চাঁদাবাজির আইনে মামলা দিয়েছে।

সেনাবাহিনী কর্তৃক তিন ছাত্রনেতাকে অন্যায়ভাবে আটক ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে পিসিপি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। একইসাথে আটককৃত তিন ছাত্রনেতার দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। 

কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে: পিসিপি

কল্পনা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পিসিপি

পাহাড়ি নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণে দায়েরকৃত মামলা খারিজ করে চিহ্নিত অপরাধীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আজ শনিবার (৪ মে), বিকাল ৫টায় ঢাকায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা এ কথা জানায়।

পিসিপির সভাপতি অঙ্কন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রূপসী চাকমা এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. হারুনুর রশিদ, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নুজিয়া হাসিন রাসা।

‘অপরাধীদের দায়মুক্তির প্রহসনমূলক রায় মানি না, বাতিল কর দাবি সম্বলিত স্লোগানে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর কালক্ষেপণ করে গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ রাঙামাটি জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা বেগম মুক্তার আদালত কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলাটি খারিজ করে দেন। এ রায়ের মাধ্যমে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস, নুরুল হক, সালেহ আহমেদ গংদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। প্রহসনমূলক এ রায় আমরা মানি না। আমরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি। 

পিসিপির নেতারা আদালত কর্তৃক মামলা খারিজের যে আদেশ দেয়া হয়েছে অবিলম্বে তা বাতিল করে কল্পনা অপহরণ ঘটনার পুনঃতদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।

এছাড়াও সমাবেশ থেকে বক্তারা মাইকেল চাকমাসহ গুম হওয়া সকল ব্যক্তিদের সন্ধানের দাবি জানান। 

‘কল্পনা চাকমার অপহরণ নিয়ে অনেকভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে দুর্বৃত্তরা’

কল্পনা চাকমার অপহরণ নিয়ে বিভ্রান্তি

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণ নিয়ে দুর্বৃত্তরা অনেকভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। বাঙালিদের মতো পাহাড়িরাও অনেকে গুজব খেকো, বিভ্রান্ত হয়। অপহরণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র করে। যারা চক্রান্তকারী এবং জনগণের শত্রু তারা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে নানাভাবে কাল্পনিক কাহিনী বানিয়ে মিথ্যাচার করে।

আজ শনিবার (৪ মে) কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি সদরে গণবিক্ষোভ ও বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীদের জুতাপেটা-কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচিতে পাহাড়ি নারী নেত্রীরা এসব কথা বলেন। পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত দুই নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ এ কর্মসূচি পালন করে।

সকাল ৯টার সময় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজার এলাকা থেকে ৩০০ জনের অধিক একটি দল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে অবস্থান নেয়। একই সময়ে রাঙামাটি-মহালছড়ি-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড়ের দিক থেকেও স্লোগান দিতে দিতে মিছিলকারীদের দল চেঙ্গী ব্রীজ দিয়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছায়।

দীঘিনালা-সাজেক থেকেও প্রতিবাদী নারীদের মিছিল খাগড়াছড়ি প্রধান সড়ক দিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে এসে মিলিত হয়। সেখানে এক বড় সমাবেশে রূপ নেয়।

মিছিলকারীরা অপরাধীদের প্রতীকী হিসেবে কুশপুত্তলিকাও বহন করে আনে। মিছিল ও সমাবেশ থেকে ‘অপরাধীদের রক্ষার রায় মানি না’, ‘অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচার চাই’, ‘বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীরা হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠটির কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা।

সভায় কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা নিয়ে প্রশাসনের গড়িমসিতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। সমাবেশের এক পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীদের প্রতিকৃতিতে জুতা পেটা ও কুশপুত্তলিকা দাহ করে।

সভাপতির বক্তব্যে কণিকা দেওয়ান বলেন, বিচারের নামে প্রহসনের রায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তথা নারী সমাজ মেনে নেবে না। কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, ‘কল্পনা তো সাধারণ ছিলেন না। তিনি সংগ্রামী আদর্শে বিশ্বাসী এক রাজনৈতিক কর্মী। কেন তিনি প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাবেন? ষড়যন্ত্রকারীরা বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এরকম গুজব রটায়। ফলে তাদের অপপ্রচারণায় আমাদের মধ্যেও দুর্বলচিত্ত কারোর কারোর দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল।’

নীতি চাকমা দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘কল্পনা অপহরণ মামলা যে খারিজ করে দেয়া হলো, এটি আমরা মানি না। কল্পনার সন্ধান করতে গিয়ে সমর-সুকেশ-মনোতোষ গুমের শিকার হয়েছে। রূপন আত্মাহুতি দিয়েছে; আমরা তাদের স্যালুট করি। যদি সাহসের সাথে আত্মবলিদানকারী কোনো সহযোদ্ধার নাম বলি, তাহলে প্রথম সারিতে রূপনের নাম আসবে ইতিহাসে। বীরত্বের সাথে বোনের সন্ধান করতে জীবন উৎসর্গ করেছে সে।

নারী নেত্রী নীতি চাকমা সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা কোন দেশে বসবাস করছি, স্বাধীন দেশে বাড়িতে ঘুমাতে পারি না। ১৯৯৬ সালে ১২ জুনে নিজের বাড়িতে বিনা অনুমতিতে একজন ঘুমন্ত মানুষকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে অপহরণ করে, এখনও তার কোনো হদিস নেই। প্রশাসন এতো টালবাহানা করে যে, তাঁর ভাইয়েরা মামলা করতে গেলে সাধারণ জিডি নিতেও প্রশাসন নিতে চায়নি।’

সমাবেশ থেকে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাহাড় থেকে সেনা-সেটেলার প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। 

গ্রীষ্মের তাপদাহে পাহাড়ে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

পাহাড়ে পানির অভাব

গ্রীষ্মের তাপদাহে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। অনাবৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে গেছে। পানির সংকটে হা-হুতাশ করছেন পার্বত্যবাসী।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের চিম্বুক সড়কের গেৎশিমানী বম পাড়ার বাসিন্দারা চার ফুটের মতো মাটি খুঁড়ে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। পাড়ার প্রায় ৮০টি পরিবার এ পানির উপর নির্ভরশীল। দৈনন্দিন নানা কাজের পাশাপাশি এ পানি পান করা হয়। একজনের পর আরেকজন সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করেন। কিন্তু এ পানি পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

তীব্র পানির সংকটে চিম্বুক পাহাড়ের কোরাং বাজার এলাকায় পানি বিতরণ করে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। এ এলাকায় ম্রো জনজাতির ২১০টি পরিবারের বসবাস রয়েছে।

পানির জন্য হাহাকারের এ চিত্র কেবল বান্দরবানেই নয়। অনাবৃষ্টির ফলে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক ছড়া শুকিয়ে গেছে। উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের শিলছড়ি ছড়া, ভেলাপ্পা পাড়া ছড়া এবং ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ডের জামাইছড়ি এলাকার ছড়াগুলো শুকিয়ে গেছে। ফলে সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন হাজারও এলাকাবাসী।

কিছু কিছু এলাকায় গভীর নলকুপ থাকলেও ছড়ায় পানি না থাকায় পানির স্তর নীচে নেমে গেছে। ফলে নলকূপেও পানি উঠছে না। এতে করে নদী হতে খাবার পানি এবং ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করে এলাকাবাসীকে নিত্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি কাজ সারতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, সাধারণত মার্চ থেকে জুনের আগপর্যন্ত ছড়াগুলোতে পানি থাকে না; থাকলেও অল্প। তবে চলতি বছরের অবস্থা ভয়াবহ। দাবদাহে ছড়াগুলো পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। এতে পাহাড় সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পানির জন্য এই হাহাকার নিয়ে পরিবেশকর্মীরা বলছেন, পাহাড়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও বন উজাড়ের কারণে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। যার কারণে পানির উৎসও কমে গেছে। এ ছাড়া পাহাড় থেকে পাথর তোলা ও পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ধ্বংস করায় দুর্গম এলাকাগুলোতে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। 

© all rights reserved - Janajatir Kantho