থুইনুই মারমা যোগ হচ্ছেন বাফুফের চুক্তিতে

থুইনুই মারমা

গেল সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ও সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স দেখিয়ে ৬ জন নারী ফুটবলার জায়গা করে নিচ্ছেন বাফুফের বেতনের আওতায়। বয়সভিত্তিক সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মাতিয়ে যারা বাফুফের বেতনের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন থুইনুই মারমা।

বাকি পাঁচজন হলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মোসাম্মাৎ সাগরিকা, মুনকি আক্তার এবং অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ইয়ারজান বেগম, অপির্তা বিশ্বাস, সুরভী আকন্দ প্রীতি।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির মেয়ে থুইনুই মারমা। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়িয়ে উঁচিয়ে ধরেছেন সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। ভুটান ও ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জালে বল পাঠিয়েছিলেন এ কিশোরী।

ঈদের ছুটি কাটিয়ে মেয়েরা ক্যাম্পে ফেরার পর নতুন ৬ জনের সঙ্গে চুক্তি করবে বাফুফে। আর পুরনো যারা থাকবেন তাদের চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নবায়ন হয়ে যাবে। তবে শুধু ক্যাটাগরি পরিবর্তন হবে কারো কারো।

জানা গেছে, নতুন চুক্তিতে মোট ৩৫ জন ফুটবলার যুক্ত হচ্ছেন। খেলোয়াড় বাড়লেও টাকার পরিমাণ থাকবে আগের মতোই। তবে ক্যাটাগরি বাড়বে। আগে তিন ক্যাটাগরিতে ৩০ জন ফুটবলার বেতন পেয়েছেন। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ বেতন ছিল ৫০ হাজার এবং ‘সি’ ক্যাটাগরিতে সর্বনিম্ন বেতন ১৫ হাজার টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরির বেতন ৩০ হাজার টাকা।

নতুন চুক্তিতে ক্যাটাগরি বাড়তে পারে জানিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, ‘আগে মোট যে টাকা দেওয়া হয়েছিল, এবারের পরিমাণ সে রকমই থাকছে। ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতন পাবেন মেয়েরা। ১০ এবং ২০ বা ২২ হাজার টাকার আরো দুটি ক্যাটাগরিও থাকতে পারে।’

এ ক্যাটাগরি অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা করে বেতন পাচ্ছেন সাবিনা খাতুন, রুপনা চাকমা, মাসুরা পারভীন, শামসুন্নাহার, শিউলি আজিম, নিলুফার ইয়াসমিন, আনাই মোগিনি, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, শামসুন্নাহার জুনিয়র, ঋতুপর্ণা চাকমা, সানজিদা আক্তার, মার্জিয়া, কৃঞ্চারানী সরকার, তহুরা খাতুন।

বি ক্যাটাগরি অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন সোহাগি কিসকু, স্বপ্না রানী, আফঈদা খন্দকার, শাহেদা আক্তার, স্বর্না রানী মন্ডল, আকলিমা খাতুন, সুরমা জান্নাত, সাথী বিশ্বাস, সাতসুশিমা সুমাইয়া, হালিমা আক্তার, কোহাতি কিসকু, নাসরিন আক্তার, ইতি খাতুন এবং ১৫ হাজার টাকা করে মিস রুপা ও আইরিন খাতুন।

তবে সামনের চুক্তিতে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে কারো কারো ক্যাটাগরি পরিবর্তন হবে। কেউ নিচের ক্যাটাগরিতে চলে যাবেন, কেউ ওপরে উঠবেন। 

লেবিসন স্কুর গল্পগ্রন্থ দলছুট’র মোড়ক উন্মোচন

গারো কবিতা

কবি ও লেখক লেবিসন স্কুর প্রথম গল্পগ্রন্থ দলছুট’র মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গারো বইমেলায় বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়।

মোড়ক উন্মোচনকালে তিউড়ি প্রকাশনীর কর্ণধার লেখক মাইবম সাধন, ভারত বিচিত্রার সম্পাদক অরবিন্দ চক্রবর্তী, লেখক পিটারসন কুবি, কবি মিঠুন রাকসাম, ঢাকা ওয়ানগালার নকমা শুভজিৎ সাংমা, কবি নিগূঢ় ম্রং, ছাত্রনেতা তেনজিং দিব্রা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বইটির লেখক লেবিসন স্কু বলেন, বইটিতে গারো আদিবাসীদের সমাজব্যবস্থা, লোক-ঐতিহ্য, গারো মিথ, জাতিত্ব হারানোর হাহাকার, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অসহায় প্রেম-দ্রোহের গল্প স্থান পেয়েছে।

যোগ করে তিনি আরো বলেন, আমি কবিতা লিখি, দলছুট আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ। জানিনা কেমন লিখেছি, মূল্যায়নের দায়িত্ব পাঠকের কাছেই তুলে দিলাম।

বইটি সম্পর্কে তরুণ কবি নিগূঢ় ম্রং জনজাতির কণ্ঠকে বলেন, গল্পগ্রন্থ দলছুট-এ গারো জীবনের নানা অভিজ্ঞতার গল্প স্থান পেয়েছে। আশা করছি বইটি পাঠকমহলে সমাদৃত হবে।  

বইটি রাজধানীর কালাচাঁদপুর শিশু মালঞ্চ স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী চলমান গারো বইমেলা থেকে সংগ্রহ করা যাবে। গত ২২ মার্চ থেকে চলা গারো বইমেলা আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।

গারো জাতিসত্তার অন্যতম কবি ও লেখক লেবিসন স্কুর বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার মধুকুড়া গ্রামে। লেখকের অন্যান্য গ্রন্থগুলো হল— মানুষ এক অদ্ভূত সাঁড়াশি অনুবাদক, প্রান্তিক স্বর, বুকের ডালে ঝুলিয়ে দেবো নরম নদী। 

বাসাবোতে বিনামূল্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ইফতার বিতরণ

বাসাবোতে বিনামূল্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ইফতার বিতরণ

ভিন্ন ধর্মের হয়েও মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন ইফতারের ব্যবস্থা করে সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেছেন রাজধানীর সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের ভিক্ষুরা। এই বিহারটির ভিক্ষুরা প্রতিবছর বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করেন।

বিহার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, যারা এখানে ইফতার নিতে আসেন তাদের অধিকাংশই দুস্থ নারী। এছাড়া অসহায় রোজাদারসহ রিকশাচালক ও দিনমজুররাও আসেন ইফতার নিতে। মানুষকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে মানুষে-মানুষে বন্ধুত্ব ও প্রীতি বাড়বে। একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে। সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্যই এই ইফতার বিতরণের উদ্যোগ।

ইফতার বিতরণের এই উদ্যোগটি ২০১৩ সালে শুরু হয়। মাঝে করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০২৩ সাল থেকে ফের চালু হয়।

এবারও পহেলা রোজা থেকেই সম্প্রীতির এই ইফতার কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে ইফতার বিতরণ করা হলেও দুপু্র থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে বৌদ্ধ মন্দিরের রান্নাঘর। যেখানে ইফতারির বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।

প্রায় দুইশো মানুষের জন্য মন্দিরটিতে প্রতিদিন ইফতার তৈরী হয়। যা দরিদ্র মুসলমানদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।

সময়ের আগেই মন্দিরটির গেটে লাইন ধরেন নারী, পুরুষ ও শিশুরা। সুশৃঙ্খলভাবে লাইন ধরে তারা ইফতার গ্রহণ করেন। ইফতারে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, আলুরচপ, খেজুর, জিলাপি ও পেয়াজু দেওয়া হয়।

বৌদ্ধ মন্দিরে ইফতার নিতে আসা একজন নারী জানান, আমরা দুঃখ কষ্টের জন্য এখানে-ওখানে কাজকর্ম করি। তারপরও আমাদের ঘরে ঠিকমতো পয়সা আসে না।

আরেক নারী জানান, বাচ্চাদের খাওয়াই, নিজেরাও খাই। খাওয়ার পর উপকার হয়। সওয়াব হয়, আমাদেরও সওয়াব হচ্ছে।

জানা গেছে, এই ইফতারের প্রচলন করেন শুদ্ধানন্দ মহাথেরো। তাঁর প্রয়াণের পর বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ এই ধারা অব্যাহত রাখে। মূলত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দাতারা এর অর্থের জোগান দেন।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বেদান্ত বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো বলেন, মানবতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানে মুসলিম, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আমরা বিবেচনা করি না। মানুষ হিসেবেই জানি। যারা দুস্থ, গরিব পবিত্র রমজান মাসে তাদের ইফতার দিই।

সবুজবাগে অবস্থিত বৌদ্ধ বিহারটি ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ২৮ জন আবাসিক বৌদ্ধ ভিক্ষু রয়েছেন। এছাড়াও ২৫০ জন এতিম শিশু বিহারটিতে থেকে পড়াশোনা করছেন। 

পাহাড়ের ওষুধ দোকানিরা মাথাব্যথায়ও দেন অ্যান্টিবায়োটিক

পাহাড়ের ওষুধ দোকানিরা মাথাব্যথায়ও দেন অ্যান্টিবায়োটিক

সামান্য মাথাব্যথার জন্যও অ্যান্টিবায়োটিক দেয় তিন পার্বত্য জেলার ওষুধের দোকানিরা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা সাময়িকী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল বিএমজে ওপেন–এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ ভাগ পাহাড়ি জনগোষ্ঠী চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন।

গবেষণা দলে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আদনান মান্নান, নাইম উদ্দিন হাসান চৌধুরী, তানভীর এহসান ও গবেষক কল্যাণ চাকমা; রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক গৌরব দেওয়ান; চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষক মাসুদ রানা; চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এইচ এম হামিদুল্লাহ; এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের অধ্যাপক নাজমুল আলম ও অয়ন সাহা; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমজাদ হোসেন ও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের জান্নাতুন উনাইজা।

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত পার্বত্য এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রবন্ধটি বিএমজে ওপেন–এ প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় জানানো হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, সাধারণ জ্বর, কাশি, সর্দি—এসব রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছে পাহাড়ি লোকজন। এজিথ্রোমাইসিন ও এমোক্সিসিলিন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এই জনগোষ্ঠীর ওপর অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতাও হারাবে।

গবেষণার জন্য রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ১ হাজার ৩৩৬ জন নারী ও পুরুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রতি দুজনের একজন অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেছেন।

এমন যথেচ্ছ ব্যবহারের পেছনে চারটি কারণ বের হয়ে এসেছে। ১. দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের দূরত্বের কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না যাওয়া, ২. চিকিৎসা খরচ নির্বাহে আর্থিক অসচ্ছলতা, ৩. নিকটস্থ ওষুধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কিংবা নিকট সম্পর্কের কারোর পরামর্শে কেনা এবং ৪. চিকিৎসকের পুরোনো ব্যবস্থাপত্র দেখে অ্যান্টিবায়োটিক কেনা।

গবেষক আদনান মান্নান বলেন, সমতলের তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের হার বেশি। এমনকি মাথাব্যথার জন্য প্রায় ১৪ ভাগ পাহাড়ি অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন। অথচ মাথাব্যথার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরাও দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই।

গবেষকেরা বলছেন, পাহাড়িরা দীর্ঘদিন ধরে নিজস্ব চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেছেন। অর্থাৎ বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করেছেন। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে নিজস্ব পদ্ধতি কাজ না–ও করতে পারে। এ ছাড়া এই অঞ্চলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘাটতি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও তদারকি বেশি প্রয়োজন। 

বিজু নিয়ে আলাপ করলেই লোগাংয়ের কথা মনে পড়ে

ইমতিয়াজ মাহমুদের লেখা

বিজু (বা বিঝু) উদযাপনে আমাদের সময় আড়ম্বর এতো হতো না। আমরা বাড়ী বাড়ী যেতাম, পাজন খেতাম। চৈত্র সংক্রান্তিতে সবজি একটা আমাদের ঘরেও হতো, অনুমান করি অনেক বাঙালীর ঘরেই হয়, কিন্তু রাঙামাটিতে চাকমা পাজন যেটা আমাদের ঘরের সবজিটা ঠিক সেটার মতো নয়। একশ রকমের উদ্ভিতজাত ফল, মুল, ফুল, লতা পাতা মিশিয়ে পাজন হয়। সবার ঘরে একরকম স্বাদ হয় না। উপাদান ভেদে বা রান্নার স্টাইলের কারণে একেক রকম স্বাদ হয় একেক ঘরে, কিন্তু সুস্বাদু হয় সবার ঘরেই। বছরের এই তারিখটা, এই দিনের আবহাওয়া এই সবকিছু মিলিয়ে পাজন আর আমাদের শরীরের মধ্যে যে সমীকরণ হয়, সেইটাই বৈশিষ্ট্য।

এখনকার মতো মেলা, কনসার্ট বা এইরকম অন্য কোন বিশেষ গণ-আয়োজন এগুলি হতো না। কারো কারো বাসায় পার্টির মতো হতো। আমাদের উদযাপন ছিল ঐ যে, সকলের ঘরে ঘরে গিয়ে খাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, কিঞ্চিৎ পান করা এইসব। শুধু যে পাজন খেতে দিতো লোকে সেটা নয়, সাথে নানাপ্রকার সুস্বাদু খাবারও থাকতো। ভারি কোন খাবার সাধারণত পরিবেশন করা হতো না।কোন কোন বাড়ীতে ভাত হয়তো দিত সাথে, পোলাও কোরমা এইসব খাবার বিজুর সাথে যুক্ত ছিল না। পাজনের মধ্যে অনিবার্যভাবে কাঁঠাল তো থাকবেই, তীব্র স্বাদের মধ্যে কাঁচা আম থাকতো, আর করলা বা উচ্ছে এইসব। সব মিলিয়ে অমৃত।

আমি যখন রাঙামাটি কলেজ থেকে পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখনো পর্যন্ত আমার মনে একটা সিদ্ধান্ত ছিল যে যেখানেই থাকি বিজুতে অন্তত একদিন আমি যে কোন অবস্থাতেই রাঙামাটি থাকবো। পড়ে যখন বাপু বদলই হয়ে গেলেন রাঙামাটি থেকে কক্সবাজারে, পরিবাররে সবাই চলে গেলে কক্সবাজার তখন থেকে ধীরে ধীরে বিজুর সময় রাঙামাটি যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। বিজু হয় চৈত্র সংক্রান্তিতে আর আমদের পরিবারে আড়ম্বরের সাথে উদযাপিত হয় পহেলা বৈশাখ। নিতান্ত অনিবার্য কোন কারণ না থাকলে পহেলা বৈশাখ পুরো পরিবারের সাথে উদযাপন করতে হয়। আমার মা থাকতেও এটা ছিল, এখনো এই নিয়ম বিদ্যমান আছে।

২.

এখন তো আমার নিজেরই একটা পরিবার হয়েছে প্রিয়তমা স্ত্রী আর দুই কন্যার সাথে এই অধমকে মিলিয়ে। আমরা উৎসব হিসাবে দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ক্রিসমাস, ইংরেজি নববর্ষ, দুর্গা পূজা এই সবই উদযাপন করি। এই সবকিছুর মধ্যে পহেলা বৈশাখটা হচ্ছে প্রধান। দুই ঈদের বা অন্য কোন পালা পার্বণের চেয়ে পহেলা বৈশাখটা আমাদের কাছে উদযাপনের হিসাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পহেলা বৈশাখের সুবিধা হচ্ছে যে এর সাথে কোন ধর্মীয় আচার আচরণ জড়িত নাই, আপনি আপনার ইচ্ছামতো যেভাবে চান সেভাবেই উৎসব বা উদযাপন সাজাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করি সব ভাইবোন ওদের বাচ্চা কাচ্চা সবাই অন্তত এক বেলা একসাথে হতে।

পহেলা বৈশাখ যদি আপনি ঢাকায় উদযাপন করতে চান তাইলে তো বিজুর সময় আর রাঙামাটি যেতে পারবেন না। এই কারণে আমার আর বিজুতে রাঙামাটি যাওয়া হয়না। জেনেছি যে এখন নাকি রাঙামাটিতে বিজু উপলক্ষে অনেক আয়োজন হয়। অনেক মেলা হয়, দোকানপাট বেসে, কনসার্ট হয়, গান বাজনা নাচের অনুষ্ঠান হয়। আমি যদি রাঙামাটি থাকতাম তাইলে সম্ভবত বিজু উপলক্ষে ছোট একটা সাহিত্য সংকলন করতে চেষ্টা করতাম। কেউ কেউ নিশ্চয় সেটা করেন, আমারই হয়তো জানা নেই। বেশী অনুষ্ঠান হতে থাকলে অনেক সময় উৎসবের মুল সুরটা ম্লান হয়ে যায়- বিজু উপলক্ষে রাঙায় এরকম হয় কিনা জানিনা।

সমানে বিজু, রাঙামাটিতে এখন নিশ্চয়ই ছেলে মেয়ে বুড়ো বুড়ী সবাই বিজুর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। উদযাপনের ধরন পাল্টেছে, উৎসবের ব্যাপ্তিও বেড়েছে নিশ্চয়ই। তথাপি মুল সুরটা কখনো পাল্টায় না। চৈত্রের দাবদাহ, বছরের শেষ দিন, পাহাড়ে প্রকৃতির রূপ রঙ পরিবর্তনের সূচনা এই সব মিলিয়ে চাকমা সমাজের এই উৎসবের দিনে চাকমা তরুণ তরুণীরা নিজেদের উৎসের দিকে ফিরে তাকাবেন, আত্ম পরিচয়, জাতিগত অধিকার, বৈষম্য বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই এই সবকিছুই নিশ্চয়ই তরুণদের উৎসব উদযাপনের অনুষঙ্গ হয়ে আছে এখনো। নিজের দিকে ফিরেও তাকাবো এবং নিজের পরিচয়েই আনন্দ করবো।

৩.  

আনন্দ তো করবই, আনন্দই মুল, কিন্তু যে আনন্দ আমার সাংস্কৃতিক পরিচয় ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে ধারণ করে না সেটা বড়ই নিম্নমানের স্থূল আনন্দ। রাঙাতে তরুণ বন্ধুরা যারা আছেন, আমি জানি এই বিজুতে আপনাদের উদযাপনের সুরেও বিশ্বব্যাপী আদিবাসী মানুষের যে চলমান সংগ্রাম বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সেই সূরও এসে মিশে যাবে। গেংখুলির সুরে দেখবেন একটা প্রলম্বিত উদাসীন সুর অন্তর্ভুক্ত থাকে- সেই সুরটা হচ্ছে পাহাড়ের মানুষের জীবনের আনন্দের সাথে উচ্ছ্বাসের সাথে কান্নার সংযোগ। সেই কন্নাটা, সেটা মনে রাখবেন। 

বিজু নিয়ে আলাপ করলেই লোগাংএর কথা মনে পড়ে। কেননা আমার দেখা মতে সেই একবারই বিজু উৎসব বর্জনের কথা হয়েছিল- সেবারের বিজু ছিল কান্নার বিজু, ক্রোধ ও বেদনার বিজু। আপনি যখন এইবার বিজুতে আনন্দ করবেন, আনন্দ নিশ্চয়ই করবেন- সেটা জীবনেরই অংশ, সারা দিনের আনন্দের এক ফাঁকে অন্তত একটা মিনিটের জন্যে হলেও লোগাং এর কথা স্মরণ করবেন। ভুলবেন না।

সকলেই ভাল থাকুন। আনন্দ হোক।  


লেখক: ইমতিয়াজ মাহমুদ, প্রগতিশীল লেখক ও আইনজীবী। *লেখাটি ফেইসবুক থেকে নেওয়া। 

পাওয়ার হিটিংয়ে টাইগারদের দুর্বলতা, পাহাড়ি ক্রিকেটার চায় বিসিবি

পাহাড়ি ক্রিকেটার চায় বিসিবি

দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উঠে আসা অ্যাথলেট কিংবা খেলোয়াড়েরা ফুটবল, রেসলিং, হ্যান্ডবল, কাবাডিতে বেশ নাম করলেও ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারেই ভিন্ন। পাহাড়ি দুর্গম এলাকা থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার নেই বললেই চলে। তবে এবার ক্রিকেটেও আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের আগ্রহী করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

পাহাড়ে বসবাসরত মানুষদের ক্রিকেটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে রাঙামাটিতে ভেন্যু সংস্কার ও আগামী বছর থেকে ন্যাশনাল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বিসিবি। এজন্য অতি সম্প্রতি সেখানে পর্যবেক্ষণে গেছেন বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি।

বিষয়টি নিয়ে ববি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রাঙামাটিতে আগে থেকেই স্টেডিয়াম ছিল। কিন্তু চিন্তাভাবনা করছি সেখানে আগামী বছর একটা ভেন্যু করব ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য। এখানে পাহাড়ি যে জনগোষ্ঠী আছে, তাদের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুব কম। ফুটবলে কিন্তু অনেক আছে। ক্রিকেটে কিন্তু সে রকম নেই। একটা জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এ চিন্তা-ভাবনা। সেখানে খেলা হলে অনেকে আগ্রহী হবে, পরে আমরা বিভিন্ন ধাপে যেতে পারব।’

ক্রিকেটে পাহাড়িদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে দেশের প্রথমসারির একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পাওয়ার হিটিংয়ে টাইগার ব্যাটাররা বেশ পিছিয়ে রয়েছেন। ভবিষৎতে দুর্বলতা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে নতুন পরিকল্পনা।

বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আহমেদ সাজ্জাদুল আলম জানান, পাহাড়ি অঞ্চলে যারা বড় হয়ে উঠেন তাদের একটা কঠোর দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেইখান থেকে তারা শারীরিকভাবে এগিয়ে থাকে। তাছাড়া আদিবাসীরা এ দেশের সন্তান, তারা এ দেশের নাগরিক; তাদের আমাদের সম্পৃক্ততা করাটা মনে করি জাতীয় দায়িত্ব। 

যৌথবাহিনীর কম্বিং অপারেশন শুরু, কেএনএফ’র শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার

যৌথবাহিনীর কম্বিং অপারেশন

বান্দরবানের থানচি ও রুমায় ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ ও অস্ত্র লুটের পর কম্বিং অপারেশন শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়ন মাঠে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

সেনাপ্রধান বলেন, ইতোমধ্যে কম্বিং অপারেশন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনী সম্মিলিতভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অভিযানের সফলতার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনে সব বিষয় আমরা প্রকাশ না করলেও জনসাধারণের যেটুকু জানা প্রয়োজন আমরা তা গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করব।

অপারেশনে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমকে (৫৫) গ্রেফতার করার তথ্য জানায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আজ বিকালে বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের শ্যারনপাড়ার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এসময় তার বাড়ি থেকে জীবজন্তু মারার বন্দুক (এয়ারগান) উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ জানিয়েছেন, নাথান বমের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে চেওসিম বমের। শ্যারনপাড়ার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ২০১৪-১৫ এর দিকে ছয়টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কেএনডিও নামে স্যোশাল অর্গানাইজেশন গঠন করা হয়। চেওসিম বম প্রথম দিকে কেএনডিও-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। চেওসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা অন্যদের অবস্থান ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি।

তবে চেওসিম বম কেএনএফ-এর সদস্য নয় বলে ফেইসবুক পেজে দাবি করেছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট - কেএনএফ। 

© all rights reserved - Janajatir Kantho