এ বছর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন গারো জাতিসত্তার বিশিষ্ট লেখক, কবি ও সমাজসেবক অরণ্য চিরান। গত ২৫ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
পুরস্কার গ্রহণের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া হচ্ছে সংবর্ধনা। আদিবাসী লেখক ও
সমাজসেবক অরণ্য চিরান ৪৪ বছর বয়সেই সমাজসেবায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই পদক পেয়েছেন।
পদক পাওয়া নিয়ে দেশের প্রথমসারির একটি গণমাধ্যমকে
অরণ্য চিরান বলেন, ‘কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্র আমাকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ায় আমি
খুবই খুশি। ত্রিশ বছর ধরে আমি আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে আসছি। মানুষের সেবায়
নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। তাদের নানা সমস্যায় পাশে থেকেছি। তবে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক
সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পাবো, এটা ভাবনাতেই ছিল না।’
সমাজসেবায় স্বাধীনতা পদক পাওয়া অরণ্য চিরান ভবিষ্যৎ
পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তাদের জন্য আবাসনসহ
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এছাড়া যারা সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে আসেন তাদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার
ইচ্ছা আছে। এই আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে অসহায় মানুষ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা
প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আবার বাড়িতে ফিরে যাবে।’
অরণ্য চিরানের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তিতে ধোবাউড়ার
নয়াপাড়া গ্রামের কবি সাহিত্যিক মতেন্দ্র মানখিন বলেন, ‘অরণ্য চিরান একজন ভালো মনের
মানুষ। তিনি আমার অসুস্থতার সময় পাশে থেকে সেবা করেছেন। এছাড়া দিঘলবাগ গ্রামের বীর
মুক্তিযোদ্ধা ফ্লুরেন রিছিল, রাজ্জাক চিরান, এটিশন মানকিন প্রমুখকে সরকারিভাবে
চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও সহযোগিতা করেছেন। আদিবাসীদের দাবি আদায়ে তিনি
সব সময় আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।’
জানা গেছে, গ্রামের বাড়ি ধোবাউড়ার দিঘলবাঘে হলেও অরণ্য চিরান ছোটবেলা থেকেই ময়মনসিংহ শহরে থাকেন। এলাকা থেকে শহরে গেলেও নানা সমস্যায় মানুষকে
সেবা দিয়ে থাকেন। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সনদপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে পাইয়ে দিতে কাজ
করেন।
তবে তার পদক পাওয়ার বিষয়টি অনেকেই মানতে পারেননি
বলে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু অরণ্য চিরানের স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় আদিবাসীদের
সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।