পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নামে ২ পাহাড়ি গ্রাম উচ্ছেদ বন্ধের দাবি

আদিবাসী গ্রামে পর্যটন কেন্দ্র

রাঙ্গামাটির জুড়াছড়ি ও বিলাইছড়ির সীমান্তবর্তী দুটি আদিবাসী গ্রামে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নামে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে ছাত্র—যুব সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ), ঢাকার শাহবাগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে জানানো হয়, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে জোর-জবরদস্তিমূলকভাবে গাছবাগান পাড়া ও থুমপাড়ার অধিবাসীদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুটি গ্রামের জুম্ম অধিবাসীদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন জুমচাষে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা বলেন, সীমান্ত সড়কের পাশে পর্যটনের নামে দুটি পাহাড়ী গ্রামকে উচ্ছেদ করার জন্য সেনাবাহিনী পায়তারা চালাচ্ছে। পাহাড়ের মানুষের প্রধান জীবিকা জুম চাষ। এখন জুম চাষ, হলুদ চাষ, আদা চাষ যদি করতে না দেয়, তাহলে আদিবাসীদের জীবনমান কেমন হবে তা আপনারা ভাবুন।

এই ছাত্রনেতা আরো বলেন, আমরা কেউ উন্নয়ন বিরোধী নই, পর্যটনের বিরোধী নই। কিন্তু পর্যটনের নামে যদি আমাদের উচ্ছেদ করা হয়, আমরা সেই উন্নয়নের বিরোধী।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা বলেন, পাহাড়ীদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে উন্নয়ন করাকে আমরা উন্নয়ন হিসেবে দেখি না। ভুক্তভোগী পাহাড়ীদের গ্রেপ্তার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি গৌতম শীল বলেন, পাহাড়ী জনগোষ্ঠী হাজার বছর ধরে জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। আর তা বন্ধ করার জন্য অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। একটি রাষ্ট্র যখন তার সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে সমান চোখে দেখে না তা খুবই লজ্জাজনক। দুঃখ হলেও সত্যি যে আজকে সেনাবাহিনী উন্নয়নের নামে পাহাড়ীদের ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। উন্নয়নের নামে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বলেন, যেকোনো উন্নয়ন সেটা জনবান্ধব হতে হবে। সাজেকের লুসাইদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া করা হয়েছিল। আমরা তা বন্ধ করতে পেরেছি। একধরনের ব্যবসায়িক গোষ্ঠী লুট করে যাচ্ছে আর সরকার তা করার জন্য সহযোগিতা প্রদান করবে তা আমরা হতে দিব না।

সভাপতির বক্তব্যে তৌহিদুর রহমান তৌহিদ বলেন, পাহাড়ীদের উচ্ছেদ করার যে অভিযান চালানো হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের আদিবাসীদেরকে সমান অধিকার দিতে হবে।

সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত প্রতিবাদকারীরা মিছিল করেন। 

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে: আমীর খসরু

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বুধবার (২০ মার্চ) বিকেল ৪টায় বান্দরবান শহরের হিলভিউ কনভেনশন হলে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক কর্মী সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ভোটের অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকারের জন্য মানুষ সংগ্রাম করছে। আমরা জনগণের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব।

দেশের দ্রব্যমূল্যে নিয়ে আমির খসরু আরো বলেন, বাজার ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা একটি গোষ্ঠীর হাতে নিয়ন্ত্রিত হয়ে রয়েছে। সর্বত্র লুটপাট ও দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এসবের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠেছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি মাম্যাচিং এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মী সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লুসাই মং মার্মা, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দীন তুষার প্রমুখ।

এছাড়া কর্মী সমাবেশে বান্দরবানের সাত উপজেলার বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

বিনা ভাড়ায় স্কুলশিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন সুসময় চাকমা

সুসময় চাকমা

ভাড়া কম পাবেন দেখে স্কুল শিক্ষার্থীদের যেখানে গাড়িতে তুলতে অনেক চালকই অনাগ্রহী, সেখানে একদমই ব্যতিক্রম সুসময় চাকমা। খাগড়াছড়ির সিএনজি চালিত এ অটোরিকশা চালক বিনা ভাড়ায় স্কুল শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন।

খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা, সাজেকসহ বিভিন্ন সড়কে সিএনজি চালিয়ে তিনি সংসার চালান। তবে যাত্রাপথে কোন শিক্ষার্থীকে দেখলে বিনা ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন। কখনো স্কুলে যেতে, কখনো বা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, যাদের অর্থ নেই তাদেরও গন্তব্যে পৌঁছে দেন।

ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা সুসময় চাকমা নেটিজেনদের প্রশংসায় ভাসছেন।

সুসময় চাকমা বলেন, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে পাহাড়, ছড়া পেরিয়ে মূল সড়কে আসে। তারপর আবার গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। আর সব গাড়ি শিক্ষার্থীদের নিতেও চায় না। এসব দেখে আমার অনেক মায়া হয়। তাই গাড়ি চালানোর সময় সড়কের পাশে স্কুলড্রেস পরা শিক্ষার্থী দেখলে আমি বিনা ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিই।

স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুসময়ের সংসার। বড় ছেলে সৌম্মক সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ে ইয়ানার বয়স চার বছর।

স্নাতক সম্পন্ন করা সুসময় চাকমা ঢাকার একটি স্বনামধন্য গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে চাকরি করতেন। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। ২০২১ সালে বাবা ভুবন মোহন চাকমার মৃত্যুর পর মা নোনাভি চাকমা একা হয়ে যান।

সবশেষ ২০২২ সালে মায়ের জন্য ৭০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে খাগড়াছড়িতে স্থায়ী হন। এরপরই তিনি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালান।

সুসময়ের বিনা ভাড়ার সুবিধা কেবল শিক্ষার্থী নয়; পর্যটকসহ সব পেশার মানুষ পেয়েছেন। প্রতি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন তিনি বিনা ভাড়ায় সারাদিন গাড়ি চালিয়ে থাকেন। সেদিন তার গাড়িতে যে যাত্রীরা ওঠেন, কারো কাছ থেকেই তিনি ভাড়া নেন না। 

বাগাছাসের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন (তালিকাসহ)



বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন

জাতীয় গারো ছাত্র সম্মেলন ও কাউন্সিলের ৫ মাস পর বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগাছাস) পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ), সংগঠনটির অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়।

বাগাছাস কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেডক্লিফ ডিব্রা ও সাধারণ সম্পাদক প্যাট্রিক চিসিম পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন।

কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে ১৭ জনকে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৬ জন এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ১০ জনকে।

এরআগে, গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বাগাছাসের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়। এতে সভাপতি হিসেবে রেডক্লিফ ডিব্রা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্যাট্রিক চিসিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিকসেং চিসিম নির্বাচিত হন। 

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যারা আছেন






পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকায় গণসংযোগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে দেশবাসীকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এই গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচি শুরু হয়। নেতৃবৃন্দ পুরানা পল্টন মোড় হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় ও পরে পুরানা পল্টন মোড়ে এসে কর্মসূচি শেষ করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন। এসময় তিনি বলেন, ‘দেড় বছর ধরে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি।’

জাকির হোসেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময় সূচিভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। পাহাড়ে সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের স্থায়ী অবসান করতে হবে। আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক করা এবং স্থানীয় শাসন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এসব পরিষদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করতে হবে এবং পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাঁদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মূল স্রোতধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক দুটি দাবি তুলে ধরা হয়। তা হলো ইউনিয়ন পরিষদসহ সর্বস্তরের স্থানীয় সরকারে সমতলের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাঁদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

এই কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহিল কাইয়ুম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক গজেন্দ্র নাথ মাহাতো, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

‘জুমিয়াদের মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়ে নিয়ে পর্যটনকেন্দ্র করা হচ্ছে’

আদিবাসী গ্রাম


রাঙ্গামাটির সীমান্তবর্তী দুটি আদিবাসী গ্রামের বসতি উচ্ছেদের জন্য সেনাবাহিনী থেকে নির্দেশনা দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে জুরাছড়ি-বিলাইছড়ির গাছবাগান পাড়া ও থুমপাড়া গ্রামবাসীর উদ্যোগে রাঙ্গামাটির ডিসি অফিসের সামনে এ মানববন্ধন হয়।

মানবন্ধনে ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সজল চাকমার সঞ্চলনায় স্মারকলিপি পাঠ করেন বৃষ্টি চাকমা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন থুমপাড়ার বাসিন্দা মদন বিকাশ চাকমা, দুলু পাড়ার বাসিন্দা পূণ্য রানী চাকমা।

থুম পাড়ার বাসিন্দা মদন বিকাশ চাকমা বলেন, ‘আমরা জুম করতে পারছি না। নিরাপত্তা বাহিনী বাধা দিচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে। তারা আমাদের জমি ও বাগানগুনো দখল করেছে। জুম করতে না পারলে কীভাবে বাঁচবো আমরা?’

দুলু পাড়ার বাসিন্দা পূণ্য রানী চাকমা বলেন, ‘আমাদের পাড়াগুলোতে জুম করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাগান, সহায়-সম্পত্তি নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন যদি না থাকে কীভাবে বাঁচবো?’

সংহতি বক্তব্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন চলছে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যদি জীবনের মানোন্নয়ন না হয় তাহলে সেটা কীসের জন্য? আজকে যারা ভূমি হারাতে বসেছে তারা নিজেদের বোবা কান্না গুলো শোনাতে এসেছে। এটা তাদের জীবন মরণের বিষয়। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়ে নিয়ে পর্যটন করা হচ্ছে তাহলে সেটা কীসের উন্নয়ন?।’

তিনি আরো বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূল নির্যাস হলো পাহাড়ী জনগণের জীবন-জীবিকা ও অস্তিত্ব সংরক্ষণ করা। কিন্তু সরকার পার্বত্য চুক্তিকে পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো উন্নয়নের নামে আগ্রাসন চালাচ্ছে।’

সভাপতির বক্তব্যে দুলু পাড়ার কার্বারি অজিত কুমার চাকমা বলেন, ‘আমরা দুই গ্রামবাসী অনেক কষ্টে আছি। আমাদেরকে গ্রাম ছেড়ে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। হলুদ, আদা, কলা ইত্যাদি চাষ করে পেট চালাই। এখন যদি আমাদের ভূমি চলে যায়, জুম করতে না পারি কীভাবে বাঁচবো?’

মানবন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে সংহতি বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিসিং মারমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদার প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে পাড়াবাসি, রাঙ্গামাটি শহরের সুশীল সমাজ ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চল শাখার নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় ডিসি সমস্যা সমাধানে যথাযথ চেষ্টা চালাবেন বলে নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন। 

মধুপুরে চলেশ রিছিলের ১৭তম হত্যা বার্ষিকী পালিত

চলেশ রিছিল

স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইলের মধুপুরে আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিলের ১৭তম হত্যা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার (১৮ মার্চ), উপজেলার মাগন্তিনগর গ্রামে শহীদের কবরে বিভিন্ন আদিবাসী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এই দিন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস), আজিয়া, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু), মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী, নারী নেত্রী যষ্ঠিনা নকরেক সহ সর্বস্তরের জনগণ শহীদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

চলেশ রিছিল মধুপুর ইকোপার্ক বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির একজন নেতা ছিলেন। যার কারণে তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ময়মনসিংহের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মধুপুর আসার সময় ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মুক্তাগাছা উপজেলার কালীবাড়ী থেকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা।

তাকে আটক করে মধুপুরের বিএডিসির সেনাক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়। দফায় দফায় নিষ্ঠুর নির্যাতনে চলেশ রিছিল বিকেলের দিকে নিথর হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে মধুপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

চলেশ রিছিল হত্যার দীর্ঘ ১৭ বছরেও আজও মামলা রেকর্ডভুক্ত হয়নি। বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

হত্যা দিবস উপলক্ষে মাগন্তিনগরে পারিবারিকভাবে প্রার্থনা, শ্রদ্ধা নিবেদন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় আদিবাসী নেতারা চলেশ রিছিল হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। 

© all rights reserved - Janajatir Kantho