‘জুমিয়াদের মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়ে নিয়ে পর্যটনকেন্দ্র করা হচ্ছে’

আদিবাসী গ্রাম


রাঙ্গামাটির সীমান্তবর্তী দুটি আদিবাসী গ্রামের বসতি উচ্ছেদের জন্য সেনাবাহিনী থেকে নির্দেশনা দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে জুরাছড়ি-বিলাইছড়ির গাছবাগান পাড়া ও থুমপাড়া গ্রামবাসীর উদ্যোগে রাঙ্গামাটির ডিসি অফিসের সামনে এ মানববন্ধন হয়।

মানবন্ধনে ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সজল চাকমার সঞ্চলনায় স্মারকলিপি পাঠ করেন বৃষ্টি চাকমা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন থুমপাড়ার বাসিন্দা মদন বিকাশ চাকমা, দুলু পাড়ার বাসিন্দা পূণ্য রানী চাকমা।

থুম পাড়ার বাসিন্দা মদন বিকাশ চাকমা বলেন, ‘আমরা জুম করতে পারছি না। নিরাপত্তা বাহিনী বাধা দিচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে। তারা আমাদের জমি ও বাগানগুনো দখল করেছে। জুম করতে না পারলে কীভাবে বাঁচবো আমরা?’

দুলু পাড়ার বাসিন্দা পূণ্য রানী চাকমা বলেন, ‘আমাদের পাড়াগুলোতে জুম করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাগান, সহায়-সম্পত্তি নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন যদি না থাকে কীভাবে বাঁচবো?’

সংহতি বক্তব্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন চলছে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যদি জীবনের মানোন্নয়ন না হয় তাহলে সেটা কীসের জন্য? আজকে যারা ভূমি হারাতে বসেছে তারা নিজেদের বোবা কান্না গুলো শোনাতে এসেছে। এটা তাদের জীবন মরণের বিষয়। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়ে নিয়ে পর্যটন করা হচ্ছে তাহলে সেটা কীসের উন্নয়ন?।’

তিনি আরো বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূল নির্যাস হলো পাহাড়ী জনগণের জীবন-জীবিকা ও অস্তিত্ব সংরক্ষণ করা। কিন্তু সরকার পার্বত্য চুক্তিকে পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো উন্নয়নের নামে আগ্রাসন চালাচ্ছে।’

সভাপতির বক্তব্যে দুলু পাড়ার কার্বারি অজিত কুমার চাকমা বলেন, ‘আমরা দুই গ্রামবাসী অনেক কষ্টে আছি। আমাদেরকে গ্রাম ছেড়ে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। হলুদ, আদা, কলা ইত্যাদি চাষ করে পেট চালাই। এখন যদি আমাদের ভূমি চলে যায়, জুম করতে না পারি কীভাবে বাঁচবো?’

মানবন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে সংহতি বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিসিং মারমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদার প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে পাড়াবাসি, রাঙ্গামাটি শহরের সুশীল সমাজ ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চল শাখার নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় ডিসি সমস্যা সমাধানে যথাযথ চেষ্টা চালাবেন বলে নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন। 

মধুপুরে চলেশ রিছিলের ১৭তম হত্যা বার্ষিকী পালিত

চলেশ রিছিল

স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইলের মধুপুরে আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিলের ১৭তম হত্যা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার (১৮ মার্চ), উপজেলার মাগন্তিনগর গ্রামে শহীদের কবরে বিভিন্ন আদিবাসী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এই দিন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস), আজিয়া, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু), মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী, নারী নেত্রী যষ্ঠিনা নকরেক সহ সর্বস্তরের জনগণ শহীদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

চলেশ রিছিল মধুপুর ইকোপার্ক বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির একজন নেতা ছিলেন। যার কারণে তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ময়মনসিংহের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মধুপুর আসার সময় ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মুক্তাগাছা উপজেলার কালীবাড়ী থেকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা।

তাকে আটক করে মধুপুরের বিএডিসির সেনাক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়। দফায় দফায় নিষ্ঠুর নির্যাতনে চলেশ রিছিল বিকেলের দিকে নিথর হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে মধুপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

চলেশ রিছিল হত্যার দীর্ঘ ১৭ বছরেও আজও মামলা রেকর্ডভুক্ত হয়নি। বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

হত্যা দিবস উপলক্ষে মাগন্তিনগরে পারিবারিকভাবে প্রার্থনা, শ্রদ্ধা নিবেদন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় আদিবাসী নেতারা চলেশ রিছিল হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। 

১৭ বছরেও চলেশ রিছিল হত্যার মামলা নেয়নি পুলিশ


আজ ১৮ মার্চ। মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিলের হত্যা দিবস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে এই গারো নেতার মৃত্যুর ঘটনায় ১৭ বছরেও রেকর্ড হয়নি কোনো হত্যা মামলা। আলোর মুখ দেখেনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন। একাধিক মন্ত্রী চলেশ রিছিল বিচারের প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেন নি।

এ নিয়ে গারো নেতৃবৃন্দ ও চলেশের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বন মামলা সহ অন্য অনেক ইস্যুর ভিড়ে চলেশের ফাইলও চাপা পড়ে গেছে।

২০০৩ সালের মাঝামাঝিতে ‘ফরেস্ট কনজারভেশন অ্যান্ড ইকোট্যুরিজম’ প্রকল্পের আওতায় মধুপুর গড়ের তিন হাজার একর বনভূমির চারপাশে প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই দেয়াল নির্মিত হলে ঐতিহ্যগত অধিকার হারানোর আশঙ্কায় আদিবাসীরা আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা চলেশ রিছিল।

২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি আদিবাসীদের বিক্ষোভ মিছিলে বনরক্ষী ও পুলিশ গুলি চালালে পীরেন স্নাল নামের এক গারো যুবক নিহত হন। আহত হন ২৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু। এই ঘটনার পর আন্দোলন তীব্রতর হলে জোট সরকার প্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখে।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সারা দেশে মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মধুপুরের কাকরাইদ এলাকায় বিএডিসির বীজ উৎপাদন খামারে সেনাক্যাম্প স্থাপন করে। এই সুযোগে বন বিভাগ প্রাচীর নির্মাণে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। বন বিভাগ দ্রুত গতিতে দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে।

আদিবাসী নেতারা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন। জাতীয় কয়েকটি পত্রিকা সংবাদটি প্রকাশ করলে দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় শুরু হয়। এমন পরিস্থিতি সরকারের বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সি এস করিম সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং প্রাচীর নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন।

কিন্তু বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেনা শাসনের সময় বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্ষান্ত থাকেনি। আন্দোলনকারীদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানি শুরু করে।

২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ময়মনসিংহের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মধুপুর যাওয়ার সময় চলেশ রিছিল, প্রতাপ জাম্বিল, তুহিন হাদিমা, পীরেন সিমসাংকে বেলা ২টার দিকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মুক্তাগাছা উপজেলার কালীবাড়ী থেকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা। তাঁদের আটক করে মধুপুরের বিএডিসির সেনাক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়। দফায় দফায় নিষ্ঠুর নির্যাতনে চলেশ রিছিল বিকেলের দিকে নিথর হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে মধুপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তৎকালীন মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘চলেশকে গ্রেপ্তার করতে গেলে দৌড়ে পালানোর সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে জ্ঞান হারান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।’

এ ঘটনায় মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান বাদী হয়ে মধুপুর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ময়নাতদন্তের পর ১৯ মার্চ চলেশের মরদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করে। ২০ মার্চ তাঁকে সমাহিত করার পর চলেশ রিছিলের স্ত্রী সন্ধ্যা সিমসাং বাদী হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বন বিভাগের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে মধুপুর থানায় একটি হত্যা মামলার এজাহার দায়ের করেন।

মধুপুর থানা-পুলিশ ওই এজাহার নিয়ম মাফিক গ্রহণ করলেও মামলা রেকর্ডভুক্ত করেনি। কারণ হিসেবে ওসি রিয়াজ উদ্দিন উল্লেখ করেছিলেন, ‘যেহেতু ইউডি মামলা হয়েছে, তাই একই ঘটনায় অপর মামলা রেকর্ডভুক্ত করা যায় না।’

গারো রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্য করার পূর্বে চলেশের গোসল করানো হয়। এই কাজে সম্পৃক্ত শষিণ দালবত, জয়ন বাজি ও কলেশ রিছিল ২৪ মার্চ লিখিতভাবে চলেশের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা উপস্থাপন করেন।

তাঁরা উল্লেখ করেন, ‘চলেশের হাতের ওপরের অংশ সম্পূর্ণ চুরমার করা হয়েছে। হাতের তালুতে ছিদ্র ছিল। হাত ও পায়ের আঙুলে নখ ছিল না। পিঠের পুরো অংশ এবং নিতম্বে আঘাতের কারণে রক্তের জমাট ছিল। অণ্ডকোষ মাংসের সঙ্গে মিশে গেছে। হাঁটুর নিচে অসংখ্য আঘাতের দাগ ও দুটি পায়ের তালু ছিল কালো।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ৫ মে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিউদ্দিনের নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করেন। তিনি তদন্ত করেন। চলেশের লাশ দ্বিতীয় দফায় উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। রফিউদ্দিনের সেই তদন্ত কার্যক্রমের ফলাফল আজও আলোর মুখ দেখেনি।

দীর্ঘ ১৭ বছরে আন্দোলন থেমে গেছে। মামলা আজও রেকর্ডভুক্ত হয়নি। বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

চলেশের স্ত্রী সন্ধ্যা সিমসাং বলেন, ‘খ্রিষ্টান ধর্মযাজক ইউজিন হোমরিক বেঁচে থাকলে হয়তো চলেশের বিচারের একটা ব্যবস্থা হতো। আমি এবার মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। নির্বাচনের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। ১৮ মার্চ পারিবারিকভাবে প্রার্থনা, শ্রদ্ধা নিবেদন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুরাদ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি অনেক দিন আগের। থানায় কখনো কোনো কাজই ঝুলিয়ে রাখা হয় না। তদন্ত করে কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চলেশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শেষে ওই সময়ই আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা বিষয়টি অবহিত নই।

বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবস উদযাপন

বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজ

যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করলো বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজ। দিবসটি উপলক্ষে রোববার (১৭ মার্চ), রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত কলেজ প্রাঙ্গণে নানা আয়োজন করা হয়।  

বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজ গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও রাজনীতি বিষয়ক আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পুরস্কার বিতরণী।

অনুপ্রেরণার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির সভাপতি ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের অধ্যক্ষ সুদীপ কুমার মণ্ডল, একাডেমিক কাউন্সিলের আহ্বায়ক মো. জাকিদুল ইসলাম, সদস্য সচিব সুশীল চাকমা এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি মোস্তাকিয়া মাহমুদা পারভীন প্রমুখ।

প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এ সময় তিনি সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পড়ার পরামর্শ দেন এবং সবাইকে হৃদয়বান হওয়ার কথা বলেন।

 

তিন আদিবাসী ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরামর্শ সভা

আদিবাসী ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তিন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় (খাসিয়া, মনিপুরী মৈতৈ ও মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া) শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে করণীয় শীর্ষক দুই দিনব্যাপী পরামর্শ সভা ও লেখক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১৬ মার্চ) সকাল ১০ ঘটিকায় হোটেল শ্রীমঙ্গল ইন এর সম্মেলন কক্ষে জাবারাং কল্যাণ সমিতির আয়োজনে এ কর্মশালা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাওয়ানকা ফান্ড অব RSF সোস্যাল ফাইন্যান্স এর অর্থায়নে পরিচালিত সঞ্জীবন প্রকল্পের উদ্যোগে এই পরামর্শ সভা ও লেখক কর্মশালা হয়।

জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক বিজয়ী লেখক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও সঞ্জীবন প্রকল্পের সমন্বয়কারী জয় প্রকাশ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু তালেব।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিকুল চক্রবর্তী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২৩ প্রাপ্ত মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া লেখক-গবেষক ড. রঞ্জিত সিংহ, মনিপুরী মৈতৈ লেখক আয়েকপম অঞ্জু দেবী, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সভাপতি ও খাসি মান্রী জিডিশন প্রধান সুছিয়াং, আদিবাসী নারী নেত্রী ফ্লোরা বাবলি তালাং প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু তালেব বলেন, ‘নিজ নিজ মাতৃভাষা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ভাষার জাতিগোষ্ঠীকে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিনিয়ত চর্চা করতে হবে, নিজের মাতৃভাষাকে ভালবাসতে হবে। সরকার এবং উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে থাকবে।’

কর্মশালায় অংশ নিয়ে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ নির্ধারিত ৬টি ভাষা মৈতৈ মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি, খাসিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, বম ও ম্রো ভাষায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান।

দুইদিনব্যাপী এ পরামর্শ কর্মশালা রবিবার বিকালে শেষ হয়। 

‘ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেদখলে থাকা ১২ বিঘা জমি উদ্ধার হওয়া দরকার’

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা

যেকোন মূল্যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেদখলে থাকা ১২ বিঘা জমি উদ্ধার হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

শনিবার (১৬ মার্চ) ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে দেওয়া বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো মন্দিরের জমি দখল হওয়া সমীচীন নয়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেদখলে থাকা জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই জমি যদি সরকার উদ্ধার করে মন্দির কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেয়, তাহলে দেশের সম্পদ কমবে না। কারও কোনো ক্ষতি হবে না।

অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবার ঐক্যবব্ধ ভূমিকা জরুরি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ নিয়ে কোনো আপস নয়।

সম্মেলনে সাংবাদিক বাসুদেব ধর-কে সভাপতি ও সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা-কে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের আগামী ২ বছরের (২০২৪-২০২৫) নতুন কার্য নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। 

হারল্যান স্টোরের পণ্য কিনে লাখ টাকা জিতলেন আদিবাসী নারী

চাকমা নারী

দেশজুড়ে চলা ‘হারল্যান অথেনটিক বিউটি কার্নিভ্যাল’ ক্যাম্পেইনের পণ্য কিনে লাখ টাকা জিতলেন খাগড়াছড়ির দীঘিনালার প্রবিকা চাকমা নামের এক আদিবাসী নারী। শনিবার (১৬ মার্চ) দীঘিনালা হারল্যান স্টোরের সামনে এক অনুষ্ঠানে তার হাতে লাখ টাকার চেক তুলে দেন রিমার্ক-হারল্যানের নির্বাহী পরিচালক ও জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন।

গত ১০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনে তিনিই প্রথম লাখপতি।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা প্রবিকা চাকমা খাগড়াছড়ির দিঘিনালার বরাদমের বাসিন্দা। কিছুদিন আগে তার বাসার কাছেই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে দীঘিনালা হারল্যান স্টোর। নকল ও ভেজাল পণ্য না কিনে নিজের স্কিনের যত্নে অথেনটিক কিছু কেনার জন্য গত ১৪ মার্চ হারল্যান স্টোরে চলে আসেন প্রবিকা। সেখান থেকে ২০৯০ টাকায় একটি অ্যান্টি স্কার জেল কেনেন তিনি। জেলটি কেনার পর তার মোবাইল ফোন নাম্বারটি ‘হারল্যান অথেনটিক বিউটি কার্নিভ্যাল ২০২৪’ এর জন্য রেজিস্ট্রার করা হয় এবং সফটওয়্যার এর মাধ্যমে তার জন্য পুরষ্কার নির্বাচন করা হয়। এতেই তিনি পেয়ে যান মেগা প্রাইজ লাখপতি হওয়ার বার্তা।

পুরস্কার জিতে উচ্ছ্বসিত প্রবিকা চাকমা। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি যে আমি এক লাখ টাকা জিতে গিয়েছি। উপহারটি পেয়ে আমি অনেক খুশি, আপনারাও হারল্যান স্টোরে এসে ন্যূনতম ২০০০ টাকার পণ্য কিনে জিতে নিতে পারেন ক্যাশ ভাউচার।’

হারল্যান স্টোর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশব্যাপী শুরু করেছে হারল্যান অথেনটিক বিউটি কার্নিভ্যাল। নকল ও ভেজাল পণ্যের অপকারিতা সম্পর্কে ক্রেতাদের জানানোর মাধ্যমে অথেনটিক পণ্যের প্রচার ও প্রসারই এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য। সারা দেশে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনে ক্রেতাদের জন্য থাকছে অথেনটিক পণ্য কিনে লাখ লাখ টাকার পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ। 

© all rights reserved - Janajatir Kantho