ফিচার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ফিচার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুনো হাতির ভেঙে ফেলা অর্ধেক ঘরের পুরোটা ধসিয়ে দিল বন্যা

 


জুলাই মাসের ৩ তারিখে খাবারের সন্ধানে সিন্ধু ডালুর বাড়িতে হামলে পড়েছিল একদল ক্ষুধার্ত বুনো হাতির পাল। উঠোনে আশেপাশে কিছু না পেয়ে ঘরে আক্রমন চালায় তারা। ভেঙে ফেলে মাটির দালান ঘরের একপাশ। সেই ভাঙা বাড়িতেই এতদিন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। চরম আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পারেননি মেরামত করতে।

সিন্ধু ডালু পেশায় একজন পাথর শ্রমিক। তাঁর বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ির সীমান্তঘেঁষা নাকুগাঁও গ্রামে। যেখানে স্থলবন্দর করা হয়েছে। এই স্থলবন্দরে একসময় ডালু, মান্দি জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল বেশি। কিন্তু সরকারের ভূমি অধিগ্রহণের কারণে সেখানকার আদিবাসীরা সরে যেতে বাধ্য হয়।

তারপরও প্রায় ২০টির মত ডালু পরিবার পূর্বপুরুষের ভূমি আকড়ে থেকে যায়। এই থেকে যাওয়াদের একজন সিন্ধু ডালু। তাঁর বাড়িটা স্থলবন্দর চেকপোস্টের ঠিক ওপারে। বাইরের যে কেউ চাইলেই খেয়াল খুশিমত সেখানে যেতে পারেন না। বিজিবির অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।

পঞ্চান্ন বছর বয়সী সিন্ধু ডালু স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার শ্রমিক। কখনো কখনো ট্রাকে পাথর লোডের কাজটিও তাকে করতে হয়। জীবিকার জন্য যখন যা করার তাই করা লাগে।

সীমিত আয়ে এতদিন বুনো হাতির ভেঙে ফেলা ঘর মেরামত করা যাচ্ছিল না। এবার পাহাড়ি ঢল সেই ভাঙা ঘর একেবারে ধসিয়ে দিয়ে গেল। বন্যায় তাঁর বাড়িতে বুক সমান পানি উঠেছিল। সেই পানি মাটির দালান ঘর ধসিয়ে দিয়ে গেছে।

স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ১০ ফিট বাই ১০ ফিট সমান ঝুপড়ি ঘরে দিন কাটাচ্ছেন। বৃষ্টি পড়লেই পানি গড়িয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে টিন ম্যানেজ করেছেন। সেই টিন আনতে গিয়েও পা কেটে গিয়েছে সিন্ধু ডালুর। ১২টা সেলাই লেগেছে। কাটা পা নিয়ে এখন আর বাইরে কাজেও যেতে পারেন না। বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের পথ।

সিন্ধু ডালুর সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম তখনও জ্বরে আক্রান্ত তিনি। খুব বেশি কথা বলছিলেন না। যা জানতে চাইছিলাম শুধু তার উত্তর করছিলেন। জ্বরের কারণে নাকি দুঃশ্চিন্তায় তা বুঝতে বাকি রইলো না।  

বন্যার পর অনেক জায়গায় অনেক সংগঠন, ফাউন্ডেশন ত্রাণ নিয়ে গেছে। কিন্তু নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আদিবাসীরা ত্রাণ পায়নি। হয়তো কেউ জানেই না স্থলবন্দরে এখনো আদিবাসীরা বসবাস করে! 

অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখি, সিন্ধু ডালুর আকাশে জমেছে শ্রাবনের মেঘ। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে সংসার চালাবেন সেই দুঃশ্চিন্তায় চোখেমুখে দেখছেন অন্ধকার। গারো, কোচ কিংবা হাজংদের নিয়ে টুকটাক বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে, কিন্তু সিন্ধু ডালুদের নিয়ে? তারা তো সংখ্যালুঘুর মধ্যে আরও সংখ্যালঘু! তাদের নিয়ে কেউ ভাবছি কি?

 

কাঞ্চন মারাক, নালিতাবাড়ি, শেরপুর থেকে।

আনসাং উইমেন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ডস পেলেন হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং

 


দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আসামান্য অবদান রাখায় ‘আনসাং উইমেন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ডস সম্মাননা পেয়েছেন খিয়াং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ সম্মাননা গ্রহণ করেন।

সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা পালনকারী দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা সংগ্রামী নারীদের সম্মাননায় এই অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪২ জন নারী এই স্বীকৃতি পেয়েছেন।

হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং রাঙামাটি ও বান্দরবানের সুবিধাবঞ্চিত খেয়াং নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করেছেন। এই নারীরা এখন তাদের পরিবার চালানোর পাশাপাশি ভাইবোনদের পড়াশুনা করাচ্ছেন।

গুঙ্গুরু পাড়া আদিবাসী নারী উন্নয়ন সংস্থার সাবেক চেয়ারপারসন এবং বর্তমান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি অনেকের বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন, কৃষিকাজের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিয়েছেন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

হ্লাক্রয়প্রু খেয়াং ছাড়াও অ্যাওয়ার্ডসের ৭ম আসরে সম্মাননা পাওয়া বাকি চারজন মহীয়সী নারীরা হলেন— রাজশাহীর মোছা. সুরাইয়া ফারহানা রেশমা, যশোরের নাসিমা আক্তার, কক্সবাজারের টিটু পাল, সাতক্ষীরার আলপনা রানী মিস্ত্রি।

ম্রো জাতির প্রথম নারী ডাক্তার সংচাং ম্রো

 


শৈশবে বোনকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেখে স্বপ্ন দেখেছিলেন চিকিৎসক হওয়ার। বিনা চিকিৎসায় পরিবার ও নিজের জনগোষ্ঠীর লোকদের মারা যাওয়ার কারণে তার বাবা কাইংপ্রে ম্রো মনস্থির করেছিলেন সন্তানদের একজনকে চিকিৎসক বানানোর। বাবার দীর্ঘ প্রচেষ্টা, অদম্য মনোবল আর অন্যান্যদের সহযোগিতায় পাহাড়সম বাঁধা পেরিয়ে অবশেষ পূরণ হল সেই স্বপ্ন। ডাক্তার হলেন সংচাং ম্রো।  

এর মাধ্যমে ইতিহাসের অংশী হলেন তিনি। হলেন ম্রো জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম নারী ডাক্তার। সংচাং ম্রোর বাড়ি বান্দরবান আলীকদমের পায়া কার্বারী পাড়ায়।

সম্প্রতি রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন সংচাং ম্রো। তিনি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ১৭-১৮ সেশনে ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে ডাক্তারি শেষ করে তিনি এই মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নী করছেন।

ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন সংচাং ম্রো। চম্পটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। আলীকদমে বিজ্ঞানের ভালো শিক্ষক না থাকায় ভর্তি হন সেন্ট যোসেফ হাই স্কুল এন্ড কলেজে। সিস্টারদের সহযোগিতায় এখান থেকেই তিনি এইচএসসি পাস করেন। পরে ভর্তির সুযোগ পান রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে।

নিজের ডাক্তার হবার গল্প নিয়ে সংচাং ম্রো বলেন, চিকিৎসার অভাবে এক বোনের মৃত্যু ও মায়ের দীর্ঘকালীন অসুস্থতা এবং বাবার প্রেরণা তাকে ডাক্তার হতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

আলীকদমের ম্রো সম্প্রদায় হতে তিনিই প্রথম ডাক্তার। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের পরেই ম্রোদের অবস্থান। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ম্রোদের বসবাস বেশি।

সুস্থ জীবন পেতে চায় আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে

আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নের আংড়া গ্রামের আদিবাসী যুবক লিংকন বাস্কে। জন্মের পর থেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে এক চোখ হারায় সে। শুধু তাই নয়, কপাল ও চোখ জুড়ে বেরিয়েছে বিশাল একটি টিউমার।

লিংকনের বাবা দিনমজুর কর্নেলিউস বাস্কে জানান, জন্মের সময় আমার ছেলে ভালোই ছিল। দেড় বছর বয়সে বাম চোখে ঘা হয় তার।

চোখ দিয়ে সবসময় পানি পরত। চোখ ফুলে যায়। ব্যথা হওয়ার কারণে শিশু বয়সে লিংকন খুব কান্নাকাটি করত। এক মিশনারী ফাদার তার নিজের অর্থে ডাক্তারের পরামর্শে চোখ অপসারণ করান। পরবর্তীতে এক চোখ নিয়ে ভালোই ছিলো সে। কিন্ত ৪ বছর বয়সে ওই চোখের উপর ও কপালে ছোট-ছোট টিউমার বের হয়।

লিংকনের পরিবার জানায়, গ্রামের স্কুলে লিংকনকে ভর্তি করে দেওয়া হলেও টিউমার হওয়ায় লজ্জায় সে পড়ালেখা বন্ধ করে সর্বক্ষণ বাড়িতে শুয়ে বসে থাকত। টিউমারগুলো অপারেশনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিলে ডাক্তার বলেন, অল্প বয়সে অপারেশন না করে বয়স বেশি হলে ভালো হবে।

এরপর ছেলের বয়স বেশি হলে ২০১৭ সালের দিকে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের খরচে ঢাকায় অপারেশনে টিউমারগুলো কেটে দেয়। কয়েকদিন পর আবার চোখের উপর কপাল জুড়ে টিউমার বের হয়। সংস্থাটির সহায়তায় একই হাসপাতালে পর পর ৪বার অপারেশন করা হয়। তবে ডাক্তার বলেছিলেন পঞ্চম বার অপারেশন করলে নতুন আর টিউমার বের হবে না। কিন্ত পঞ্চম বার অপারেশনের আগে পাঁচবিবি থেকে ওয়ার্ল্ড ভিশন অফিস বন্ধ করে দেয়।

এরপর টাকার অভাবে আর অপারেশন করানো হয়নি জানিয়ে লিংকন জানান, ছোটবেলা থেকেই কষ্টের জীবনযাপন কাটাচ্ছি। এমন অবস্থায় রোদে থাকতে পারি না। চোখ সর্বক্ষণ প্রচন্ড ব্যথা করে। বাবা-মা এখন বেঁচে আছেন। তারা খাওয়াচ্ছেন।

লিংকন বাস্কে আরো বলেন, সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহায়তায় আমি নতুন সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চাই।

লিংকনের বাবার বিকাশ নম্বর ০১৭৫০-১২৫১৩৯ 

পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাজন–এ আছে ঔষধি গুণ

পাজন রান্না কীভাবে করতে হয়

বিজু, বৈসুক, সাংগ্রাই, বিষু, বিহু, সাংক্রান উৎসবে মেতে উঠেছে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম। আর এ উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হরেক রকম সবজি দিয়ে রান্না করা খাবার–পাজন। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কথিত আছে, এ পাজন তৈরি করতে প্রায় ১০৭ প্রকার পাহাড়ি সবজি লাগে।

তবে সময়ের বিবর্তনে অনেক সবজি বাজারে পাওয়া না যাওয়ায় বর্তমানে ৩০-৪০ প্রকার সবজি দিয়ে সুস্বাদু খাবার ‘পাজন’ রান্না করা করা হয়। উৎসবে এই ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে পাহাড়িদের ঘরে ঘরে আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।

এই পাজন রান্নার ঐতিহ্য কয়েক’শ বছরের। পাহাড়ে বাস করা পাহাড়ি সব সম্প্রদায়ই এটি রান্না করে থাকে। মূলত পাজন শব্দটি চাকমারা ব্যবহার করেন। তবে জাতিভেদে এর নাম রয়েছে আলাদা। মারমা ভাষায় পাজনকে হাং-র বলে, ত্রিপুরা ভাষায় বলে মৈজারবং, চাক ভাষায় কাইনবোং বলে।

অনেকের মতে, পাজন শব্দটি এসেছে বাংলা শব্দ ‘পাঁচন’ থেকে। শব্দগত মিল থাকলেও বাঙালির পাঁচনের সঙ্গে পাজনের পার্থক্য রয়েছে রন্ধনপদ্ধতি ও স্বাদে। পাজনে শুঁটকিসহ বিভিন্ন ধরনের শুকনো মাছও ব্যবহার করা হয়। তাই পাজনের স্বাদ একেবারেই আলাদা।   

পাজন রান্নায় বাজারে পাওয়া যায় এমন সবজি ছাড়াও স্বাদ বাড়ায় নানা ধরনের বুনো সবজি, আলু, কন্দ ও ফুল। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ প্রকার বা তারও বেশি সবজি দিয়ে পাজন রান্না করা হয়। হরেক রকমের সবজি মিশ্রণ করার কারণে খাবারটিতে রয়েছে ঔষধিগুণ।

প্রচলন আছে, সাত বাড়ি ঘুরে নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে তৈরি এই পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগ ব্যাধিমুক্ত থাকা যায়। তাই এটি পাহাড়িদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। 

বাসাবোতে বিনামূল্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ইফতার বিতরণ

বাসাবোতে বিনামূল্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ইফতার বিতরণ

ভিন্ন ধর্মের হয়েও মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন ইফতারের ব্যবস্থা করে সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেছেন রাজধানীর সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের ভিক্ষুরা। এই বিহারটির ভিক্ষুরা প্রতিবছর বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করেন।

বিহার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, যারা এখানে ইফতার নিতে আসেন তাদের অধিকাংশই দুস্থ নারী। এছাড়া অসহায় রোজাদারসহ রিকশাচালক ও দিনমজুররাও আসেন ইফতার নিতে। মানুষকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে মানুষে-মানুষে বন্ধুত্ব ও প্রীতি বাড়বে। একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে। সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্যই এই ইফতার বিতরণের উদ্যোগ।

ইফতার বিতরণের এই উদ্যোগটি ২০১৩ সালে শুরু হয়। মাঝে করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০২৩ সাল থেকে ফের চালু হয়।

এবারও পহেলা রোজা থেকেই সম্প্রীতির এই ইফতার কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে ইফতার বিতরণ করা হলেও দুপু্র থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে বৌদ্ধ মন্দিরের রান্নাঘর। যেখানে ইফতারির বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।

প্রায় দুইশো মানুষের জন্য মন্দিরটিতে প্রতিদিন ইফতার তৈরী হয়। যা দরিদ্র মুসলমানদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।

সময়ের আগেই মন্দিরটির গেটে লাইন ধরেন নারী, পুরুষ ও শিশুরা। সুশৃঙ্খলভাবে লাইন ধরে তারা ইফতার গ্রহণ করেন। ইফতারে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, আলুরচপ, খেজুর, জিলাপি ও পেয়াজু দেওয়া হয়।

বৌদ্ধ মন্দিরে ইফতার নিতে আসা একজন নারী জানান, আমরা দুঃখ কষ্টের জন্য এখানে-ওখানে কাজকর্ম করি। তারপরও আমাদের ঘরে ঠিকমতো পয়সা আসে না।

আরেক নারী জানান, বাচ্চাদের খাওয়াই, নিজেরাও খাই। খাওয়ার পর উপকার হয়। সওয়াব হয়, আমাদেরও সওয়াব হচ্ছে।

জানা গেছে, এই ইফতারের প্রচলন করেন শুদ্ধানন্দ মহাথেরো। তাঁর প্রয়াণের পর বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ এই ধারা অব্যাহত রাখে। মূলত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দাতারা এর অর্থের জোগান দেন।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বেদান্ত বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো বলেন, মানবতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানে মুসলিম, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আমরা বিবেচনা করি না। মানুষ হিসেবেই জানি। যারা দুস্থ, গরিব পবিত্র রমজান মাসে তাদের ইফতার দিই।

সবুজবাগে অবস্থিত বৌদ্ধ বিহারটি ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ২৮ জন আবাসিক বৌদ্ধ ভিক্ষু রয়েছেন। এছাড়াও ২৫০ জন এতিম শিশু বিহারটিতে থেকে পড়াশোনা করছেন। 

ময়মনসিংহে একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার ইচ্ছা আছে: অরণ্য চিরান

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অরণ্য চিরান

এ বছর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন গারো জাতিসত্তার বিশিষ্ট লেখক, কবি ও সমাজসেবক অরণ্য চিরান। গত ২৫ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।

পুরস্কার গ্রহণের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া হচ্ছে সংবর্ধনা। আদিবাসী লেখক ও সমাজসেবক অরণ্য চিরান ৪৪ বছর বয়সেই সমাজসেবায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই পদক পেয়েছেন।

পদক পাওয়া নিয়ে দেশের প্রথমসারির একটি গণমাধ্যমকে অরণ্য চিরান বলেন, ‘কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্র আমাকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ায় আমি খুবই খুশি। ত্রিশ বছর ধরে আমি আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে আসছি। মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। তাদের নানা সমস্যায় পাশে থেকেছি। তবে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পাবো, এটা ভাবনাতেই ছিল না।’

সমাজসেবায় স্বাধীনতা পদক পাওয়া অরণ্য চিরান ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তাদের জন্য আবাসনসহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এছাড়া যারা সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে আসেন তাদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার ইচ্ছা আছে। এই আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে অসহায় মানুষ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আবার বাড়িতে ফিরে যাবে।’

অরণ্য চিরানের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তিতে ধোবাউড়ার নয়াপাড়া গ্রামের কবি সাহিত্যিক মতেন্দ্র মানখিন বলেন, ‘অরণ্য চিরান একজন ভালো মনের মানুষ। তিনি আমার অসুস্থতার সময় পাশে থেকে সেবা করেছেন। এছাড়া দিঘলবাগ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লুরেন রিছিল, রাজ্জাক চিরান, এটিশন মানকিন প্রমুখকে সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও সহযোগিতা করেছেন। আদিবাসীদের দাবি আদায়ে তিনি সব সময় আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।’

জানা গেছে, গ্রামের বাড়ি ধোবাউড়ার দিঘলবাঘে হলেও অরণ্য চিরান ছোটবেলা থেকেই ময়মনসিংহ শহরে থাকেন। এলাকা থেকে শহরে গেলেও নানা সমস্যায় মানুষকে সেবা দিয়ে থাকেন। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সনদপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে পাইয়ে দিতে কাজ করেন।

তবে তার পদক পাওয়ার বিষয়টি অনেকেই মানতে পারেননি বলে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু অরণ্য চিরানের স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় আদিবাসীদের সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

বিনা ভাড়ায় স্কুলশিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন সুসময় চাকমা

সুসময় চাকমা

ভাড়া কম পাবেন দেখে স্কুল শিক্ষার্থীদের যেখানে গাড়িতে তুলতে অনেক চালকই অনাগ্রহী, সেখানে একদমই ব্যতিক্রম সুসময় চাকমা। খাগড়াছড়ির সিএনজি চালিত এ অটোরিকশা চালক বিনা ভাড়ায় স্কুল শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন।

খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা, সাজেকসহ বিভিন্ন সড়কে সিএনজি চালিয়ে তিনি সংসার চালান। তবে যাত্রাপথে কোন শিক্ষার্থীকে দেখলে বিনা ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন। কখনো স্কুলে যেতে, কখনো বা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, যাদের অর্থ নেই তাদেরও গন্তব্যে পৌঁছে দেন।

ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা সুসময় চাকমা নেটিজেনদের প্রশংসায় ভাসছেন।

সুসময় চাকমা বলেন, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে পাহাড়, ছড়া পেরিয়ে মূল সড়কে আসে। তারপর আবার গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। আর সব গাড়ি শিক্ষার্থীদের নিতেও চায় না। এসব দেখে আমার অনেক মায়া হয়। তাই গাড়ি চালানোর সময় সড়কের পাশে স্কুলড্রেস পরা শিক্ষার্থী দেখলে আমি বিনা ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিই।

স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুসময়ের সংসার। বড় ছেলে সৌম্মক সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ে ইয়ানার বয়স চার বছর।

স্নাতক সম্পন্ন করা সুসময় চাকমা ঢাকার একটি স্বনামধন্য গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে চাকরি করতেন। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। ২০২১ সালে বাবা ভুবন মোহন চাকমার মৃত্যুর পর মা নোনাভি চাকমা একা হয়ে যান।

সবশেষ ২০২২ সালে মায়ের জন্য ৭০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে খাগড়াছড়িতে স্থায়ী হন। এরপরই তিনি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালান।

সুসময়ের বিনা ভাড়ার সুবিধা কেবল শিক্ষার্থী নয়; পর্যটকসহ সব পেশার মানুষ পেয়েছেন। প্রতি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন তিনি বিনা ভাড়ায় সারাদিন গাড়ি চালিয়ে থাকেন। সেদিন তার গাড়িতে যে যাত্রীরা ওঠেন, কারো কাছ থেকেই তিনি ভাড়া নেন না। 

© all rights reserved - Janajatir Kantho