সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ ১২ দফা দাবি আদিবাসীদের

 


আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, এনসিটিবির সামনে আদিবাসী ছাত্র-জনতা অধিকার কর্মীদের উপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার সহ ১২ দফা দাবি আদায়ে গণসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারেআত্মমর্যাদা আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি আদায়ে আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম জোরদার করুনশিরোনামে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি অজয় মৃ সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন  টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি বিচিত্রা তির্কী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য কে এস মং, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজীম, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি টনি চিরান, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ প্রমুখ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় শতভাগ সদস্য আদিবাসী দাবির প্রতি, আদিবাসী পরিচয়ের প্রতি কোনো না কোনো সময় সম্পূর্ণ সহমত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা এখনো সেটা অন্তরে ধারণ করেন বলে বিশ্বাস করি। তাহলে কেন তাঁরা প্রকাশ্যে সেটা বলবেন না? আদিবাসী ইস্যুতে সরকারের অবস্থান কী, সেটা কেন তাঁরা স্পষ্ট করে বলছেন না।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির প্রতি তাঁর প্রথম ভাষণে আদিবাসী শব্দ যেভাবে চয়ন করেছিলেন, আদিবাসীর পরিচয় উল্লেখ করে যেভাবে আদিবাসী অধিকারের কথা বলেছিলেন, সম্প্রতি ঘটনাগুলো তাঁর কাছে অজানা নয়। তিনি কেন তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করছেন না? অন্তর্বর্তী সরকারের পেছনের শক্তি কি এতই শক্তিশালী যে তাদের কাছে সরকারের নতি স্বীকার করতে হচ্ছে?

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করলাম, অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য অঞ্চলে নতুন করে অত্যাচার শুরু হলো। সেখানে যে বাহিনী রাজত্ব করে, তাদের নতুন চেহারা লক্ষ করলাম। অভ্যুত্থানের বিজয়ের পর যে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে জনগণের ভাষা সামনে এসেছে, সেই ভাষাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হলো। যে দায়িত্ব নিয়ে ওই গ্রাফিতি বাদ দিয়েছে, তার নাম প্রকাশ করতে হবে। অথবা এ দায় ইউনূস সরকারকে নিতে হবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘আগে স্বৈরাচার সরকার আমাদের আদিবাসী বলতে দেয়নি, বারণ করেছে। এখনো কি তাই হবে? আর কোন একটি গ্রুপ এসে এনসিটিবিকে গ্রাফিতি বাদ দিতে বলল, আর তারা বন্ধ করে দিল! সরকার হামলাকারীদের ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেটা করছে না।

আদিবাসী ফোরামের ১২ দফা দাবি

 ১. বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

২. এনসিটিবির সম্মুখে আদিবাসী ছাত্র-জনতা ও অধিকার কর্মীদের উপর বর্বরোচিত হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৩. পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি পুনর্বহাল করতে হবে।

৪. আদিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সময়সূচি ভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

৬. সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

৭. আদিবাসীদের ভূমিতে তাদের সম্মতি না নিয়ে ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, ইকোট্যুরিজম, ইপিজেড বা অন্য কোন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের ভূমি স্থানীয় মূল মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

৮. আদিবাসীদের উপর সকল নিপীড়ন নির্যাতন বন্ধ করাসহ সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

৯. জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহিত আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও এর ১৬৯ নম্বর কনভেনশন অনুসমর্থন ও আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে।

১০. সংসদে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ করতে হবে, স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত পদ বরাদ্দ রাখতে হবে।

১১. চা বাগানে কর্মরত সকল আদিবাসীসহ সকল চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরিসহ তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

১২. প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি এবং দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫% আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।

© all rights reserved - Janajatir Kantho