আদালতের রায় পেলেও জমির মালিকানা পাচ্ছেন না গোবিন্দগঞ্জের আদিবাসীরা

 


গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে আদালতের রায় পেলেও জমির ভোগ দখল করতে পাচ্ছেন সাঁওতাল পল্লীর আদিবাসীরা। উপুর্যুপরি হামলার শিকার হয়েছেন। সাঁওতাল পল্লীর আদিবাসীদের জমি দখল ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। ঢাকা পোস্ট। 

আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এএলআরডি, ব্লাস্ট, বাংলাদেশে আদিবাসী ফোরাম, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, নিজেরা করি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি ঐক্য পরিষদ, পিইউপি, রোপ, স্বপ্ন, পেইস্ট, ছিন্নমূল, পল্লী উন্নয়ন অগ্রগতি, নিত্য বিকাশ কেন্দ্র ও তরণীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার রফিক আহমেদ সিরাজী বলেন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় গত ৩ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে আদিবাসীদের ভোগদখলীয় জমিতে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার লোকেরা মাটি ভরাট করতে শুরু করলে কয়েকজন যুবক তাতে বাধা দেন। তখন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নেকোলাস মুর্মুর নামে এক যুবককে মারধর করেন। খবর পেয়ে ব্রিটিশ সরেন নামে এক যুবক প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান তাকেও লাঠি দিয়ে মারধর করার হুমকি দেন।

এ সময় ব্রিটিশ সরেনের মা ফিলোমিনা হাঁসদা চেয়ারম্যানের লাঠি ফেরাতে গেলে চেয়ারম্যান তাকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। বর্তমানে তিনি বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার জেরে একইদিন রাত ১১টার দিকে ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে চেয়ারম্যানের লোকজন আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে মাটির ঘরের ভেতরের আসবাব, কাপড় ও টিনের চাল পুড়ে গেছে।

এ ঘটনাকে সামনে রেখে ঢাকা, বগুড়া ও গাইবান্ধার ১৭টি ভূমি অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠন সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধান করেছে। প্রতিনিধি দল ভুক্তভোগী, স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছেন।

রফিক আহমেদ সিরাজী বলেন, ভুক্তভোগী ব্রিটিশ সরেন জানিয়েছেন, এই এলাকায় তাদের ৩ একর ৭২ শতক জমি রয়েছে। সি এস খতিয়ানে এই জমির মালিক লক্ষণ হেমব্রম। তিনি এ জমি পেয়েছিলেন রাজা শৈলাস চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে। জমিদারি প্রথা বিলোপ হওয়ার পর লক্ষণ হেমব্রম তার দাদি মাইকা হেমব্রমের নামে এ জমি রেকর্ড করে দিয়েছেন। সেই থেকেই তারা এ জমি ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করে কেরু মণ্ডল নামে এক বাঙালি দাবি করেন তিনি চেক দাখিলা মূলে এ জমির মালিক হয়েছেন। এ নিয়ে ব্রিটিশ সরেনদের পূর্ব পুরুষদের সঙ্গে একটি মামলা হয় তাতে ১৯৮০ সালে সাঁওতালরা তাদের পক্ষে রায়ও পেয়েছেন। কিন্তু তারপরও তারা তাদের জমি ভোগ দখল করতে পারেনি।

কেরু মণ্ডলের নামে এস এ খতিয়ান হলেও আদালতের রায়ে তার মালিক ব্রিটিশ সরেনরা। কিন্তু বিআরএস খতিয়ান হওয়ার সময় কেরু মণ্ডল আদালতের রায় গোপন করে তার নামে তা করে নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন কেরু মণ্ডল বুঝতে পারে কোনো অবস্থায়ই তিনি জমি পাবেন না তখন ব্রিটিশ সরেনদের নামে রেজিস্ট্রি করে তা ফেরত দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মূলত কেরু মণ্ডল প্রমাণ করতে চেয়েছে এ জমির মালিক তিনি। এরপর ওই জমি তার ছেলে হবিবুর মণ্ডল রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেন। সেই অবৈধ কাগজের বলে চেয়ারম্যান এ জমির মালিক দাবি করে আসছেন। যার আদতে কোনো ভিত্তি নেই। চেয়ারম্যান স্থানীয় বিএনপির প্রভাশালী নেতা ছিলেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ৫ জানুয়ারি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিরণ মিত্র চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই

© all rights reserved - Janajatir Kantho