ত্রাণের চেয়েও মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে বেশি চিন্তা

 


স্টাফ রিপোর্টার: শেরপুরের সীমান্তবর্তী আদিবাসী অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ভাটার দিকে পানি নেমে পড়ায় ভাসছে ক্ষত চিহ্ন। এরইমধ্যে বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করছে আদিবাসী ছাত্র সংগঠন সহ বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা। চলছে বানভাসী মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লড়াই।  

ঝিনাইগাতীর মরিয়মনগর, দুধনই, ভাটপাড়া, বারোয়ামারী, বাঁকাকুড়া, ধানশাইল, গজারীকুড়া, সন্ধ্যাকুড়া, শালচূড়ার রাস্তাঘাটে বন্যার ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট। এই গ্রামগুলোর বেশিরভাগ গারো পরিবারের মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় এখন অনেকেই আশেপাশের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকছেন। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে হতভাগ্য মানুষগুলো।

বন্যার পানিতে ভাটপাড়ার ৩৭টি, গজারীকুড়ার ৬টি, দুধনইয়ের ৮টি, বারুয়ামারীর ১৯টি, শালচূড়ার ৮টি গারো পরিবারের মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। উপজেলার বাঁকাকুড়া, ধানশাইল, সন্ধ্যাকুড়া গ্রামেও দেখা গেছে একই চিত্র।

ভাটপাড়ার বাসিন্দা বিকান্ত তেলসী (৬৫) জানান, একপাশে বেড়া আর আরেকপাশে মাটির দেওয়ালের ঘর ছিল তাঁর। বন্যায় সেটিও ধসে পড়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনে কোন রকমে টিনের চালা ঘর করে বসবাস করছেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলা চাম্বুগং (৩২) জানান, তাঁর একটাই মাটির বাড়ি ছিল। সেটিও বন্যার পানিতে ভেঙে পড়েছে। এখন গরুর সাথে খাটের সমান টিনের ছাপড়ি ঘরে ঘুমান।

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগাছাস) নেতা সৌহার্দ্য চিরান বলেন, ‘মরিয়মনগর ও আশেপাশের ৩০০ পরিবারের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ২৮০টি পরিবারের মধ্যে প্রদান করা হয়েছে নগদ অর্থ সহায়তা। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এগুলো খুবই সামান্য। ঘর হারিয়ে কোনমতে টিনের ছাপড়া ঘর করে তারা দিনাতিপাত করছে। খাবার নিয়ে এসব পরিবারের কাছে গেলেও লজ্জায় পড়ে যাই। অনেকেই কান্না করে দিচ্ছে।’

বাগাছাসের এ নেতা আরও বলেন, ‘বন্যার পানি কমে গেলেও আশ্রয়হীন পড়েছে একশোর বেশি পরিবার। ঘর হারিয়ে অনেক পরিবার গোয়াল ঘরে গরু-ছাগলের সাথে মানবেতর জীবনযাপন করছে। রান্না-বান্নার কোন পরিবেশ নেই। বৃষ্টি পড়লে পানি গড়িয়ে পড়ে। খাবার বিতরণ করতে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।’

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আদিবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম বাড়ানো এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন বাগাছাসের এই ছাত্রনেতা।

কোন মন্তব্য নেই

© all rights reserved - Janajatir Kantho