পাহাড়ে ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ এবার হচ্ছে না কঠিন চীবর দানোৎসব


পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তার কারণ দেখিয়ে এবার চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ। রোববার দুপুরে রাঙ্গামাটি বনরূপা মৈত্রী বিহারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বনভান্তের শিষ্য সংঘের সহসভাপতি ভদন্ত সৌরজগৎ মহাথের, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ বান্দরবানের সাধারণ সম্পাদক ভদন্ত তেজপ্রিয় মহাথের, রাজ নিকায় মার্গের সহসভাপতি ভদন্ত জ্ঞানবংশ মহাথেরসহ ১৪টি বৌদ্ধ সংগঠনের প্রধান।

সংগঠনটির সভাপতি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা অনিরাপদ ও অনিশ্চয়তা অনুভব করছি। এই কারণে এ বছর রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, গত ১৮, ২০ সেপ্টেম্বর ও এক অক্টোবর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ হত্যা সংঘটিত হয়েছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তিন জন আদিবাসী নিহত হন। হামলায় বিভিন্ন মন্দির, বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর ও দানবাক্স লুট করা হয়েছে।

তার অভিযোগ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এমন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতোদিন যতো সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তার কোনোটির বিচার হয়নি। নামমাত্র তদন্ত কমিটি করা হয়, যা আলোর মুখ দেখে না। প্রশাসনের প্রতি কোনো আস্থা না থাকার পাশাপাশি বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষুসংঘ উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত।

আশ্বিনী পূর্ণিমাকে প্রবারণা পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে পুরো নভেম্বর মাস কঠিন চীবর দান উদযাপন করা হয়। বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় এই ধর্মীয় আচারের প্রবর্তিত হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়।

ধর্মীয় মতে, এই পদ্ধতিতে চীবর দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয়। তাই এই নিয়ম অনুসারে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদিবাসী নারীরা জুমে উৎপাদিত তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে কাপড় তৈরির পর সেলাই ও রঙ করে চীবর তৈরি করেন। এই চীবর আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই

© all rights reserved - Janajatir Kantho