অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা
উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গারোদের একশোটির বেশি ঘর ভেঙে পড়েছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত শুধুমাত্র গারো জনগোষ্ঠীর ১০০টির বেশি ঘর ভেঙে যাওয়ার
খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলার গারো অধ্যুষিত মরিয়মনগর, দুধনই, ভাটপাড়া, বারোয়ামারী, ধানশাইল, বাঁকাকুড়া, গজারীকুড়া গ্রামের গারো জনগোষ্ঠীর
মাটির ঘরগুলো ক্ষতির শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা
গেছে, গ্রামগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার ভাটপাড়া। গ্রামটির ৩৭টি পরিবারের সবগুলো ঘর নুইয়ে পড়েছে। একেকটি পরিবারের ঘরের সংখ্যা দুই থেকে তিনটি। হঠাৎ করে মাথা গোঁজার
ঠাঁই হারিয়ে অনেক মানুষ পড়েছেন চরম বিপদে। তবে ধসে পড়া ঘরের নিচে চাপা পড়ে কোনো হতাহতের
খবর পাওয়া যায়নি।
পার্শ্ববর্তী দুধনই, মরিয়মনগর, গজারীকুড়া, বারোয়ামারীতেও একই চিত্র। বারোয়ামারীর যুথিকা রাকসাম, আধুনিকা ম্রং,
বণিকা চিরান, লুটিস চিরান, কবিতা ম্রং, সলিন ম্রং, মহিমা চিরান, নির্দেশ চিরান, আলফন্স
চিরান প্রমুখের বাড়ি বন্যার পানিতে একেবারে শুয়ে পড়েছে। এছাড়াও অনেকের ঘর ভেঙেছে আংশিকভাবে।
অনেকের পুকুর ডুবে গেছে।
ধানশাইল, বাঁকাকুড়ার প্রায়
১০টি গারো পরিবারের ঘর ধসে পড়েছে। তবে ঘরগুলো ধসে পড়ার আগেই মানুষ ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে
চলে যান। এতে মানুষের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ভাটপাড়ার বাসিন্দা সৌহার্দ্য
চিরান বলেন, ‘উজানের ঢলে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। আমার গ্রামের
শুধুমাত্র কয়েকটি পাকা ঘর বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। ঘর হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে
আশেপাশের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজনদের বাড়িতে।’
একই গ্রামের ফুলমনি ম্রং বলেন,
‘আমাদের ঘরবাড়ি সব ভাইঙ্গা নিয়ে গেছে। খাওয়ার সমস্যা হচ্ছে। গত দুইদিন ধরে কোন কিছু
খাইতে পারি না। আমরা এখন নিরুপায়।’
ষাটোর্ধ্ব মিটিলা চিসিম বলেন, ‘দুইদিন
ধরে খাওয়া-দাওয়া নাই। কাপড়-চোপড় নাই। সব তলায় গ্যাছে। কেউ আঙ্গরে খবর নেয় নাই।’
দুধনই গ্রামের মৃন্ময় চিরান
জানান, তাঁর গ্রামের প্রায় ৮-১০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে রাতে অনেকেই
তার বাড়িতে আশ্রয় নেন। ঘর হারানো লোকগুলো রীতিমত নির্বাক হয়ে গেছে।
পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার উর্ধ্বে প্রবাহিত হওয়ায় এ বন্যার সৃষ্টি হয়। শেরপুরের সীমান্তবর্তী
উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর কমপক্ষে ১৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট,
বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন