দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% আদিবাসী কোটা চালুর দাবি

 


দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা চালু করার দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, ৬২তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সংগঠনটির রাঙ্গামাটি জেলা শাখা আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।  

সমাবেশে পিসিপি, যুব সমিতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, মহিলা সমিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কর্মীর পাশাপাশি রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দেড় হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশের আগে কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে বনরুপার পেট্রোল পাম্প প্রদক্ষিণ করে ডিসি অফিসের সামনে সমবেত হয়।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, ১৯৬২ পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান যে গণবিরোধী বৈষম্যমূলক শিক্ষা নীতি চালু করেছিল সেটা স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বাংলাদেশে আমরা লক্ষ্য করি। আমরা বারে বারে দেখেছি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের একটা লড়াই প্রতিনিয়ত চলছে। জেলা পরিষদ পুনর্গঠন নয় বরং জেলা পরিষদ পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক নির্বাচন দেওয়া হোক।

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করে সকল প্রকার সরকারি চাকুরিতে ও দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বহাল রাখার দাবি জানান।

পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসীদের জাতিগত পরিচয় বাঙালি হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদিবাসীদের উপর দমন পীড়ন জারি রেখেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক সরকার। আদিবাসীরা একদিন স্বনির্ভর ছিল। কিন্তু তাদেরকে ক্রমাগতভাবে স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ করে, তাদের সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে। 

পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতির দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য, দুর্নীতি ও অনিয়ম হয় মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী অনগ্রসর আদিবাসীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওযার কথা থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করা হয় না। আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা পাহাড়ে নেই। জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী আদিবাসীদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা করার কথা থাকলে তার বাস্তবে করা হয়নি।

সংহতি বক্তব্যে বিএমএসসি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মংগ্রি মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষী আদিবাসী জনগণ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। আদিবাসীদের জন্য সকল প্রকার সরকারি চাকুরিতে বরাদ্দ ৫ শতাংশ কোটা ১ শতাংশে নামিয়ে এনে আদিবাসীদের সাথে চরম বৈষম্য করা হয়েছে।

ছাত্রনেতা টিকেল চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা। তিনি আদিবাসীদের সকল প্রকার সরকারি চাকরিতে ও দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশ কোটা চালু রাখার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

কোন মন্তব্য নেই

© all rights reserved - Janajatir Kantho