তাড়াশে আদিবাসী সুফলভোগীদের পুকুর দখলের অভিযোগ

 

ছবি: কালবেলা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আদিবাসী সুফলভোগীদের পুকুর দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এর প্রতিকার চেয়ে তাড়াশ ইউএনও সুইচিং মং মারমা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বটগাড়ী সপ্তমী পুকুর সুফলভোগী দলের সভাপতি বলরাম উরাওঁ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল বটগাড়ি সপ্তমী পুকুরটি নিমগাছি মৎস্য চাষ প্রকল্পের আওতায় সুফলভোগী সদস্যরা ২০১১ সাল থেকে লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি বটগাড়ি এলাকার প্রভাবশালী মো. সাইফুল ইসলাম ও তার তিন ছেলে মো. আমজাদ হোসেন, মো. শামিম হোসেন, মো. আমিরুল ইসলাম, সাইফুলের ছেলে মো. শফি ও আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মো. রাঙ্গা ওই জলাশয়ে জাল কাগজ করে পুকুরটি নিজেদের মালিকানা দাবি করে তা দখলের চেষ্টা করেছেন।

সুফলভোগী অমল উরাওঁ, চিত্তরঞ্জন উরাওঁ, প্রদীপ উরাওঁ জানান, বর্তমানে লিজ দেওয়া পুকুরে মাছের খাবার, ওষুধ ও পরিচর্যা করতে দিচ্ছে না। বরং প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক পুকুরে থাকা সুফলভোগীদের চাষ করা প্রায় ৩ লাখ টাকার মাছ তুলে বিক্রি করেছেন। এ সময় বাধা দিলে প্রভাবশালীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ ছাড়াও বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

তাড়াশ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সপ্তমীর পুকুরটি ‘খ তপশিল গেজেট থেকে তা অবমুক্ত করার জন্য আব্দুল কুদ্দুসগং তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করেন। আবেদেনের প্রেক্ষিতে গত ২৮ মার্চ তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা খালিদ হাসান স্বাক্ষরিত একটি আদেশপত্রে বটগাড়ি মৌজার আরএস ২৪ নম্বর খতিয়ানটি টেম্পারিং খতিয়ান। নালিশি ভূমিতে আবেদনকারীদের কোনো ভোগদখল নাই। টেম্পারিং খতিয়ান হিসেবে নালিশি ভূমিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত থাকায় কুদ্দুসগংদের অবমুক্ত করা আবেদনটি বাতিল করা হয়। তারপরও ওই প্রভাবশালীরা সুফলভোগীদের পুকুরটি দখলে নেয়।

বিষয়টি নিয়ে তাড়াশ ইউএনও সুইচিং মং মারমা বলেন, খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বোর্ডিং স্কুলে হাজার আদিবাসী শিশুর মৃত্যু

 

ছবি: আল-জাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বোর্ডিং স্কুলে কমপক্ষে এক হাজার আদিবাসী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ও অসুস্থতার কারণে এসব শিশুর মৃত্যু হয়। মার্কিন স্বরাষ্ট্র বিভাগের কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন অনুসারে, ১৮১৯ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পরিচালিত প্রায় ৪০০টি মার্কিন বোর্ডিং স্কুলে এসব শিশুদের মৃত্যু হয়।

মার্কিন অভ্যন্তরীণ সচিব দেব হালান্ডের নেতৃত্বে পরিচালিত এ তদন্তে বলা হয়েছে, ১৮১৯ থেকে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত সমগ্র মার্কিন-মল্লুকে ৪০০টিরও বেশি বোর্ডিং স্কুল ছিল। এর মধ্যে ৬৫টিতে ডজন ডজন আদিবাসী শিশুর সমাধি পাওয়া গেছে।

এছাড়াও সেই সব বোর্ডিং স্কুলের সীমানার মধ্যে বহু সমাধিও ছিল যেগুলো আদিবাসী শিশুদের কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এসব বোর্ডিং স্কুল আদিবাসী শিশুদের শ্বেতাঙ্গ সমাজে আত্তীকরণ বা মিশে যাওয়ার দীক্ষা দিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব স্কুলে আদিবাসী শিশুদেরকে জোর করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হতো। এতে তারা নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিসত্তা একেবাবে ভুলে যেত।

এসব স্কুলগুলোতে শিশুদের ইংরেজি নাম দেওয়া হতো। এমনকি তাদের কৃষিকাজ, ইট তৈরি এবং রেলপথে কাজ করার মতো কায়িক শ্রম করতে বাধ্য করা হতো বলে তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

ন্যাশনাল নেটিভ আমেরিকান বোর্ডিং স্কুল হিলিং কোয়ালিশন অনুসারে, ১৯৬৯ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত কয়েক হাজার শিশুকে জোর করে বোর্ডিং স্কুলে রাখা হয়েছিল। ১৯২৬ সাল পর্যন্ত দেশটির আদিবাসীর প্রায় ৮৩ শতাংশ স্কুল-বয়সী শিশু স্কুলগুলোতে ভর্তি হয়।

এদিকে, এত সংখ্যক আদিবাসী শিশুর মৃত্যুর জন্য মার্কিন সরকারকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

তামিলনাড়ুতে সরকারি স্কুলের নামকরণে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

আদালত

ভারতের তামিলনাড়ুতে সরকারি স্কুলের নামকরণে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন মাদ্রাস হাইকোর্ট। এমনকি সমস্ত সরকারি স্কুলের নাম থেকে ওই ধরনের শব্দ সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। শুক্রবার বিচারপতি এসএম সুব্রহ্মণ্যম এবং বিচারপতি সি কুমারাপ্পানের বেঞ্চে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

শুধু ‘আদিবাসী নয়, নির্দিষ্ট কোনও সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করে, এমন কোনও শব্দই স্কুলের নামে ব্যবহার করা যাবে না। আদালত জানিয়েছে, এতে বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে। ছোটদের স্কুলে যা কাম্য নয়।

সম্প্রতি তামিলনাড়ুর আদিবাসী অধ্যুষিত কলবরায়ণ এলাকায় বিষাক্ত মদ খেয়ে অন্তত ৬৮ জনের মৃত্যু হয়। সেখানকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান সংক্রান্ত একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি চলছিল হাইকোর্টে। শুক্রবার সেখানেই আদালত সরকারি স্কুলের নামে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারে আপত্তি জানায়।

তামিলনাড়ু সরকারকে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এই ধরনের স্কুলের নাম পরিবর্তন করতে হবে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, জনগণের টাকায় চলা সরকারি স্কুলে ‘আদিবাসী শব্দ ব্যবহার কাম্য নয়। কারণ, তাতে ওই সমস্ত স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেদের পৃথক মনে করতে পারে। তাদের মনে হতে পারে, তারা আশপাশের অন্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে আলাদা, কারণ, তারা ‘আদিবাসী। একুশ শতকের সমাজে এই ধরনের বৈষম্য ‘বেদনাদায়ক বলেও মন্তব্য করেছে আদালত।

কলবরায়ণ এলাকায় যে সমস্ত সরকারি স্কুল রয়েছে, তার অধিকাংশের নামেই আগে বা পরে ‘আদিবাসী শব্দটি রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে, এখন থেকে ‘আদিবাসী শব্দ সরিয়ে ওই সমস্ত স্কুলের নামে ব্যবহার করতে হবে শুধুমাত্র ‘সরকারি শব্দটি।

© all rights reserved - Janajatir Kantho