হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণ নিয়ে দুর্বৃত্তরা অনেকভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। বাঙালিদের মতো পাহাড়িরাও অনেকে গুজব খেকো, বিভ্রান্ত হয়। অপহরণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র করে। যারা চক্রান্তকারী এবং জনগণের শত্রু তারা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে নানাভাবে কাল্পনিক কাহিনী বানিয়ে মিথ্যাচার করে।
আজ শনিবার (৪ মে) কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের
প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি সদরে গণবিক্ষোভ ও বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীদের জুতাপেটা-কুশপুত্তলিকা
দাহ কর্মসূচিতে পাহাড়ি নারী নেত্রীরা এসব কথা বলেন। পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত
দুই নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ এ কর্মসূচি পালন
করে।
সকাল ৯টার সময় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজার এলাকা
থেকে ৩০০ জনের অধিক একটি দল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে অবস্থান নেয়। একই
সময়ে রাঙামাটি-মহালছড়ি-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড়ের দিক থেকেও স্লোগান দিতে দিতে মিছিলকারীদের
দল চেঙ্গী ব্রীজ দিয়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছায়।
দীঘিনালা-সাজেক থেকেও প্রতিবাদী নারীদের মিছিল খাগড়াছড়ি
প্রধান সড়ক দিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে এসে মিলিত হয়। সেখানে এক বড় সমাবেশে রূপ নেয়।
মিছিলকারীরা অপরাধীদের প্রতীকী হিসেবে কুশপুত্তলিকাও
বহন করে আনে। মিছিল ও সমাবেশ থেকে ‘অপরাধীদের রক্ষার রায় মানি না’, ‘অপহরণকারী লে.
ফেরদৌস গংদের বিচার চাই’, ‘বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীরা হুঁশিয়ার সাবধান’
স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের
সভাপতি কণিকা দেওয়ান। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমার সঞ্চালনায়
বক্তব্য রাখেন সংগঠটির কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা।
সভায় কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা নিয়ে প্রশাসনের গড়িমসিতে
ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। সমাবেশের এক পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন বিচারের
নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীদের প্রতিকৃতিতে জুতা পেটা ও কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
সভাপতির বক্তব্যে কণিকা দেওয়ান বলেন, বিচারের নামে
প্রহসনের রায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তথা নারী সমাজ মেনে নেবে না। কল্পনা চাকমার
অপহরণ মামলার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই
সংগ্রাম চালিয়ে যাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, ‘কল্পনা তো সাধারণ ছিলেন না। তিনি সংগ্রামী আদর্শে বিশ্বাসী এক রাজনৈতিক কর্মী। কেন তিনি প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাবেন? ষড়যন্ত্রকারীরা বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এরকম গুজব রটায়। ফলে তাদের অপপ্রচারণায় আমাদের মধ্যেও দুর্বলচিত্ত কারোর কারোর দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল।’
নীতি চাকমা দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘কল্পনা অপহরণ মামলা
যে খারিজ করে দেয়া হলো, এটি আমরা মানি না। কল্পনার সন্ধান করতে গিয়ে সমর-সুকেশ-মনোতোষ
গুমের শিকার হয়েছে। রূপন আত্মাহুতি দিয়েছে; আমরা তাদের স্যালুট করি। যদি সাহসের সাথে
আত্মবলিদানকারী কোনো সহযোদ্ধার নাম বলি, তাহলে প্রথম সারিতে রূপনের নাম আসবে ইতিহাসে।
বীরত্বের সাথে বোনের সন্ধান করতে জীবন উৎসর্গ করেছে সে।’
নারী নেত্রী নীতি চাকমা সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন
রেখে বলেন, ‘আমরা কোন দেশে বসবাস করছি, স্বাধীন দেশে বাড়িতে ঘুমাতে পারি না। ১৯৯৬
সালে ১২ জুনে নিজের বাড়িতে বিনা অনুমতিতে একজন ঘুমন্ত মানুষকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে
অপহরণ করে, এখনও তার কোনো হদিস নেই। প্রশাসন এতো টালবাহানা করে যে, তাঁর ভাইয়েরা মামলা
করতে গেলে সাধারণ জিডি নিতেও প্রশাসন নিতে চায়নি।’
সমাবেশ থেকে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাহাড়
থেকে সেনা-সেটেলার প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন