সেদিন (১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে
নতুন বসতিস্থাপনকারী সেটেলার বাঙালীরা তাদের একজন রাখাল বালককে শান্তিবাহিনী হত্যা
করেছে এমন অভিযোগ তুলে আদিবাসীদের উপর আক্রমন করে। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা
বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় তারা এই হত্যাকাণ্ড চালায়।
সেটলাররা ধারালো দা, বটি, কুড়াল দিয়ে নিরীহ আদিবাসীদের
ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ হত্যাকাণ্ডে শিশু, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ, নর-নারী কেউ রেহায় পায়নি।
দুই শতাধিক পাহাড়ি আদিবাসী মারা যায়, অনেকেই নিখোঁজ হন। আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া
হয় প্রায় ৭ শ’র বেশি জুম্মদের বাড়িঘর।
এ ঘটনায় পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রাণের বিজু, বৈসু,
সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উৎসবের আনন্দ মুহূর্তে মহাশোকে পরিণত হয়। ১৩ এপ্রিল
যেদিন উৎসবে মেতে ওঠার কথা সেদিন খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে হাজার হাজার মানুষের
অংশগ্রহণে বিক্ষোভ হয়।
সেটেলার বাঙালিরা শান্তিবাহিনী কর্তৃক রাখাল বালককে
মেরে ফেলার যে অভিযোগ তুলেছিল, তৎসময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, সেদিন কোন রাখাল
বালকের লাশ পাওয়া যায়নি; পাওয়া যায়নি কোন খুনের আলামত।
প্রগতিশীল অনেক লেখক-সাংবাদিকের মতে, এটা ছিল আদিবাসীদের
নিজভূমি থেকে বাস্তচ্যুত করার নীলনকশা। যে নীলনকশা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে লোগাং
গুচ্ছগ্রামের আদিবাসীদের উপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
এ গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং,
বিষু, বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটি খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ১২ ও ১৪ এপ্রিল শোক সভা
পালন করে। গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান
উৎসব বর্জন করা হয়।
লোগাং গণহত্যার ৩২ বছর কেটে গেছে অথচ আজো পার্বত্য
চট্টগামের আদিবাসী জনগণ এ গণহত্যার বিচার পায়নি। আদৌ এ গণহত্যার বিচার হবে কিনা এ
নিয়ে সংশয় রয়েছে আদিবাসীদের মনে।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন