‘কেএনএফ দমনে নিরীহ মানুষ যেন হেনস্তার শিকার না হন’

কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে পরিচালিত যৌথ অভিযানে কোনো নিরীহ মানুষ যেন হেনস্তার শিকার না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।

আজ মঙ্গলবার কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, বৈঠকে বান্দরবানের থানচি ও রুমায় কেএনএফের ব্যাংক ও অস্ত্র লুট এবং তাদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে বলা হয়, ওই ঘটনার পর থেকে সশস্ত্র ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ঘটনার পর থেকে পাহাড়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযানে যাতে কোনো সাধারণ মানুষ হেনস্তার শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়।

কমিটির সদস্য জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) ও সুদত্ত চাকমা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। আহ্বায়কের বিশেষ আমন্ত্রণে পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

কমিটির গত বৈঠকে পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার করা ২৪০টি ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজকের বৈঠকে এই বিষয়ে পুলিশের বদলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে ভূমি সচিব জানিয়েছেন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালা প্রণয়নের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। পার্বত্য অঞ্চলে ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তাব করেন তিনি। এ ছাড়া বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের শূন্য পদে পার্বত্য অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসী, যাঁরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত আছেন, এমন কর্মকর্তাদের প্রেষণে পদায়নের কাজ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।

এ ছাড়া বৈঠকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত বিভাগ/দপ্তরগুলোর বিষয়ে সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে আলোচনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। 

পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

পাহাড়ে শান্তি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। দেশের মানবাধিকার সংগঠনের জোট হিউম্যান রাইটস ফোরামের একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গেলে কমিশনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।

কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান জানান, হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের (এইচআরএফবি) প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে যান। এ সময় কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. আশরাফুল আলম, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক উপস্থিত ছিলেন।

এসময় প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে তাদের বক্তব্য এবং কমিশনের সহায়তায় বিভিন্ন ধরণের কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

প্রতিনিধি দলে নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, মানবাধিকারকর্মী তামান্না হক রীতি ও কাপেং ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে কেএনএফের ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ। প্রতিনিধিদলের উপস্থাপিত দাবীর প্রেক্ষাপটে কমিশনের চেয়ারম্যান পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ, সহিংসতামুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। 

রাঙ্গামাটি বারের সম্পাদক হলেন রাজিব চাকমা

চাকমা

উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হল রাঙ্গামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ নির্বাচন চলে বিকাল তিনটা পর্যন্ত।

নির্বাচনে আবারও সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন এডভোকেট রাজিব চাকমা।

ভোট গণনা শেষে বিকাল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন বারের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত এডভোকেট মিহির বরণ চাকমা।

এ সময় সরকারি নির্বাচন কমিশন হিসেবে দায়িত্বরত এডভোকেট ফরহাদ চৌধুরী ও এডভোকেট জীবন বিকাশ চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া রাঙ্গামাটি আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অন্যান্যদের মধ্যে কোষাধক্ষ্য পদে দর্শন চাকমা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে এডভোকেট মামুন ভূঁইয়া নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সহ-সভাপতি পদে মাকসুদা হক ও সুস্মিতা চাকমা। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট মিলন চাকমা, পাঠাগার সম্পাদক হিসেবে শ্রীজ্ঞানী চাকমা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

 

অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু হাইমংসিং মারমার

অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু হাইমংসিং মারমার

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচিতে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছে হাইমংসিং মারমা নামের একজন ১০ বছর বয়সী শিশু। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না অসহায় পরিবার।

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটি থানচি সদরে আপ্রুমং পাড়ার বাসিন্দা হ্লামংচিং মারমা এর ছেলে। সে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়া করে।

শিশুটির পরিবার জানায়, হাইমংসিং এর শরীরে অদৃশ্য এক রোগ বাসা বেঁধেছে। তার পিঠে তৈলাক্ত মাংসের জমাট ফোলে ছোট থেকে বড় আকারে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। মেরুদণ্ডও বেঁকে গেছে। বর্তমানে সে স্পষ্ট বুঝতে পারে যে, সে বিরল এক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খেলা কিংবা হাঁটতে গেলে ব্যথা অনুভব করতে পারে।

তার মা নুমেসিং বলেন, আমার ছেলের জন্মগতভাবে শরীরের চামড়ায় কালো দাগ ছিল, কিন্তু তৈলাক্ত মাংসের জমাট ছিল না। প্রায় ২ বছরের মাথায় পিঠে ছোট ছোট রক্ত  শক্তের মতো জমাট শুরু করে। দীর্ঘদিন পরে অর্থাৎ ৯ বছরে এসে ছোট থেকে বড় হতে শুরু হয়। সেটি চলতি বছরের ছোট জমাট তৈলাক্ত মাংসের বড় আকারে ধারণ করে মেরুদণ্ড হাঁড় পর্যন্ত বেঁকে গেছে।

শিশুর বাবা হ্লামংচিং মারমা বলেন, আমার ছেলে বিরল এক রোগে খুবই কষ্টের দিন কাটাচ্ছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছি না। ছেলের চিকিৎসার জন্য দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও মানবিক সংস্থাসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চান তিনি। 

উন্নয়নের রাজনীতি ও উন্নয়নের আগ্রাসন: প্রসঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম

উন্নয়নের রাজনীতি ও উন্নয়নের আগ্রাসন

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে পর্যটকরা যখন রকমারি পাহাড়ি খাবার খাচ্ছেন, ঠিক তখনই হয়তো অদূরে অন্য এক পাহাড়ে পাহাড়িরা উপোস করে আছেন।

সাজেকের দুর্গম গ্রামগুলোতে প্রতি বছর খাদ্যাভাব দেখা দেয়। সীমানাঘেঁষা ২০-২৫টি গ্রামের প্রায় চার শত মানুষ বছরের একটা সময় ভাতের অভাবে জঙ্গলের আলু, ফল খাবার সংগ্রহ করে খায়। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে এক অন্যরকম বিসদৃশ্য চিত্র দেখা যায়।

এখন বান্দরবানে আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বীর বাহাদুর এমপি বলেছিলেন, ‘‘বান্দরবানে এক ইঞ্চিও খালি জায়গা রাখা হবে না, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে পার্বত্য এ (বান্দরবান) জেলা।’’

সরকার ও সেনাবাহিনীর একমাত্র এজেন্ডা যেন আদিবাসীদের উন্নয়ন। তারা গণমাধ্যমে একদিকে জোরে উন্নয়নের ঢাক বাজাতে থাকেন, অন্যদিকে আদিবাসী প্রান্তজন চলে যান রাষ্ট্রীয় প্রান্তের ওপারে। পাহাড়িরা যখন দলে দলে ক্ষুধা আর দারিদ্রে জেরবার হয়ে দেশান্তরি হন তখন সরকারের বাজানো উন্নয়নের ঢাক উপহাসের সুরে বাজতে থাকে।

সরকারের এমনই উন্নয়ন যে উন্নয়নের উৎপীড়নে পাহাড়িদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। গত বছর এভাবে মিয়ানমারে পালাতে গিয়ে মাইন বিস্ফোরণে একজন ম্রো আদিবাসী মারা গিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ‘একাত্তর টিভি’তে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে, খাদ্য সংকটের কারণে গত তিন বছরে শতাধিক পরিবারের প্রায় পাঁচশ আদিবাসী দেশ ছেড়ে গেছেন।

লেখক এবং সমাজকর্মী কংচাই মারমা ২০১৮ সালের মার্চ মাসে এক ফেসবুক নোটে দেশত্যাগী ম্রো আদিবাসীদের কথা তুলে ধরেছেন। সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে খাদ্যাভাব, জীবিকার সংকট, জীবনযাপনের সংকটে তাঁরা দেশ ত্যাগ করেছেন। বোমা নয়, গুলি নয়, উন্নয়ন! উন্নয়নের উৎপীড়নে তাঁরা দেশ ছাড়ছেন।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি’তে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে সাজেক পর্যটন এলাকার গ্রামপ্রধান অনিশ্চিত, ভয়ংকর এক ভবিষ্যতের আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘‘আগে যেখানে ১২০ পরিবার পাংখো, লুসাই জনগোষ্ঠীর মানুষ ছিলো এখন সেখানে আছে মাত্র ১০ পরিবার। সামনের দিনে টিকতে পারবো কিনা বলা যায় না।”

প্রতিবেশ ধ্বংসকারী উন্নয়ন আধুনিকায়নের ফলে পাহাড়ি আদিবাসীদের জীবনযাপন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হওয়ায় পাহাড়িরা ভিটেমাটি ছাড়ছেন। লেখক গবেষক হাবিবুর রহমান প্রতিবেশ ধ্বংসকারী উন্নয়নকে পাহাড়িদের খাদ্যাভাব ও দেশত্যাগের জন্য দায়ী করেছেন। বাণিজ্যিক বৃক্ষায়নের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান ব্যাহত হয়। রাবার গাছ, সেগুন গাছের মতো বাণিজ্যিক বৃক্ষায়নের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়। একটা প্রাকৃতিক বনের মাটির উপরে থাকা কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে মাটির অনুজীব সকলেই প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে। পাহাড়িদের জুম চাষ সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর চাষাবাদ পদ্ধতি। ফুলের পরাগায়ণ থেকে শুরু করে ঝড়-বৃষ্টি-রোদ, তার সবকিছুই প্রকৃতি নির্ভর। সারা দেশেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কৃষিজ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তাই জুম চাষের ভবিষ্যত একেবারেই অনিশ্চিত। রাষ্ট্রের উন্নয়ন দর্শন মূলত রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণি ও সংখ্যালঘু জাতিরই উন্নয়ন দর্শন। সেই দর্শন দুর্গম আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দর্শন নয়।

‘ঝগড়াপুর: পুওর পিজ্যান্টস অ্যান্ড উইমেন ইন এ ভিলেজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইয়ের লেখক সমাজবিজ্ঞানী ইয়েনেকে আরেন্স পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের রাজনীতি নিয়ে ‘উইনিং হার্টস অ্যান্ড মাইন্ডস: ফরেন এইড অ্যান্ড মিলিটারাইজেশন ইন দ্য চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের পেছনে যে উন্নয়নের রাজনীতি আছে তা সাধারণত চাক্ষুষ আলোচনায় আসে না। আরেন্স-এর রচনা পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উন্নয়ন রাজনীতি, উন্নয়নের রেটরিক ও জাতীয়তার ন্যারেটিভের সম্পর্ক উন্মোচন করে। সত্তর-আশির দশকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের গণহত্যা আর বিদ্রোহ দমন করা হয়েছে বিদেশি ত্রাণের টাকা দিয়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে উন্নত করতে যে বিদেশি ত্রাণ এসেছিলো, তা ব্যয় হয়েছে পাহাড়ের সামরিকায়ন আর সামরিক উদ্দেশ্যে নির্মিত অবকাঠামো নির্মাণে। সামরিক রণনীতি অনুযায়ীই এইসব অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে।’’

দুস্তর পাহাড়, বন ভেদ করে যে রাস্তা চলে দুর্গম পাহাড়ি জনপদে- সেই রাস্তা দিয়েই গেছে সামরিক বাহিনীর কনভয় এবং বাঙালি সেটলারদের ট্রাক। এই রাস্তা দিয়েই বাংলাদেশের পুঁজিবাদী শোষণের রাস্তা খুলে দেয়া হয়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত দুর্গম এলাকা উন্নয়নের নামে সমুদয় বৈদেশিক ডলার আদিবাসীদের কোনো কাজেই আসেনি, তা কাজে লেগেছে সেনাবাহিনীর ইনসার্জেন্সি দমন করতে, আদিবাসী অর্থনীতি ধ্বংস করতে আর বাজার অর্থনীতির কালো হাত সম্প্রসারণ করতে। কাউন্টার ইনসার্জেন্সির অন্যতম কৌশল হচ্ছে পেসিফিকেশন বা শান্তকরণ, অর্থাৎ ‘শত্রুর মন ও হৃদয় জয় করা’, মানে শান্তির-স¤প্রীতির ধোঁকা-ছলনা। পাহাড়ের আনাচে কানাচে সেনাবাহিনীর বানানো সব মন জয় করা প্রকল্পগুলো ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছু নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রিজ-কালভার্ট-রাস্তা বানানোর উদ্দেশ্য, সেই রাস্তা দিয়ে তাদের সৈন্য ও রসদ পৌঁছানো। স্কুল, মন্দির বানানোর উদ্দেশ্য এলাকার মানুষের মন জয় করা। কমিউনিটির ভিত্তিতে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বানানো- অর্থাৎ, মারমা, ত্রিপুরা, বম, ম্রো ইত্যাদি জাতিগতভাবে শ্রেণিকরণ করে উন্নয়নের পয়সা বিতরণের উদ্দেশ্য জাতিগতভাবে আদিবাসীদের ভাগ করা আর শাসন করা। তাই সাদা চোখে যাকে শান্তি-সম্প্রীতি-উন্নয়ন মনে হয়, তার পেছনে দমন-পীড়ন-শোষণের ষড়যন্ত্র রয়েছে।

রাষ্ট্রের এই উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতিকে উন্মোচিত করা প্রত্যেক দায়িত্বশীল বুদ্ধিজীবির কর্তব্য। রাষ্ট্রের উন্নয়ন রাজনীতির স্থানিক-কালিক ও বহুমাত্রিক রূপভেদ উন্মোচন এই ছোট লেখায় ধারণ করা সম্ভব না। কীভাবে সরকারি কালো পিচের রাস্তা দুর্গম বনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে সেখানকার আদিবাসীদের শোষণ করে, কীভাবে আদিবাসী অর্থনীতিকে বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করা হয়, কীভাবে পর্যটন আদিবাসীদের শোষণ করছে- এর একেকটি বিষয় নিয়েই বিস্তৃত গবেষণা হতে পারে।

এই লেখায় আমি উন্নয়ন আগ্রাসনের সাথে রাষ্ট্রের চলমান উন্নয়ন রাজনীতি এবং পর্যটনের সম্পর্ক সংক্ষেপে তুলে ধরবো। লেখার শুরুতে বলেছিলাম, রাষ্ট্রের উন্নয়ন দর্শন অনুযায়ী গৃহীত নীতিমালা ও পরিকল্পনার বাস্তবায়নের ফলে আদিবাসীদের প্রান্তিকীকরণ হচ্ছে। এসব নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রান্তিক আদিবাসীদের নূন্যতম অংশগ্রহণ নেই। যেমন সংবিধানের ৮২ অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনের ৯ (ড) ধারায়, কালচারাল ট্যুরিজম ডেভেলপ করার জন্য বলা হয়েছে। গবেষক পাভেল পার্থ ‘আদিবাসী সংস্কৃতি মানে পর্যটন ব্যবসা?’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইনটি পাঠে মনে হয় আদিবাসী জনগণের জীবন সংস্কৃতি কেবল জাদুঘর, মঞ্চ বিনোদন আর পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্যই।

প্রতিবছর পার্বত্য এলাকায় লোক শিল্পমেলা থেকে শুরু করে আদিবাসী সংস্কৃতি রক্ষা ও প্রদর্শনীর বহর দেখে মনে হয় আদিবাসী সংস্কৃতি যেন সংখ্যাগুরুর কাছে বিক্রয়যোগ্য পণ্যের পসরা। এই আইনে আদিবাসী সংস্কৃতির বিকাশ ও বাজারজাত করার বিধান থাকলেও তা রক্ষার কোনো কথা নেই। বিকৃতি ও চুরি থেকে আদিবাসীদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-জ্ঞান রক্ষার বিধি-বিধান নেই। বাজারমুখীনতাই আদিবাসী সংস্কৃতি চর্চার শেষ কথা। সংস্কৃতির এই বাজারজাতকরণ বা কালচারাল ট্যুরিজম ও এথনিক ট্যুরিজম আদিবাসী জনপদে ইতোমধ্যেই বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।’’

প্রাবন্ধিক ও গবেষক আলতাফ পারভেজের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম: কারও বিনোদন কারও হুতাশন’ শীর্ষক লেখায়ও পর্যটনের কুফল কিছুটা প্রকাশ পেয়েছে।

রাষ্ট্রের উন্নয়ন পলিসি, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অনেক সময় আদিবাসীদের প্রান্তকিকরণ ঘটায়। রাষ্ট্রের উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে আদিবাসীদের গৃহহীন হওয়া, আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকার সংকট ঘটা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন নয়। কেবল কাপ্তাই বাঁধের ফলেই ষাট হাজার পাহাড়ি গৃহহীন হয়েছিলেন।

কাউন্টার ইনসার্জেন্সির পরিকল্পনা অনুযায়ী জিয়াউর রহমানের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হয়েছিল। উন্নয়ন বোর্ডের রাবার বাগান প্রকল্প, কৃষিজ উৎপাদনের বাণিজ্যিকীকরণের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। কাপ্তাই বাঁধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট- সবই রাষ্ট্রের উন্নয়ন আগ্রাসনের দৃষ্টান্ত।

এই লেখার শুরুতে যেসব অনাহারী আদিবাসীর কথা আমি বলেছি- এরা সবাই উন্নয়ন আগ্রাসনের শিকার। একদিকে তাঁদের খাদ্য সংস্থানের উৎস যেমন ধ্বংস হয়েছে, অন্যদিকে তাঁদের আদিবাসী অর্থনীতি ধ্বংস করে বাজার অর্থনীতি নির্ভর করা হয়েছে। ফলে এসব মানুষদের খাদ্যের জন্য বাজারমুখী হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আদিবাসীদের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বাজার নির্ভর নয়। আদিবাসী অর্থনীতি মূলত সাবজিস্টেন্স ইকোনমি, মার্কেট ইকোনমি নয়। সমতলের একজন চাষী পটল চাষ করেন বা মূলা চাষ করেন সবটা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের জন্য। জুমচাষী পাহাড়িরা জুম চাষ করেন বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে নয়, বরং তা করেন পরিবারের ভরণপোষণের জন্য।

পাহাড়ের প্রতিটা বাজার আদিবাসীরা নয়, বাঙালিরা নিয়ন্ত্রণ করেন। কাঁচা বাজারের ফড়িয়া-বেপারি থেকে শুরু করে পরিবহণ পর্যন্ত। আশির দশকে যে চার লাখ সেটলার বাঙালি নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁরা বাজার অর্থনীতির প্রতিনিধি। তাঁরা পাহাড়ে আসার সময় বাজার অর্থব্যবস্থাকে নিয়ে এসেছেন আর তাকে পাহাড়ের কোনায় কোনায় নিয়ে গেছেন।

‘‘এগ্রেসন অফ ‘ডেভেলপমেন্ট’ অ্যান্ড স্ট্রাগল ফর আইডেন্টিটি: দ্য কেস অফ ন্যাশনাল মাইনরিটিস ইন দ্য সিএইচটি, বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রবন্ধে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ উপরোক্ত পরিস্থিতির ঐতিহাসিকতা ব্যাখ্যা করেছেন। আজও আমরা পাহাড়িদের উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসার কথা শুনতে পাই। উন্নয়নের মূলধারা মানে দুর্গম পাহাড়ের কোনায় পড়ে থাকা বস্তুটাকে জাতীয় বাজারের পণ্য বানিয়ে নিয়ে আসা। পুঁজিবাদী উন্নয়ন মানে রাস্তা, ব্রিজের মতো উপরিকাঠামোর উন্নয়ন, বাজারব্যবস্থার চ্যানেল স্থাপন, যাতে করে সহজে পণ্য পরিচালনা সম্ভব হয়। বাজার বসলে কেউ ক্রেতা হবে, কেউ পণ্য আর কেউ বিক্রেতা। পর্যটনের ফলে যে বেচাকেনা হবে- সেখানে পাহাড়িদের সবকিছুই বিক্রি হবে। পাহাড়ি সংস্কৃতি থেকে শুরু করে যৌনতা। যেহেতু পাহাড়িদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেই, এই বাজারে পাহাড়িদের পণ্য হওয়া ছাড়া আর গত্যন্তর নেই। সুতরাং এই বাজার ব্যবস্থা হবে নয়া শোষণ-নিপীড়নের কৌশল। তাই এই উন্নয়ন আগ্রাসন বা ডেভেলপমেন্ট এগ্রেসনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সিস্টেমেটিক মার্জিনালাইজেশন।

গোটা পর্যটনের প্রসারে পার্বত্য চট্টগ্রামটাই ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির একটা কেন্দ্র হয়ে যাচ্ছে। দুর্গম বনাঞ্চল, আদিবাসী হয়ে যাচ্ছে বেচাকেনার হাট। পর্যটকেরা ভোগ্য পণ্যের মতোই ভোগ করছে আদিবাসীদের প্রতিদিনের জীবনযাপন যেন মানব চিড়িয়াখানা!

সাংস্কৃতিক-নৈতিক-মানবিক মূল্যবোধের ত্বরিত অবক্ষয় ঠেকানো যাচ্ছে না। ঘরের মেয়ে বাজারের মেয়ে হয়ে যাচ্ছে। বাজারে বেচার জন্য বাগানের কাঁঠালের চাইতে নিশ্চয় নারীদেহের দাম বেশি।

লেখার শুরুতেই আমি দেখিয়েছি, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ফলে মানুষের জীবনমানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন না করে, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে, সমাজে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধ্বংস করে রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া উন্নয়ন যজ্ঞের সর্বাত্মক বিরোধিতা করা এখন সময়ের দাবি। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রের কায়েমী মহলের চক্রান্তে খাগড়াছড়িতে বিশেষ পর্যটন জোন গড়ার প্রক্রিয়া গণ-আন্দোলনের মুখে ভেস্তে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন করতে কি শুধু পর্যটনই একমাত্র উপায়? আর কিছু নয়? প্রতি বছর বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাস, বাংলায় যাকে মধু মাস বলা হয়, সেই সময়ে খাগড়াছড়ির রাস্তায় উপচে পড়া ফল পচঁতে থাকে কেবলমাত্র একটি হিমাগারের অভাবে। দরিদ্র জুমচাষী ফসলের দাম পায় না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কৃষিশিল্পের বিকাশ না করে, মানুষের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কেন পর্যটন শিল্পই বিকাশ করতে হবে? আর কোনো শিল্প কি গড়ে উঠতে পারে না সেখানে? কেন এলাকার শিল্প সম্ভাবনা যাচাই না করে হুট করে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় খাগড়াছড়িতে বিশেষ পর্যটন গড়তে গেল সরকার?

এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের রাষ্ট্রচরিত্র, রাষ্ট্রের উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি বা ‘পলিটিক্স অফ ডেভেলপমেন্ট’ নিয়ে জোর আলোচনা হওয়া দরকার। পর্যটন নামের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ দরকার। ২০১৬ সালে যেভাবে গণজোয়ার বিশেষ পর্যটন অঞ্চল রুখেছে, সেভাবে রুখে দিতে হবে উন্নয়ন আগ্রাসন।

লেখক: পাইচিংমং মারমা, ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট। 

জাতীয় টেবিল টেনিসে আলো ছড়ানো তরুণ তু্র্কি রামহিম বম

রামহিম বম

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের প্রত্যন্ত এলাকা রুমার বগা লেক থেকে উঠে এসে জাতীয় পর্যায়ে আলো ছড়াচ্ছেন রামহিম বম। ইতোমধ্যেই হয়েছেন দেশসেরা টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। আন্তর্জাতিক টিটিতে বাংলাদেশের একমাত্র সোনা জয়েও আছে এ পাহাড়ি তরুণ তুর্কির বড় অবদান।

জাতীয় পর্যায়ে জিতে চলেছেন একের পর এক পুরষ্কার। অতি সম্প্রতি জয় করে নিয়েছেন কুল বিএসপিএ স্পোর্টস এওয়ার্ড-২০২৩ এর বর্ষসেরা টেবিল টেনিস খেলোয়াড়ের পদক। এছাড়াও উদীয়মান এ টেনিস তারকার অর্জনের ঝুড়িতে রয়েছে আরো অনেক জাতীয় পুরষ্কার এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন ও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা।

বাংলাদেশের টিটি-সম্পৃক্ত অনেকেই রামহিমকে বাংলাদেশের মা লং বলে ডাকেন। মা লং হচ্ছেন চীনের বিখ্যাত টিটি খেলোয়াড়।

টেবিল টেনিসে রামহিমের হাতেখড়ি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়েই। স্কুলে শুরুর সময় প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছেন বাংলাদেশ টেবিল টেনিসের জাতীয় কোচ হাফিজুর রহমান ও ফেডারেশন সদস্য এনায়েত হোসেন। ২০১৬ সালে ঢাকায় আসেন উত্তর কোরিয়ান টিটি কোচ কিম সুং হ্যান ও প্রশিক্ষণ সহযোগী কিম সুগান। তাঁদের দুজনকে বিকেএসপির পাশাপাশি কোয়ান্টাম স্কুলেও পাঠানো হয়। বিদেশি প্রশিক্ষকের দেওয়া প্রশিক্ষণের সুফলও মেলে দুই বছর যেতে না যেতেই। ২০১৮ সালে বিকেএসপি কাপে চ্যাম্পিয়ন হন রামহিম। তখন অনেকের নজরে আসেন তিনি।

২০২০ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকায় চলে আসেন রামহিম লিয়ান বম। বাংলাদেশ পুলিশের টিটি দলে নাম লেখান। করোনা শেষে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় বসে প্রিমিয়ার টেবিল টেনিস লিগ। সেখানে রানার্স আপ হয় রামহিমের দল। একই বছর এপ্রিলে বাংলাদেশ গেমস টিটিতে ছেলেদের দলগত সোনা জেতে পুলিশ। সেখানেও ভালো খেলেন রামহিম। ফেডারেশন কাপ টিটিতেও ভালো খেলেছেন। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় টেবিল টেনিস দলে সুযোগ পান। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনিই প্রথম টেবিল টেনিসে জাতীয় দলে যুক্ত হন।  

জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। ৩৯ তম জাতীয় সিনিয়র টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৩ এ পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন, বালক এককে চ্যাম্পিয়ন এবং মিক্স ডাবলস এ রানার্স আপ পুরষ্কার অর্জন করেন। ফেডারেশন কাপ-২০২১ এ পুরুষ এককে রানার্স আপ এবং পুরুষ দলগত বিভাগে হন চ্যাম্পিয়ন। নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২১ এ পুরুষ দলগত বিভাগে গোল্ড মেডেল অর্জন করেন।

এতো অর্জনের পরেও এখানেই থেমে যেতে চান না এ উদীয়মান টেনিস তারকা। আরো সামনে এগিয়ে যেতে চান। সেজন্য নিয়মিত করে যাচ্ছেন কঠোর অনুশীলন। 

কাঁচালং নদীতে নিখোঁজ আদিবাসী শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

কাঁচালং নদী

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের কাঁচালং নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে স্থানীয়দের সহায়তায় ভাসমান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

এর আগে শনিবার বেলা ২টার দিকে গঙ্গারাম এলাকায় কাচালং নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় শিশুটি।

গঙ্গারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল জয়ন্তী। সে গঙ্গারাম এলাকার মিসন চাকমার মেয়ে।

সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার দুপুর ২টায় মায়ের সঙ্গে কাচাঁলং নদীতে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যায় জয়ন্তী। খবর পেয়ে স্থানীয়রা অনেক খোঁজাখুজি করলেও তার সন্ধান মেলেনি। পরে রোববার ভোরে মরদেহ নদীর ঘাটে ভেসে উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) শিরীন আক্তার শিশু জয়ন্তীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন এবং তার পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

রাবিপ্রবির প্রক্টর হলেন ড. নিখিল চাকমা

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ড. নিখিল চাকমা

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) নতুন প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক ড. নিখিল চাকমা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিনটি শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী এক বছরের জন্য নতুন প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে ড. নিখিল চাকমা ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে ড. নিখিল চাকমা রাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, সবার সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। রাবিপ্রবিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী সকলের প্রয়োজন আছে।

নবনিযুক্ত প্রক্টর ড. নিখিল চাকমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি ২০২০ সালে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগে যোগদান করেন।

কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজ, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের উৎসাহিত করা হয়েছে

কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজ

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। আজ এক যৌথ বিবৃতি সংগঠন দুটি এ প্রতিবাদ নিন্দা জানায়।

পিসিপির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্তর চাকমা প্রেরিত সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ রাঙ্গামাটির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা বেগম মুক্তা কর্তৃক পাহাড়ের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটি খারিজের আদেশ দেয়া হয়। কল্পনা চাকমার অপহরণে চিহ্নিত অপরাধীদের দায়মুক্তি দিতে আদালতের এই আদেশ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে মামলা চলার পরও অপহৃত কল্পনা চাকমার হদিশ দিতে না পারা ও অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস এবং ভিডিপি সদস্য নূরুল হক ও সালেহ আহমেদকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে না পারা প্রশাসন ও বিচার বিভাগ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ না করে উল্টো অপরাধীদের দায়মুক্তি দিতে প্রশাসনের অপতৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। মামলাটি খারিজের মধ্যে দিয়ে প্রশাসন পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান বিচারহীনতার এক চরম দৃষ্টান্ত প্রদর্শন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের উৎসাহিত করেছে।

পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন আরও মনে করে, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের এ ধরণের পক্ষপাতমূলক আচরণ পার্বত্য চট্টগামের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতিকে সংকটাপন্ন করে তুলবে। তাই প্রশাসন ও বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছে তারা। 

‘অপরাধ দমনের নামে একটি জাতিগোষ্ঠীকে দমন করা হচ্ছে’

বম জনগোষ্ঠী পিসিপি

বান্দরবানে ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরণ, ডাকাতি ও পুলিশ-আনসারের অস্ত্র লুটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বম জাতিসত্তার জনগণের ওপর নিপীড়ন ও শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল ৪ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্ত্বরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমার সভাপতিত্ব ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়ের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মিখা পিরেগু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান বক্তব্য রাখেন।   

সমাবেশে বক্তারা বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের উপর স্মরণকালের ভয়াবহ নিপীড়ন জারি রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প সম্প্রসারণ, ভূমি বেদখল, উন্নয়নের নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে তাদের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেওয়া হয় একের পর এক নির্যাতনের সংস্কৃতি চালু রেখেছে।

ছাত্রনেতাদের অভিযোগ, গত কয়েকদিনে বান্দরবানে এক নাটকীয় ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়ে বিপুল পরিমানে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি তোলার বিষয়টি তা প্রমাণ করে। গত ২ ও ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, ম্যানেজারকে অপহরণ, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অস্ত্র লুটকে কেন্দ্র করে এই গণনির্যাতন চালানো হচ্ছে; তা শাসকগোষ্ঠীর চক্রান্ত ও সাজানো নাটকের বহিঃপ্রকাশ। পাহাড়ে অতীতের ঘটনা বলে দেয় শাসকগোষ্ঠীর মদদ ছাড়া শহর অঞ্চলে দিন দুপুরে সশস্ত্র মহড়া বা হামলা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

সমাবেশে জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ অভিযানে এ পর্যন্ত বম জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ ৬০ জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত দুইজন অন্তঃসত্তা নারীও রয়েছেন। এছাড়া তিন উপজেলায় চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহনের ওপর সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অপরাধ দমনের নামে একটি জাতিগোষ্ঠীকে দমন করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করা হচ্ছে।

সমাবেশে বম জাতিসত্তার নিরীহ জনগণের ওপর নিপীড়ন ও গ্রেফতার বন্ধ এবং আটককৃতদের নিঃশর্তে মুক্তির দাবি জানানো হয়। 

কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজ, সচেতন মহলে ক্ষোভ


কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজ
কল্পনা চাকমা। ছবি: সংগৃহীত

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলায় পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদীর দেওয়া আপত্তি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ২৮ বছর আগের ওই ঘটনায় বাদীর তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করে মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে রাঙামাটির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা বেগম মুক্তা এ আদেশ দেন।

কল্পনা চাকমা অপহৃত হলেও কে বা কারা করেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে আদালত পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনই বহাল রেখেছেন। প্রতিবেদনে কারও দায় পাওয়া না যাওয়ায় ২৮ বছর আগের মামলাটির অবসান হচ্ছে।

ছয় বছর আগে ২০১৮ সালে মামলার বাদী কালিন্দী চাকমা আদালতে জেলা পুলিশ সুপারের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন করে পুনঃতদন্ত চেয়েছিলেন। সেই আবেদনটিই নামঞ্জুর করা হয়েছে।

তবে মামলার বাদী কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা আদালতের এ আদেশে ক্ষুব্ধ। তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।

আদেশের পর কালিন্দী চাকমা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “অপহরণের ২৮ বছর পরে এই আদেশ দুঃখজনক। আমি আশা করেছিলাম, ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু এই আদেশে হতাশ। আমি উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য আবেদন করব।”

১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাতে বাঘাইছড়ি থানার নিউ লাল্যাঘোনা থেকে তুলে নেওয়া হয় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে। এরপর তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ঘটনার পরদিন বাঘাইছড়ি থানায় মামলা হয়।

সেসময় অপহরণের জন্য রাঙামাটিতে তখনকার কর্মরত সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কল্পনার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়। পাহাড়িসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিও দাবি করা হয়।

এদিকে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমার নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য এন্টি চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আদালত কর্তৃক পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ যারপরনাই পক্ষপাতদুষ্ট, চিহ্নিত অপহরণকারী ও তার দোসরদের দায়মুক্তি দেওয়ার ন্যাক্কারজনক নজির এবং তা কারোর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।

একইভাবে সচেতন মহলে এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট সাইদিয়া গুলরুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘এই আদেশের মধ্যে দিয়ে সন্দেহভাজন সকল ব্যক্তি তথা অভিযুক্ত লেফটেনান্ট ফেরদৌসের দায়মুক্তি ঘটল এবং মামলাটি ডিসমিস করা হলো।’’

মামলা খারিজ করে দেওয়া হলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি আরো লিখেন, ‘‘সংগ্রাম চলছে, চলবে। কল্পনা চাকমার ভাষায় বলছি, রণাঙ্গনের সারিতে আমরা হবো সৈনিক।’’

বান্দরবানে গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি

বান্দরবানে গণগ্রেপ্তার বম

বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানের নামে বম জাতিসত্তার সাধারণ নাগরিকদের গণগ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ রবিবার ইউপিডিএফভুক্ত সংগঠনসমূহ রাঙামাটির বাঘাইছড়ি এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়িতে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।

বাঘাছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী এলাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।

এতে পিসিপি’র বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি কিরণ চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সত্য চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি অমিতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পদাক নিকেল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য অপর্ণা চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে নাটকীয় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানের নামে সেখানকার বম জাতিসত্তার সাধারণ জনগণকে গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।

সমাবেশে জানানো হয়, ইতোমধ্যে সেখানে অন্তত ৭০ জন নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী ও গর্ভবর্তী নারীও রয়েছেন। শুধু তাই নয়, সেখানকার জনগণকে ৫ কেজির অধিক চাল কেনা ও বহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যার ফলে প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত গ্রামবাসীরা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে বান্দরবানে যৌথ অভিযানের নামে গণগ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করা এবং গ্রেপ্তারকৃত সাধারণ গ্রামবাসীদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।

একই দাবিতে দীঘিনালা ও পানছড়িতে এই তিন সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

বক্সিংয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬০০ ধাপ ওপরে উঠে এলেন সুরোকৃষ্ণ চাকমা

বক্সিংয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬০০ ধাপ ওপরে উঠে এলেন সুরোকৃষ্ণ চাকমা
সুরোকৃষ্ণ চাকমা। ছবি: সংগৃহীত

পরপর দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ জেতার কারণে বক্সারদের র‍্যাঙ্কিংয়ে বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে সুরোকৃষ্ণ চাকমার। সর্বশেষ চলতি বছর থাইল্যান্ড ও ভারতের বক্সারকে হারিয়ে এক লাফে পেশাদার বক্সিংয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬০০ ধাপ ওপরে উঠে এসেছেন তিনি।

সুখবরটি সুরো নিজেই তার ফেসবুকে জানিয়েছেন। উচ্ছ্বসিত সুরো লিখেছেন, 'একটা ভালো খবর শেয়ার করি সবার সাথে। গত দুইটি আন্তর্জাতিক খেলা পর পর জেতার কারণে আমার বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং ৮০০ থেকে ২০০-তে চলে আসছে। সবার আশীর্বাদ, দোয়া, ভালোবাসা এবং আমি যদি সুস্থ থাকি সামনে আরও ভালো কিছু হবে আশা করছি।' 

এখন পর্যন্ত আটটি ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই জিতেছেন এ বক্সার।

এর আগে ৮০০ এর ঘরে ছিল সুরোকৃষ্ণ চাকমার র‍্যাঙ্কিং। তার বর্তমান র‍্যাঙ্কিং ২২৪। এই তালিকা মূলত লাইটওয়েট বক্সারদের। যেখানে মোট ২২৮৩ জন পেশাদার বক্সার রয়েছেন সারা বিশ্বে। তাদের মধ্যেই সুরোকৃষ্ণ চাকমার অবস্থান বর্তমানে ২২৪ নাম্বারে। 

সুরোকৃষ্ণ চাকমার পরবর্তী বক্সিং ম্যাচ ২৫ মে, ঢাকায়। প্রতিপক্ষ চীনের একজন বক্সার। সেই লড়াইয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি। 

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্বামীসহ আদিবাসী নারীর হাত ভেঙ্গে দিল দুর্বৃত্তরা

আদিবাসী নারী ধর্ষণ

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্বামীসহ এক আদিবাসী নারীর হাত ভেঙ্গে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়নের রেমা কালেঙ্গারে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে তারা চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার দুইদিন পার হলেও এ ঘটনায় এখনো থানায় মামলা হয়নি। মামলা না দিতে এক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা খলিল মিয়া ও তার বাহিনী ভুক্তভোগী নারীকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবারটি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার দিকে রাস্তা দিয়ে বাড়ি যাওয়ায় পথে একই এলাকার ইউপি সদস্য খলিল মিয়ার ভাতিজা মেহেরুল্লার ছেলে মারুফ মিয়া ও ইসমাইল হোসেনের ছেলে এমতাজ মিয়া ওই নারীর গতিরোধ করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা মহিলাটির গালে মুখে কামড়ানো ছাড়াও শারীরিকভাবে শ্লীলতাহানি করে এবং পিটিয়ে তার হাত ভেঙে দেয়।

এ সময় তার চিৎকারে স্বামী এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা রাতে তাদের উদ্ধার করে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্ত দেববর্মা, সিলেট আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জনক দেববর্মা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দুর্বৃত্তদের বিচার দাবি করেছেন। তারা চুনারুঘাট থানায় মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। 

আদিবাসী যুবককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৬

আদিবাসী যুবক

ঝিনাইদহে স্বাধীন বিশ্বাস নামের এক আদিবাসী যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে র‌্যাব এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন সজীব বিশ্বাস (২০), বিজয় বিশ্বাস (১৮), সুশান্ত বিশ্বাস (৩৫), সুভাষ বিশ্বাস (৪০), প্রসেনজিৎ বিশ্বাস (২৬), পলাশ বিশ্বাস (১৬)। আসামিদের প্রত্যকের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার ভগবান নগরে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঝিনাইদহ র‌্যাব কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাইম আহমেদ জানান, ১৪ এপ্রিল রোববার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে শৈলকুপার দুধসর ইউনিয়নের ভগবাননগর গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের দুপক্ষের মধ্যে চড়ক পুঁজা অনুষ্ঠান নিয়ে তর্কাতর্কি হতে থাকে।

এক পর্যায়ে ওই গ্রামের অতুল বিশ্বাসের ছেলে রিপন বিশ্বাস ও পুতুল বিশ্বাসের ছেলে শিপন বিশ্বাস লাঠি দিয়ে নিহত স্বাধীন বিশ্বাস ও তার বাবা সুনিল বিশ্বাসের উপর চড়াও হয় এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করে।

এতে স্বাধীন বিশ্বাসের মাথায় লাঠির আঘাত লাগলে সে গুরুতর আহত হয়। তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যায়। এই ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জন পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 

পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাজন–এ আছে ঔষধি গুণ

পাজন রান্না কীভাবে করতে হয়

বিজু, বৈসুক, সাংগ্রাই, বিষু, বিহু, সাংক্রান উৎসবে মেতে উঠেছে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম। আর এ উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হরেক রকম সবজি দিয়ে রান্না করা খাবার–পাজন। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কথিত আছে, এ পাজন তৈরি করতে প্রায় ১০৭ প্রকার পাহাড়ি সবজি লাগে।

তবে সময়ের বিবর্তনে অনেক সবজি বাজারে পাওয়া না যাওয়ায় বর্তমানে ৩০-৪০ প্রকার সবজি দিয়ে সুস্বাদু খাবার ‘পাজন’ রান্না করা করা হয়। উৎসবে এই ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে পাহাড়িদের ঘরে ঘরে আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।

এই পাজন রান্নার ঐতিহ্য কয়েক’শ বছরের। পাহাড়ে বাস করা পাহাড়ি সব সম্প্রদায়ই এটি রান্না করে থাকে। মূলত পাজন শব্দটি চাকমারা ব্যবহার করেন। তবে জাতিভেদে এর নাম রয়েছে আলাদা। মারমা ভাষায় পাজনকে হাং-র বলে, ত্রিপুরা ভাষায় বলে মৈজারবং, চাক ভাষায় কাইনবোং বলে।

অনেকের মতে, পাজন শব্দটি এসেছে বাংলা শব্দ ‘পাঁচন’ থেকে। শব্দগত মিল থাকলেও বাঙালির পাঁচনের সঙ্গে পাজনের পার্থক্য রয়েছে রন্ধনপদ্ধতি ও স্বাদে। পাজনে শুঁটকিসহ বিভিন্ন ধরনের শুকনো মাছও ব্যবহার করা হয়। তাই পাজনের স্বাদ একেবারেই আলাদা।   

পাজন রান্নায় বাজারে পাওয়া যায় এমন সবজি ছাড়াও স্বাদ বাড়ায় নানা ধরনের বুনো সবজি, আলু, কন্দ ও ফুল। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ প্রকার বা তারও বেশি সবজি দিয়ে পাজন রান্না করা হয়। হরেক রকমের সবজি মিশ্রণ করার কারণে খাবারটিতে রয়েছে ঔষধিগুণ।

প্রচলন আছে, সাত বাড়ি ঘুরে নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে তৈরি এই পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগ ব্যাধিমুক্ত থাকা যায়। তাই এটি পাহাড়িদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। 

মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু, চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত

সাংগ্রাই উৎসব কি

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হল মারমা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই। এ উপলক্ষে বান্দরবান শহরের ঐতিহ্যবাহী রাজারমাঠ এলাকা থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নানা বয়সের মানুষ অংশ নেন।

শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং। এ সময় সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী সবাইকে বাংলা নববর্ষ ও সাংগ্রাই-এর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বান্দরবানে সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব সবকিছুই আছে। তাই পরিবেশের প্রশ্ন তোলার কোনো প্রয়োজন নেই।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী, পৌর মেয়র মো. শামসুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অমল কান্তি দাশ প্রমুখ।

শোভাযাত্রার পরে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বয়স্ক পূজার মধ্য দিয়ে সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিদের সম্মান জানানো হয়।

এবারের উৎসবের স্লোগান ‘প্রতিটি ফোঁটা-ই হোক শান্তির দূত, পৃথিবী হোক শান্তিময় জলধারা। এ উৎসব আজ ১৩ এপ্রিল শুরু হয়ে চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত। মৈত্রী পানি বর্ষণ এবং নানা খেলাধুলার মাধ্যমে এই মাহা সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসবের শেষ হবে। 

ময়মনসিংহে ‘মান্দি মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’–এর উদ্বোধন

মান্দি মিউজিক ফেস্টিভ্যাল

ময়মনসিংহে দুইদিনব্যাপী আয়োজিত ‘মান্দি মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’–এর উদ্বোধন হয়েছে। আজ শনিবার (১৩ এপ্রিল) বেলা এগারোটায় শহরের কারিতাস অফিস প্রাঙ্গণে আয়োজনের শুভ উদ্বোধন হয়।

উদ্বোধনের আগে গ্রিকার (মান্দি যুদ্ধ নৃত্য) মাধ্যমে অতিথিদের বরণ করে নেন আয়োজনের শিল্পী-কলাকুশলীরা।

এসময় ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পল পনেন কুবি সিএসসি, কারিতাস বাংলাদেশ ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক অপূর্ব ম্রং, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মৃনাল মুর্মু সাংমা, শিল্পী যাদু রিছিল, ছড়াকার ও ছাত্রনেতা লিয়াং রিছিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দুইদিনব্যাপী আয়োজিত এ উৎসবের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মেঘালয়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল নকপান্থে। মেঘালয় সহ পুরো ইন্ডিয়াতেই তাদের রয়েছে বিশাল ফ্যানবেজ। ইতোমধ্যেই ব্যান্ড দলটির সদস্যরা ফেস্টিভ্যালে যোগ দিয়েছেন। তারা দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ আগামীকাল সন্ধ্যায় পারফর্ম করবেন। 

জানা গেছে, আয়োজনের প্রথমদিন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও গসেরঙ কম্পিটিশন (মান্দি ছড়া প্রতিযোগিতা); রেরে, সেরেনজিং, আজিয়ার মতো মান্দি লোকগীতি পরিবেশিত হবে। 

এছাড়াও সন্ধ্যায় ব্যান্ড দল দ্য রাবুগা, অন্তু রিছিল, টগর দ্রং, লাক্সমী থিগিদী সহ অনেকেই গান পরিবেশন করবেন।

নদীতে ফুল ভাসিয়ে চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যাদের বিজু-বিষু উৎসব শুরু

বিজু-বিষু উৎসব

নদী-হ্রদে ফুল ভাসিয়ে ‘ফুল বিজু উদযাপন শুরু হয়েছে তিন পার্বত্য জেলায়। আজ শুক্রবার থেকে শুরু হল চাকমা জনগোষ্ঠীর তিন দিনের প্রাণের বিজু উৎসব।

পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বৈসু, মারমারা সাংগ্রাই, ম্রোরা চানক্রান, খিয়াংরা সাংগ্রান, খুমিরা সাংক্রাই ও তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু উৎসব পালন করে।

ফুল বিজুতে সম্মিলিত হয়ে সকালে চাকমা ছেলে-মেয়েরা নদী-হ্রদে ফুল দিয়ে মা গঙ্গাকে পূজা করেন। পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে ও নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এ সময় তারা সবার মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন।

এ উৎসবে চাকমারা বিভিন্ন প্রকারের সবজি দিয়ে পাজন নামের একটা তরকারি রান্না করে। এটা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার।

উৎসবে নতুন কাপড় পরিধান করে দলবেঁধে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ায় তরুণ-তরুণীরা। তাছাড়া সাধ্য অনুসারে ঘরে ঘরে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করে বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এমনকি কারোর সঙ্গে অতীতে বৈরিতা বা ঝগড়া, মনোমালিন্য থাকলেও এদিন সবাই ভুলে গিয়ে একে অপরকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে পিঠাসহ হরেক রকম খাবার পরিবেশন করে।

তিন পার্বত্য জেলায় ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে, যা দেশের অন্য কোনো জেলায় নেই। এগারোটি জাতিসত্তার নানা বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, সংস্কৃতির সম্মিলন উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। 

কেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রীকে তাৎক্ষণিক বদলি

নাথান বমের স্ত্রী

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বমের স্ত্রী নার্স লাল সমকিম বমকে বান্দরবানের রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, নার্সিং সেবা-১ শাখার গত ৮ এপ্রিল এক স্মারকের আলোকে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স লাল সমকিমকে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলির আদেশ দেওয়া হয়।

একই চিঠিতে, একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নার্স দীপালী বাড়ৈ নামে আরও এক নার্সকে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।

পরিপত্রে জানানো হয়, বদলিকৃত সিনিয়র নার্সরা ৯ এপ্রিলের মধ্যে কর্মস্থলে আবশ্যিকভাবে যোগদান করবেন, নাহলে ৯ এপ্রিল তারিখের অপরাহ্নে স্ট্যান্ড রিলিজ বলে গণ্য করা হবে।

বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক লাল সমকিম ও দীপালী বাড়ৈ নামে দুই নার্সকে বান্দরবানের রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি: ‘গোটা বম জাতিকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছে’

বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি

বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি, ম্যানেজারকে অপহরণ-উদ্ধার ও অস্ত্র লুটের পরিপ্রেক্ষিতে গোটা বম জাতিসত্তার জনগণকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক থুইলাপ্রু মারমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার, নির্বিচারে ধরপাকড়, ছুটিতে ঘরমুখী শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়া, হয়রানি ও জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। পাহাড়ে ঐতিহ্যবাহী বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু উৎসবলগ্নে, রুমা ও থানচির মত দুর্গম এলাকায় চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এতে শুধু বম জাতিসত্তাভুক্ত সম্প্রদায়ের লোক নয়, গোটা এলাকার সাধারণ মানুষের জনজীবনের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিবৃতিতে জাতিগত বিদ্বেষ সৃষ্টি, নির্বিচারে ধরপাকড় ও দমন-পীড়ন সমস্যার সমাধান নয় এবং তা কখনই শুভ ফল বয়ে আনতে পারে না বলে দাবি করা হয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নীতি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম সভাপতি জিকো ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক বরুণ চাকমা স্বাক্ষর করেছেন। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতের নাটক সাজানো হয়: রাজা দেবাশীষ রায়

রাজা দেবাশীষ রায়

আমাদের অঞ্চলে (পার্বত্য চট্টগ্রাম) মাঝেমধ্যে কৃত্রিমভাবে সংঘাতের নাটক সাজানো হয়। এইসব নাটকের যদি অবসান না হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হতে পারে না। জুম্ম হিসেবে, পাহাড়ি হিসেবে, আদিবাসী হিসেবে, বাংলাদেশী হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে থাকতে পারবো না।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্বরে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, চাংক্রান, বিহু উপলক্ষ্যে আয়োজিত উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চিফ আরো বলেন, ‘আমাদের যেমন বঞ্চনা রয়েছে, আবার আশার কথাও বলতে হবে। আমরা অবশ্যই যারা বঞ্চিত তাদের পাশে দাঁড়াব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলব। কিন্তু আমাদের আশার বাণীও শোনাতে হবে; যাতে পরবর্তী প্রজন্ম নিজেদের শক্তি-উদ্যম নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।’

অনুষ্ঠানে সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘আমাদের জীবন আমাদের নয়ন; কারো দ্বারা পরিচালিত হয়। পার্বত্যবাসী জুম্মরা বাংলাদেশের শত্রু নয়, বাংলাদেশের পথের কাটা নয়। বাংলাদেশের আদিবাসীরা বরঞ্চ বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে। বাংলাদেশের মান সম্মান বাইরে থেকে নিয়ে আসে। আগামী বছর আমরা আরও মন-প্রাণ খুলে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু উদযাপন করতে পারব সেই প্রত্যাশা করছি।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা বলেন, আমরা অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন চাই। কিন্তু আদিবাসীরা সেই উন্নয়ন চায় না যে উন্নয়ন আমাদের ক্ষতির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এসময় তিনি বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি সীমান্তে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের নামে দুটি পাহাড়ি গ্রাম উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানান।

এদিন সকালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্বরে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ও শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, চাংক্রান ও বিহু উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে নারী অধিকারকর্মী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট চঞ্চু চাকমা, এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধনের পর আদিবাসী তরুণ-তরুণীদের পরিবেশনায় ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা শেষে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেন পাহাড়ি তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ। রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে র‌্যালিটি শুরু হয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়। 

লোগাং গণহত্যা দিবস আজ: পাহাড়িদের বর্ষবরণের আনন্দ যেদিন মহাশোকে পরিণত হয়

লোগাং গণহত্যা দিবস

আজ লোগাং গণহত্যা দিবস। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ কালো দিন। ১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল যখন পুরো পার্বত্য এলাকায় বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উৎসবে বিরাজ করছে আনন্দমুখর পরিবেশ; তখন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং এলাকায় সংঘটিত হয় এক নৃশংস গণহত্যা। যা স্থানীয়, জাতীয় পরিসর ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও পরিচিতি পায় ‘লোগাং গণহত্যা’ নামে।

সেদিন (১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন বসতিস্থাপনকারী সেটেলার বাঙালীরা তাদের একজন রাখাল বালককে শান্তিবাহিনী হত্যা করেছে এমন অভিযোগ তুলে আদিবাসীদের উপর আক্রমন করে। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় তারা এই হত্যাকাণ্ড চালায়।

সেটলাররা ধারালো দা, বটি, কুড়াল দিয়ে নিরীহ আদিবাসীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ হত্যাকাণ্ডে শিশু, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ, নর-নারী কেউ রেহায় পায়নি। দুই শতাধিক পাহাড়ি আদিবাসী মারা যায়, অনেকেই নিখোঁজ হন। আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয় প্রায় ৭ শ’র বেশি জুম্মদের বাড়িঘর।

এ ঘটনায় পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রাণের বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উৎসবের আনন্দ মুহূর্তে মহাশোকে পরিণত হয়। ১৩ এপ্রিল যেদিন উৎসবে মেতে ওঠার কথা সেদিন খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ হয়।

সেটেলার বাঙালিরা শান্তিবাহিনী কর্তৃক রাখাল বালককে মেরে ফেলার যে অভিযোগ তুলেছিল, তৎসময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, সেদিন কোন রাখাল বালকের লাশ পাওয়া যায়নি; পাওয়া যায়নি কোন খুনের আলামত।

প্রগতিশীল অনেক লেখক-সাংবাদিকের মতে, এটা ছিল আদিবাসীদের নিজভূমি থেকে বাস্তচ্যুত করার নীলনকশা। যে নীলনকশা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে লোগাং গুচ্ছগ্রামের আদিবাসীদের উপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।

এ গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটি খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ১২ ও ১৪ এপ্রিল শোক সভা পালন করে। গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উৎসব বর্জন করা হয়।

লোগাং গণহত্যার ৩২ বছর কেটে গেছে অথচ আজো পার্বত্য চট্টগামের আদিবাসী জনগণ এ গণহত্যার বিচার পায়নি। আদৌ এ গণহত্যার বিচার হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে আদিবাসীদের মনে। 

থুইনুই মারমা যোগ হচ্ছেন বাফুফের চুক্তিতে

থুইনুই মারমা

গেল সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ও সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স দেখিয়ে ৬ জন নারী ফুটবলার জায়গা করে নিচ্ছেন বাফুফের বেতনের আওতায়। বয়সভিত্তিক সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মাতিয়ে যারা বাফুফের বেতনের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন থুইনুই মারমা।

বাকি পাঁচজন হলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মোসাম্মাৎ সাগরিকা, মুনকি আক্তার এবং অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ইয়ারজান বেগম, অপির্তা বিশ্বাস, সুরভী আকন্দ প্রীতি।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির মেয়ে থুইনুই মারমা। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়িয়ে উঁচিয়ে ধরেছেন সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। ভুটান ও ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জালে বল পাঠিয়েছিলেন এ কিশোরী।

ঈদের ছুটি কাটিয়ে মেয়েরা ক্যাম্পে ফেরার পর নতুন ৬ জনের সঙ্গে চুক্তি করবে বাফুফে। আর পুরনো যারা থাকবেন তাদের চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নবায়ন হয়ে যাবে। তবে শুধু ক্যাটাগরি পরিবর্তন হবে কারো কারো।

জানা গেছে, নতুন চুক্তিতে মোট ৩৫ জন ফুটবলার যুক্ত হচ্ছেন। খেলোয়াড় বাড়লেও টাকার পরিমাণ থাকবে আগের মতোই। তবে ক্যাটাগরি বাড়বে। আগে তিন ক্যাটাগরিতে ৩০ জন ফুটবলার বেতন পেয়েছেন। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ বেতন ছিল ৫০ হাজার এবং ‘সি’ ক্যাটাগরিতে সর্বনিম্ন বেতন ১৫ হাজার টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরির বেতন ৩০ হাজার টাকা।

নতুন চুক্তিতে ক্যাটাগরি বাড়তে পারে জানিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, ‘আগে মোট যে টাকা দেওয়া হয়েছিল, এবারের পরিমাণ সে রকমই থাকছে। ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতন পাবেন মেয়েরা। ১০ এবং ২০ বা ২২ হাজার টাকার আরো দুটি ক্যাটাগরিও থাকতে পারে।’

এ ক্যাটাগরি অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা করে বেতন পাচ্ছেন সাবিনা খাতুন, রুপনা চাকমা, মাসুরা পারভীন, শামসুন্নাহার, শিউলি আজিম, নিলুফার ইয়াসমিন, আনাই মোগিনি, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, শামসুন্নাহার জুনিয়র, ঋতুপর্ণা চাকমা, সানজিদা আক্তার, মার্জিয়া, কৃঞ্চারানী সরকার, তহুরা খাতুন।

বি ক্যাটাগরি অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন সোহাগি কিসকু, স্বপ্না রানী, আফঈদা খন্দকার, শাহেদা আক্তার, স্বর্না রানী মন্ডল, আকলিমা খাতুন, সুরমা জান্নাত, সাথী বিশ্বাস, সাতসুশিমা সুমাইয়া, হালিমা আক্তার, কোহাতি কিসকু, নাসরিন আক্তার, ইতি খাতুন এবং ১৫ হাজার টাকা করে মিস রুপা ও আইরিন খাতুন।

তবে সামনের চুক্তিতে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে কারো কারো ক্যাটাগরি পরিবর্তন হবে। কেউ নিচের ক্যাটাগরিতে চলে যাবেন, কেউ ওপরে উঠবেন। 

© all rights reserved - Janajatir Kantho