গসপেল ত্রিপুরা প্রচার করবে জীবন জয়ের সুসমাচার

পরাগ রিছিল

গসপেল ত্রিপুরার বাড়ি বান্দরবান রুমার হিপিহিল পাড়া। বাবা যোহন ত্রিপুরা, মায়ের নাম সাইনিমা। কেমন করে গসপেল চলে এলেন দূর গারোভূমে? আদিবাসীদের চেহারায় মিল থাকার কারণে চেহারা দেখে পার্থক্য করাও তো দায় কে ত্রিপুরা কে গারো । চলুন সেসব প্রশ্নের অনুসন্ধানেই নামা যাক।

গসপেল ত্রিপুরাদের বাড়ি থেকে বাজারের দূরত্ব প্রায় একদিনের পথ। তার কথায় বোঝা গেল সেখানে জীবনযাপনটা একটু কঠিনই। তার ভাষায়— ‘আমাদের দিকে তো পাহাড় টিলা এলাকা’। এরমধ্যে গসপেল ত্রিপুরা বুঝতেও শুরু করে, ‘আমরাতো গরীব, টাকা পয়সার অভাব’। সংখ্যায় ভাইবোনেরাও বেশি, চার ভাই, তিন বোন। রুমার বেরশেবা ত্রিপুরা হোস্টেলে দু’বছর থেকেছিল গসপেল। সেখানে বাৎসরিক খরচ ১৪,০০০ টাকা। পড়াশুনারত অন্যান্য ভাইবোনদের পেছনেও যদি খরচ হয় এই পরিমাণ টাকা, জুমচাষ করা গরীব বাবা-মা’র পক্ষে কিভাবেই বা সম্ভব তাদের সন্তানদের পড়াশুনার ব্যয়ভার বহন করা?

গসপেলের এক বড় বোন পড়াশুনার জন্য আগেই চলে এসেছিল গারোভূমে। পরবর্তীতে সেই নিয়ে আসে গসপেলকে। দুই ভাইবোন দুইটি মান্দি পরিবারে থেকে পড়াশুনাটা এগিয়ে নিচ্ছে। বিনিময়ে বড় বোন স্কুলের সময়ের বাইরে করে দিচ্ছে সেই পরিবারের বাড়ির কাজ। গসপেল যে পরিবারের সাথে থাকে, সেই পরিবারের রয়েছে ব্যস্ত একটা চা-মুদির দোকান। স্কুলের সময়ের বাইরে গসপেল কাজ করে সেই চা-মুদির দোকানে। গসপেলকে কি বলব আমি? আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের কষ্টের কথা? ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের কষ্টের কথা? মনে মনে ভাবি, পরক্ষণেই চিন্তা আসে, তার কাছে এইসব কথা বলা, বয়সী এক বড় ভাই হিসেবে আমারই ছেলে মানুষী হয়ে যাবে নাতো?

কারণ সে নিজে ছোট। কাজ করে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে কঠিন বাস্তবতার ভেতর। পড়ছে সবে ক্লাস এইটে। বড় বোন ক্লাস নাইনে, কারণ ইতোমধ্যে বাবার অসুস্থতা আর হোস্টেলে ঝামেলার জন্য পড়াশুনায় গ্যাপ হয়ে গেছে ২ বছর। পড়াশুনায় বরাবর ভাল গসপেল ত্রিপুরা। ক্লাস টু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সে ছিল ফার্স্টবয়। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে ভর্তি হয়েছিল রুমা বাজার আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে মা-বাবা নিজভূম ছেড়ে তাকে চলে আসতে হয় এই দূর গারোভূমে। সদা হাসিখুশি, ভদ্র-বিনয়ী গসপেলকে পছন্দ করে দোকানের সব কাস্টমার। গসপেল হাসিমুখে কাস্টমারদের কাউকে সম্বোধন করেন মামা, আচ্ছু, কাউকে দাদা।

গসপেল তার পড়াশুনার রেজাল্টে নিজে সন্তুষ্ট নয়। আত্মবিশ্বাস রয়েছে, তার রয়েছে আরো ভাল ফলাফল করার সক্ষমতা। একথা তাকে আশ্রয় দেয়া দোকানিও স্বীকার করলেন, ও পড়াশুনার জন্য যথেষ্ট সময় পায় না। একা তার পক্ষেও দোকান সামলানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বাড়িতে স্ত্রী আর তাদের ছোট এক সন্তান। রান্নাবান্না সামলিয়ে স্ত্রীও সাহায্য করেন দোকানে।

তারপরও দোকানিকে অনুরোধ করি, হাসিমুখের ছোট বালক গসপেলকে সময় সুযোগ মতো পড়াশুনার সময়টা যাতে বাড়িয়ে দেন। তিনি উত্তর দেন, সে চেষ্টাতে দোকানের কাজের জন্য লোক খুঁজছেন।

তাদের উভয়ের ভাল হোক! কারণ গসপেল ত্রিপুরার আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য দেখে বুঝে গেছি সে অদূর ভবিষ্যতে প্রচার করবে জীবন জয়ের সুসমাচার।

 লেখক: পরাগ রিছিল

কোন মন্তব্য নেই

© all rights reserved - Janajatir Kantho