জনজাতির কন্ঠ ডেস্ক: আদিবাসী মূল্যবোধে চুরি, শঠতা, পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা, ধূর্তামি কিংবা অন্যের হক কেড়ে খাওয়ার চর্চা যেমন নেই তেমনি হারানো জিনিস কুড়িয়ে পেলেও নিজের বলে চালিয়ে দেয়ার চল নেই এই সমাজে। প্রাপ্ত জিনিস ফেরৎ দিয়ে দেন। সেটি টাকা-পয়সা কিংবা যত মূল্যবান জিনিসই হোক। ফিরিয়ে দেবার এমন সহস্র উদাহরণ আছে। সম্প্রতি এমন আরেকটি উদাহরণ তৈরী হল।
বান্দরবানের থানচি এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন প্রিন্স লুড পিয়াস নামের এক ট্রাভেলার। সেখানে তাঁর মানিব্যাগটি পড়ে যায়। বান্দবান শহরে এসে তিনি মানিব্যাগ খোয়া যাবার বিষয়টি টের পান। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন এটি আর ফেরৎ পাবেন না। কিন্তু পাহাড়ি ছেলের সততা আন্তরিকার কারণে তিনি হারিয়ে ফেলা জিনিস ফিরে পেলেন।
হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার গল্পটি পিয়াস ট্রাভেলারস অব বাংলাদেশ নামের এক ফেইসবুক গ্রুপে শেয়ার করেন। তিনি জানান, ফেরার সময় থানচির রাস্তায় মানিব্যাগটি পড়ে যায়। আর আমি বিষয়টি টের পাই বান্দবানে এসে। ততক্ষণে আমি মানিব্যাগ পাওয়ার আশা ছেড়ে দিই। সেখানে আমার এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ড সহ দরকারি প্রচুর জিনিসপত্র ছিল। যে কারণে চিন্তায় ছিলাম কিভাবে কি করবো। এরমধ্যে রাত ১০টায় বাস।
পিয়াস জানান, ঠিক তখনি একটি নাম্বার থেকে ফোন আসে, আমার পরিচয় এবং আমার কিছু হারিয়েছে কিনা জানতে চায়। ডিটেইলসে সবকিছু বলার পর প্রান্তের মানুষটি মানিব্যাগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তিনি শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছেন বলে জানান।
পরের দিন চিরকুট লিখে পাহাড়ি ছেলে মানিব্যাগটি মালিকের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেই চিরকুটের ভাষা অত্যন্ত নির্মল, সহজ-সরল। পাসপোর্ট সাইজের ছবি ট্যাগ করা কয়েক লাইনের চিরকুটে ভিক্টর নামের সেই পাহাড়ি ছেলে নিজ হাতে লিখেছেন, ‘দাদা, আশা করি আর কোন জিনিস হারাবে না, দয়া করে। আর হে, আমার নাম ভিক্টর। আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমরা দুই ভাই। আমরা হাসি খুশিতে থাকি।’
এ ঘটনা ভাইরাল হলে পাহাড়ি ছেলে ভাসছে প্রশংসার জোয়ারে। তানভীর আলম নামের একজন লিখেছেন, ‘দিস ইস কলড অনেস্টি’।
জুয়েল হোসাইন নামের আরেকজন লিখেছেন, ভালো লেগেছে তাদের আন্তরিকতা দেখে। সত্যিই তাঁরা মানুষ হিসেবে মহৎ।
এমনই আরেকটি ঘটনার কথা শেয়ার করে শুভ দে লিখেছেন, ২০১১ সালে রুমা টু বগালেক মেইন রোড ধরে পায়ে হেঁটে গিয়েছিলাম। প্রায় সন্ধ্যায় রওনা দিয়ে যখন ১১টায় পৌঁছাই তখন একজন ট্যুরমেট টের পেল তাঁর মানিব্যাগ মাঝপথে কোথাও পড়ে গেছে। মানিব্যাগে বেশ বড় এমাউন্টের টাকা থাকা সত্ত্বেও ক্লান্তির কারণে আবার গিয়ে খোঁজার আগ্রহ হয়নি। পরদিন সকালে উঠে দেখলাম আদিবাসী গাইড ছেলেটা মাঝরাতে আবার প্রায় রুমা পর্যন্ত গিয়ে মানিব্যাগটা নিয়ে আসে। টাকা, ক্রেডিট কার্ড সব অক্ষত ছিল।