ভারতে রেডিও জকি হিসেবে নিজেকে মেলে ধরলেন শিখা মান্ডি নামের এক সাঁওতাল তরুণী। তিনি মাতৃভাষায় রেডিওতে সঞ্চালনা করেন। খুব সম্ভবত শিখা মান্ডিই সাঁওতালদের মধ্যে প্রথম নারী জকি।
শিখা মান্ডির বাড়ি ঝাড়গ্রাম থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাঁওতালি বেলপাহাড়ি গ্রামে। কৃষক পরিবারের মেয়ে শিখা। পড়াশোনা শেষ করে মেয়ে সরকারি চাকরি করবে এমনই ছিল শিখার পরিবারের ইচ্ছা। কিন্তু সেখানে বিপত্তি হয়ে দাঁড়ায় নানান সমস্যা। সেইসব সমস্যা জয় করে শিখা বাস্তবায়ন করেছে নিজের স্বপ্ন।
মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শিখাকে পরিবার পড়াশোনার জন্য কলকাতায় পাঠায়। কলকাতায় পড়তে এসে জাতিগত বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। শিখার ভাষ্যমতে, সেখানে সবাই বন্ধুত্ব করতে চায় না। গায়ের রংয়ের কারণে মিশতে চায় না।
তবুও তিনি দমে যাননি। প্রতিকূলতার মাঝেও পরিচয় বদলাননি। আপন পরিচয়েই পরিচিত হবার লড়াই করে যান। অবশেষে হাতের মুঠোয় ধরা দেয় সফলতা। এই সফলতা অর্জন করতে গিয়েও তাকে জাতি-সাংস্কৃতিক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। তাঁর স্বরে সাঁওতালি টান থাকায় অনেক রেডিওতে জকি হিসেবে কাজ করতে পাননি। শিখাকে বলা হয়, ‘আপনি বাংলা বা হিন্দিতে বলুন।’ কিন্তু শিখার বক্তব্য, ‘সবাই যদি বাংলা, হিন্দি, ইংলিশকে আপন করে নেয়, তাহলে যারা সাঁওতালি তাঁরা নিজেদের ভাষাটাই ভুলে যাবে একদিন। তাই নিজের ভাষাতেই রেডিওতে অনুষ্ঠান শুরু করেন শিখা।
বর্তমানে শিখা ‘জোহার, ঝাড়গ্রাম’ নামের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সাঁওতালি বাসায় জোহার শব্দের অর্থ নমস্কার। কমিউনিটি রেডিও ও রেডিও মিলানের দৌলতে এখন শিখার কয়েক হাজারের বেশি শ্রোতা। যাঁরা মুগ্ধ হয়ে শোনে শিখার সাঁওতালি ভাষায় কথোপকথন। আর শিখা, ভাষা, বর্ণ, সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে এক আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব নিজেকে মেলে ধরেছেন। যার রং হয়তো একটু গাঢ়, গলার স্বরে আদিবাসী টান, কিন্তু হৃদয়টা বেলপাহাড়িয়ার সবুজের মতই সতেজ এবং অনিন্দ্য সুন্দর।