
ফেসবুক মারফৎ আপলোডকৃত ছবিখানা পেলাম। বাংলা মুলুকের তাবেদার শাসক গোষ্ঠী তাঁদের পুরনো মাস্টার প্লান ‘মধুপুরে ইকোপার্ক, ইকো-ট্যুরিজম’ বাস্তবায়নে তলে তলে যে গভীর ষড়যন্ত্র এখনো সচল রেখেছে সেটির একটি বাহ্যিক বহিরূপ এই গেঞ্জি। গেঞ্জি মুখ্য বিষয় নয়, গেঞ্জির ব্যাকপিটে লেখা বিষয়ই গুরুত্বের। এই লেখা আমাদের বনবাসীর কপালে ভাঁজ ফেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ।
সরকারি অর্থ ব্যয় করে এই গেঞ্জি দিয়েছে টাঙ্গাইল বন বিভাগ। এর দ্বারা বন বিভাগ জনমত যাচাই, ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্প বাস্তবায়নের আগাম সংবাদ জানান দিয়ে দিল।
আমরা মধুপুর বনবাসী প্রকৃতি জীবন-জীবিকা, স্থানীয় ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি নাশের আশংকায় বরাবর ইকো-ট্যুরিজম, ইকোপার্ক প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছি। বিরোধ প্রতিবাদ প্রতিরোধের মানে আবার এই নয় যে, আমরা উন্নয়ন চাই না, আমরাও উন্নয়ন চাই, উন্নয়নের সারথী, উন্নয়নের মহাসড়কে না হলেও অন্তত সড়কে হাঁটতে চাই। কিন্তু এমন উন্নয়ন চাই না, যে উন্নয়ন আমার জমি জীবন, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা গ্রাস করে ফেলে।
আমরা এমন উন্নয়ন চাই যে উন্নয়ন আমাদের জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক, অর্থবহ। জীবনে জীবন মেলাবার যে উন্নয়ন আমাদের প্রান্তিক জীবনকে অর্থবহ করে তুলবে, স্বকীয়তা বজায় রাখতে সহায়ক হবে সেই ধারার উন্নয়ন আমরা চাই।
পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে, পুজিঁবাদী ধারার বিলাসী এইসব প্রকল্পে আদিবাসীরা হারিয়ে ফেলার দুঃখ, কষ্ট, হাহাকার, যন্ত্রনা ছাড়া কিছু পায়নি। পূর্বে এমন ‘উন্নয়ন প্রকল্পে’ জমি-সম্ভ্রম হারিয়ে কত আদিবাসী পরিবার সহায়হীন নিঃস্ব রিক্তে পরিনত হয়েছে তা এক কথায় বেশুমার। সমতলের গাজনী, মধুটিলা, গাজীপুরের সাফারি পার্ক, মাধবকুন্ড ইকোপার্ক কিংবা পাহাড়ের নীলাচল তৈরী করতে গিয়ে কত আদিবাসী জমি-ভিটে বসতহীন হয়েছে তা-রাষ্ট্র জানে না। জানার জন্য প্রস্তুতও হয় না কিংবা জানলেও জানায় না। আদিবাসীর দেশান্তরী, উদ্বাস্তু হওয়ার সংখ্যা জানা না থাকলে ফের প্রশ্ন তুলতে হয়, রাষ্ট্র কী পড়ালেখা জানে না? অশিক্ষিত? গুনতে পারে না? রাষ্ট্রের কাছে এইসব হিসাব কেন থাকবেনা প্রশ্ন গুলো ঘুরে ফিরে আসে। আদিবাসী মানুষ বাংলাদেশেরই নাগরিক, ভিন দেশের নয়।
যাক, পুরনো প্রসঙ্গের ফেরে নতুন প্রসঙ্গকে চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। সরকার মধুপুরে আবার ইকো-ট্যুরিজম বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর মনোভঙ্গি এমন ছলে কৌশলে যেভাবে পারে অল্প অল্প করে হলেও তাঁরা ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্প বাস্তবায়ন করেই ছাড়বে। এই প্রকল্প যদি বাস্তবায়ন হয় তবে আমাদের জনজীবনে কীরূপ ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে তা আমরা বনবাসী মানুষ হারে হারে আগাম বুঝতে পারি।
কাজেই শাসক মহল বন বিভাগের মাধ্যমে যে গেঞ্জি কায়দায় জানান দিয়ে দিল যে, তাঁরা ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, এখানে আমরা বনবাসী মানুষ কী সরকারকে গেঞ্জি কায়দায় পাল্টা জানান দিতে পারি না যে, ‘মধুপুরে আমরা ইকো-ট্যুরিজম চাই না’।