সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার
আদিবাসী অধ্যুষিত চারটি পাহাড়ি গ্রামে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সাধারণত সেখানকার আদিবাসী পরিবারগুলোকে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে পাহাড়ি ঝর্ণা কিংবা ছড়ার উপর নির্ভর
করতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি পর্যটকদের কারণে ঝর্ণার পানি ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছেন
না তারা। পানি সংকটের কথা বারবার বিভিন্ন দপ্তরে বলেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না বলে অভিযোগ
ভুক্তভোগীদের।
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর
ইউনিয়নের চাঁনপুর টিলায় গারো ও হাজং জনগোষ্ঠীর বসবাস। টিলার মধ্যবর্তী স্থানে প্রবাহিত
দৃষ্টিনন্দন রাজাই ঝর্ণাকে প্রকৃতির আশীর্বাদ হিসেবে দেখেন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর লোকজন।
এই ঝর্ণার পানি দিয়েই স্থানীয়রা খাবার পানিসহ গৃহস্থালি কাজ সম্পন্ন করেন।
জানা যায়, চাঁনপুর টিলার মতো
ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৪টি গ্রামে গারো, হাজং, খাসিয়া জনগোষ্ঠীর অন্তত তিন শতাধিক পরিবারের
পানির প্রধান উৎস পাহাড় থেকে আসা বিভিন্ন ঝর্ণা বা ছড়া। পাহাড়ি এলাকায় নলকূপ বসানোর
খরচ বেশি। সবার পক্ষে নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। তাই পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের নির্ভর
করতে হয় ঝর্ণা ও ছড়ার পানির ওপর।
সাম্প্রতিক সময়ে ঝর্ণাগুলো
পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পাওয়ায় ঝর্ণার পানি ব্যবহারে বিপত্তি দেখা দিয়েছে আদিবাসীদের।
এস্টন নামের খাসিয়া জনগোষ্ঠীর
একজন বলেন, ‘সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর সুপেয় পানির সমস্যা প্রধান। দিন দিন এই সমস্যা
প্রকট আকার ধারণ করছে। এই সমস্যার সমাধান কবে হবে আমরা জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটকদের অবাধ
বিচরণে পাহাড়ি আদিবাসী নারীদের গোসল থেকে শুরু করে ধোয়ামুছার কাজ করতে নানা বিড়ম্বনায়
পড়তে হচ্ছে। পর্যটকরা আমোদ-ফূর্তি করে ঝর্ণার পানি নোংরা করে ফেলায় তা ব্যবহারে উপযোগিতা
হারাচ্ছে। তাছাড়া পর্যটকদের ছবি ও ভিডিও ধারণের ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন আদিবাসী
নারীরা।’
সালমা সাংমা নামের গারো জনগোষ্ঠীর
একজন বলেন, ‘পর্যটকদের কারণে আমরা ঠিকমতো পানি ব্যবহার করতে পারছিনা। তারা সকাল ১০টা
থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঝর্ণা এলাকায় অবস্থান করে। আমরা নিষেধ করলেও তারা শুনতে চায়
না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঝর্ণার
পানি দিয়ে গোসল করি। কিন্তু পর্যটকরা আমাদের নানাভাবে বিরক্ত করে। তারা আমাদের ছবি
ও ভিডিও তুলে টিকটকে ছেড়ে দেয়। এদিকে বর্ষা কিংবা বৃষ্টির মৌসুমে প্রাকৃতিক উৎসের পানিতে
চাহিদা পূরণ হলেও বিপত্তি হয় শুকনো মৌসুমে।’
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক
সম্পাদক এন্ড্রো সলোমার বলেন, ‘আমরা আদিবাসীরা পানি সমস্যার কথা অনেকদিন ধরে বলে আসছি।
কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। আমরা চাই পর্যটকদের জন্য সঠিক গাইডলাইন আর আদিবাসীদের সুপেয়
পানির সুব্যবস্থা। আশা করি কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধান করবেন।’
এদিকে আদিবাসীদের সুপেয় পানির
সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক
ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আদিবাসীদের এই ইস্যুটি খুবই সংবেদনশীল। দ্রুতই এর সমাধান
করা হবে।’